নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করতে মাঠে হামলা, বেড়া ভাঙচুর
Published: 28th, January 2025 GMT
জয়পুরহাটের আক্কেরপুরে নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করতে মাঠে হামলা ও মাঠের চারপাশে দেওয়া টিনের বেড়া ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা’ ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আগামীকাল বুধবার নারীদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এই খেলা বন্ধ করতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে এলাকার ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা’ জড়ো হয়ে এই ভাঙচুর করেন বলে জানায় স্থানীয়রা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ঘটনার লাইভ প্রচার করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, তিলকপুরের স্থানীয় টি স্টার ক্লাবের উদ্যোগে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠটি টিন দিয়ে ঘেরাও করে প্রায় দেড় মাস ধরে ফুটবল খেলা চলছিল। টি স্টার ক্লাবের সভাপতি উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান ইমন। নারীদের ফুটবল খেলার প্রতিটি ম্যাচে মাটিতে বসে ৩০ টাকা ও চেয়ার বসে ৭০ টাকা করে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।
ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, তিলকপুর রেলস্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে মুসল্লি ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সেখানে কয়েক জন মওলানা বক্তব্য দেন। তাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, কয়েক দিন থেকে জানতে পারছি এলাকার মেয়েরা খেলা নিয়ে ব্যস্ত। মুসলমান মেয়েদেরকে ঘরে রাখার জন্য আল্লাহতালা বলেছেন। তারা পর্দার মধ্যে থাকবেন। সেই মেয়েদের এনে লেলিয়ে দিয়ে যুবকদের পাপাচার কাজে অগ্রসর করছে। যারা সৎ কাজে আদেশ করবে দেবে অসৎ কাজে নিষেধ করবে তারাই সফল কাম। মেয়েদের লেলিয়ে দেওয়া কীভাবে মানতে পারি। যারা মেয়েদের লেলিয়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে চান, আমি তাদের সর্তক করতে চাই আপনারা সাবধান হন। আগামী দিনে মেয়েদের খেলা বন্ধ করুন। যদি আপনারা বন্ধ না করেন তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এরপর সেখান থেকে স্লোগান দিয়ে তারা তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিলকপুর বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা জানান, টি-স্টার ক্লাবের কর্মকর্তারা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ টিন দিয়ে ঘেরাও করে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন। দর্শকদের ৩০ ও ৭০ টাকার টিকিট কেটে ফুটবল খেলা দেখতে হয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাঠে টিনের বেড়া অপসারণ করতে এসে দর্শক ও আয়োজকদের রোষানলে পড়েছিলেন। এঘটনায় একজন গ্রাম পুলিশ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আগামীকাল বুধবার নারী দলের ফুটবল খেলার আয়োজনের কথা আয়োজকেরা প্রচার করেন। এতে মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর তিলকপুর রেলস্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হন। এরপর তারা সেখান থেকে গিয়ে খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।
তিলকপুর টি স্টার ক্লাবের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান ইমন বলেন, বুধবার বিকেলে জয়পুরহাট-রংপুর নারী ফুটবল দলের খেলা ছিল। আজ মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর মুসল্লিরা খেলার মাঠে হামলা চালিয়ে টিনের বেড়া ভেঙে দিয়েছে। এতে লক্ষাধিক টাকার টিন নষ্ট হয়েছে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান জানান, নারী টিমের ফুটবল খেলার আয়োজনের কথা তিনি জানেন না। খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভেঙে দেওয়ার ঘটনাও জানেন না। ইউএনও স্যার আজকে বিকেলে আমাকে জানিয়েছেন, আগামীকাল বুধবার খেলার আয়োজকদের ও বিরোধীতাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, আগামীকাল নারী দলের ফুটবল খেলার কথা আমাকে আয়োজকেরা জানায়নি। খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুরের বিষয়টি আমার জানা নেই। আয়োজক ও স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজের কথা জানতে পেরে আগামীকাল তাদের নিয়ে বসার কথা রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল র ফ টবল খ ল র ত লকপ র র কর ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
