হবিগঞ্জে শতবর্ষী পুকুর ভরাটে নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টের
Published: 28th, January 2025 GMT
হবিগঞ্জ সদরের শতবর্ষী চন্দ্রনাথ ও টাউন মডেল স্কুলের পুকুর ভরাট করে পৌরসভার মার্কেট নির্মাণ কাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী এক মাসের মধ্যে এ আদেশ প্রতিপালন করে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের পরিচালককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
গত ২৩ জানুয়ারি ‘মাটি ভরাট করে শতবর্ষী পুকুর দখলে পাঁয়তারা’ শিরোনামে সমকালের পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে সম্প্রতি পুকুর ভরাট বন্ধে হাইকোর্টে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে রিট আবেদনটি করা হয়। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না। তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী তৌহিদুল আলম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
রুলে চন্দ্রনাথ ও টাউন মডেল স্কুলের পুকুরের অংশ ভরাট করে হবিগঞ্জ পৌরসভার অননুমোদিত মার্কেট নির্মাণ সংবিধান ও প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন বিধায়, তা কেন বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না– তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভরাট থেকে পুকুর দুটি রক্ষা এবং ভরাটকৃত অংশ পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না– তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুকুর ভরাট করায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে হবিগঞ্জ পৌরসভার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না– তাও রুলে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। ভূমি সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, পরিবেশ সচিব, শিক্ষা সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসকসহ ১৩ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজউক চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল
আদালতের আদেশ অনুসরণ না করে ‘মিলেনিয়াম সিটি’ প্রকল্পের মাটি ভরাট অব্যাহত রাখায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত অবমাননার অভিযোগে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন। অপর তিনজন হলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আদালত অবমাননার অভিযোগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী। তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না।
আদেশের বিষয়ে পরে আইনজীবী এস হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, মাটি ভরাটসহ মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব রাজউক চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকার জেলা প্রশাসকের। আদেশ অনুসারে তা প্রতিপালন না হওয়ায় চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটি করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত রাজউক চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন।
এর আগে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত টোটাইল মৌজায় বিদ্যমান টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ে মাটি ভরাটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জনস্বার্থে গত বছর একটি রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ে মাটি ভরাট কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেন। একই সঙ্গে টোটাইল খাল ভরাট করে গড়ে ওঠা মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেডের অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের সব কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
বেলা জানায়, হাইকোর্টের আদেশে টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ের বর্তমান অবস্থা তদন্ত, মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড কর্তৃক মাটি ভরাটের ফলে টোটাইল খালের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা নিরূপণ এবং হাউজিং কোম্পানি কর্তৃক টোটাইল মৌজায় অবস্থিত জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল ও নিচু কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন প্রতিরোধ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসককে আদালতের আদেশ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড আপিল বিভাগে আবেদন করে। বেলা জানায়, আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৯ এপ্রিল পক্ষগুলো মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মাটি ভরাটের সব কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। এর ফলে মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পে নতুন করে মাটি ভরাটসহ কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করার সুযোগ নেই। আদালতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা লঙ্ঘন করে সম্প্রতি মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড কর্তৃক অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পে মাটি ভরাটসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান রেখেছে এবং প্লট তৈরি করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে চটকদার বিজ্ঞাপন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টার আকারে প্রচার করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদনটি করে।
আরও পড়ুনখাল ভরাট ও মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা২২ জানুয়ারি ২০২৪