দুর্নীতি-অনিয়মের ইতিহাস ভুলে নতুন শুরুর আশা
Published: 28th, January 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নিয়োগ শব্দটির সঙ্গে গত ১৫ বছর ‘বাণিজ্য’ শব্দটি যেন নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে এই ১৫ বছরে অসংখ্যবার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণ্যিজ্যের অভিযোগ, অডিও ফাঁস, ভাঙচুর, আন্দোলন, সংঘর্ষ, হট্টগোলসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ, গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও পাল্টায়নি কিছু। দলীয় প্রভাবের কারণে শাস্তির আওতায় আসত না অভিযুক্তরা। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের ইতিহাস ভুলে নতুনভাবে শুরু করতে চায় প্রশাসন। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার শুরু হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ। এর আগে হওয়া বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না কেউ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার দাবি, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে হোক শিক্ষক নিয়োগ।
গত ২০ জানুয়ারি পাঁচটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়। ২২ জানুয়ারি আরও ছয়টি বিভাগে দেওয়া হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। একটি সূত্র জানিয়েছে, বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পরপরই নিয়োগ নিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীর জন্য শুরু হয়েছে তোড়জোড়-লবিং।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সূচনা হয় মূলত ২০০৪ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সময়ে। এ সময় নিয়োগ বাণিজ্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই বছর পর আন্দোলনের মুখে উপাচার্য পদ ছাড়তে বাধ্য হন। নবম উপাচার্য অধ্যাপক ফয়েজ সিরাজুল হক তাঁর মেয়াদে কোনো নিয়োগই দেননি। এর পর ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চারজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রত্যেকেই দায়িত্বের শুরুতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিলেও নিয়োগসহ নানা বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তাদের পিছু ছাড়েনি। দশম উপাচার্য ড.
অভিযোগ আছে, গত ১৫ বছরে নিয়োগ পাওয়া মোট ১৮৪ জন শিক্ষকের সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সর্বশেষ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় তাদের সবার নাম পাওয়া গেছে।
সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে এর আগে যা ঘটেছে, সেগুলো কলঙ্কজনক অধ্যায়। এসবের যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের শপথ করেছেন। এবার প্রশাসনের নিজেদের প্রমাণের পালা।
ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, নিয়োগে দলীয় প্রভাব খাটানোর কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে
ভালো মনে করবে, সেভাবেই হবে। আমরা চাই, সততা, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক।
একই কথা বলেছেন ইবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট বলেন, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মে কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের অপসারণের দাবিতে ছাত্রসমাজ মাঠে থাকবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর ফোন নম্বরে বারবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ‘আমরা কোনো দলের নই। তাই দলীয়করণের প্রশ্নই আসে না। কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হবে। কেউ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়নি প্রমাণ করতে পারলে এই পদে থাকব না।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’