তৃতীয় দিনটা বৃষ্টি আর নাজমুলের
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মাঠেই ছিলেন আম্পায়াররা। আকাশ পরিষ্কার হয়ে আলোর সংকট কাটে কিনা সেটি দেখতে মিনিট দশেক অপেক্ষা করেছেন তাঁরা। এরপর ঘোষণা দিয়েছেন আজ আর খেলা সম্ভব নয়।
দেরিতে শুরু আর আগেভাগেই শেষ হওয়া সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনটা বাংলাদেশ শেষ করেছে ৪ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে। জিম্বাবুয়ের চেয়ে এখন ১১২ রানে এগিয়ে নাজমুল হোসেনের দল। দলের ভরসা হয়ে টিকে আছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। আগামীকাল চতুর্থ দিনটা ৬০ রানে শুরু করবেন নাজমুল। অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে তাঁর সঙ্গী জাকের আলী অপরাজিত ২১ রানে।
বৃষ্টির কারণে দিনের খেলা শুরু হয় দুপুর ১টা। এরপর খেলা হতে পারে ৪৪ ওভার। ১ উইকেট ৫৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ যোগ করতে পেরেছে ১৩৭ রান।
বৃষ্টিভেজা দিনে ইনিংসের শুরুতে নাজমুল বোলারদের ওপর চড়াও হলেও ধীরে ধীরে ফিরেছেন প্রথাগত টেস্টে মুডে। বিশেষ করে ২৬ রানের একবার জীবন পাওয়ার পর। জিম্বাবুয়ের দুই পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি ও ভিক্টর নিয়াউচি নাজমুলকে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার প্ররোচনা দিয়েছেন বারবারই।
উদাহরণ হিসেবে ইনিংসের ৩৫তম ওভারের কথা বলা যেতে পারে। নিয়াউচির করা সেই ওভারে ষষ্ঠ-সপ্তম স্টাম্পের পাঁচ–পাঁচটি বল ছেড়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পুরো ইনিংসে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলগুলোতে ছিলেন বাড়তি সতর্ক। ভুল যে করেননি তা নয়!
৩৮তম ওভারে মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়ায় দ্বিতীয় স্লিপের পাশ দিয়ে বল যায় বাউন্ডারিতে। তৃতীয় স্লিপ থাকলে অনায়াসে হতে পারত ক্যাচ। তবে দ্বিতীয় স্লিপে থাকা শন উইলিয়ামসের হাতে লেগে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। এরপর ব্যাট ছুড়ে নাজমুল যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তাতেই বোঝা গেছে নাজমুলের আজ ভুল করতে মানা! প্রথম ইনিংসে মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে মারতে গিয়ে ৪০ রানে আউটের পরই হয়তো এই উপলব্ধি তাঁর।
নাজমুল যা পেরেছেন সিলেটে আজ তা পারেননি মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। দুজনের বিষয়টি অবশ্য ভিন্ন। বাঁহাতি মুমিনুল সকাল থেকে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড টেনেছেন। তবে ব্যক্তিগত ৪৭ রানে মনযোগ হারান এই ব্যাটসম্যান। নিয়াউচির অফ স্টাম্পের বাইরে পাতা ফাঁদে ধরা পড়েন মুমিনুল।হক। ক্যাচ দেন নিয়াশা মায়াভোর গ্লাভসে।
অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল ঠিকঠাক খেলতে পারেননি মুমিনুল। ব্যাটে লেগে ক্যাচ যায় উইকেটরক্ষক মায়াভোর কাছে। ভাঙে ৯১ বল স্থায়ী ৬৫ রানের জুটি।
মুশফিক ফেরেন এর পরপরই। ব্লেসিং মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে বসেন মুশফিক। ৪ রান করা মুশফিকের সহজ ক্যাচ নেন আরভিন।
দিনের বাকি যে সময়টুকুতে খেলা হয়েছে, তাতে ভালোভাবেই সামলেছেন নাজমুল ও জাকের আলী। ১০৩ বলে ৭ চারে ৬০ রানে খেলছেন নাজমুল । ৩ চারে ৬০ বলে জাকের আলীর রান ২১।
সংক্ষিপ্ত স্কোরবাংলাদেশ: ১৯১ ও ৫৭ ওভারে ১৯৪/৪ (সাদমান ৪, মাহমুদুল ৩৩, মুমিনুল ৪৭, নাজমুল ৬০*, মুশফিক ৪, জাকের ২১*; মুজারাবানি ৩/৫১, নিয়াউচি ১/২৮)।জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৭৩।
(তৃতীয় দিন শেষে)