ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বাতিলের দাবিতে জুতা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির একটি পক্ষ।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে জেলা বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাতে জুতা নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে কবির আহমেদ ভূইয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিহত’সহ ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জেলার বিএনপির সম্মেলন করতে দেয়া হবে না’ বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৮ জানুয়ারি জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক পক্ষ সম্মেলন সকলের প্রস্তুতি নিলেও অপরপক্ষের অনঢ় বিরোধিতার জন্য দুটি তারিখই পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। 

গত ২২ জানুয়ারি সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আইনজীবী আ জ ম মোরশেদ আল মামুন স্বাক্ষরিত জেলা বিএনপির দলীয় প্যাডে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কমিটিসহ নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি পক্ষ এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি এবং সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনের নেতৃত্বে আরেকটি বড় অংশ রয়েছে। 

গত প্রায় দুই বছর ধরেই উভয়পক্ষ পৃথকভাবে দলীয় সব কর্মসূচি পালন করে আসছে। নেতা-কর্মীদের বিরোধ দূর না করেই গত বছরের ২ নভেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপির ফেসবুক পেজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা বিএনপির ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানায়, আগের পাঁচ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগের কমিটির ২ ও ৩ নম্বর সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও জহিরুল হক খোকন নতুন কমিটিতে ৩ ও ৪ নম্বর এবং কবির আহমেদ ভূইয়াকে ৩২ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে বিএনপির আরেকটি পক্ষ কবিরের অনুসারী। 

জুতা মিছিলের একাংশ

হাফিজুর ও জহিরুলের নেতৃত্বে শহরে সম্মেলন বিরোধী একাধিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জেলা শহরের পাওয়ার হাউজ রোড এলাকা থেকে জেলা বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাতে জুতা নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। 

মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে টেংকের পাড় এলাকায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঝাড়ু মিছিলে নেতাকর্মীরা ১ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সদস্য কবির আহমেদ ভূইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মইনুল হোসেন চপলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপিত গোলাম সরোয়ার খোকন, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মনির হোসেন ও জেলা যুবদলের সভাপতি শামিম মোল্লা।

জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, “আগামী ১ ফ্রেরুয়ারি অবৈধ সম্মেলন করার পাঁয়তার চলছে। যারা ১৬ বছর ত্যাগ স্বীকার করেছে। জেল-জুলুম, অন্যায়, অত্যাচার স্বীকার করছিলাম- আমাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ রেখেছে। যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শান্ত রাখতে চান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আন্দোলন যদি বন্ধ করতে চান, যদি সুষ্ঠ একটি বিএনপি দেখতে চান, যদি বিএনপিকে আগের জায়গায় দেখতে চান- তাহলে এই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করতে হবে। নতুন করে প্রত্যেকটা উপজেলা থেকে আবার নতুন করে কমিটি করে এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্মেলন হবে। এরপূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোন সম্মেলন হতে দেব না এবং সুষ্ঠভাবে সম্মেলনও হবে না।”

জেলা যুবদলের সভাপতি শামিল মোল্লা বলেন, “কবির আহমেদ ভূঁইয়া ও তার অনুসারীরা মিলে ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির মূল শক্তি ও মূল ধারাকে পাশ কাটিয়ে এই সম্মেলন দেয়া হয়েছে। আমরা এই সম্মেলন প্রতিরোধ করব। আমরা জেলার ত্যাগী নেতাকর্মীদের সম্মনয়ে সুষ্ঠু জেলা সম্মেলন চাই।”

জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি গোলাম সারুয়ার খোকন বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটিতে এই সম্মেলন করতে দেয়া হবে না। এই অপশক্তিকে রুখে দেয়া হবে।”

তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় জেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুল মান্নান ও সদস্য সচিব সিরাজুল ইসমামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা/রুবেল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব র হ মণব ড় য় ব র হ মণব ড ব এনপ র দ ন ত কর ম র সদস য সদস য র ও সদস য কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামীপন্থি আইনজীবীকে জামিন, বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

আওয়ামীপন্থি দুই আইনজীবীকে মামলা থেকে জামিন করানোর ঘটনায় মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতিকে আইন পেশা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে শহরের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত চত্বরে মানববন্ধন করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্ররা।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে বিএনপি নেতার গাড়িতে ২০২৩ সালে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর দৌলতপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন আলম মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়সহ ১২৯ জনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আজিজুল হক, ধামশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ইদ্রিস আলী, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন, কলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, জিয়নপুর আওয়ামী লীগের বেলায়েত হোসেন ও বাঘুটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আখিনুর রহমান। পরে আজিজুল হক, ইদ্রিস আলী ও ছানোয়ার হোসেনকে জামিন দেন বিচারক লিয়াকত আলী মোল্লা। অন্য তিন আসামিকে তিনি জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এ এফ এম নুরতাজ আলম বাহার জানান, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে তিনি বিরোধিতা করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মেজবাউল হক, নজরুল ইসলাম বাদশা ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আবুল কাশেমসহ কয়েকজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মেজবাউল হক বলেন, একজন আইনজীবী যে কোনো মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে পারেন। তিনি তাঁর দু’জন সহকর্মীর জন্য জামিন শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। কারণ মামলার ঘটনাটি ৫ আগস্টের অনেক আগের। যাদের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নিয়েছেন, তারা দু’জনই আইনজীবী এবং অসুস্থ। যারা তাঁর পদত্যাগ দাবি করছে, তারা বৈষম্যবিরোধী ব্যানার ব্যবহার করেছে। আগামীতে তিনি পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হওয়ার কারণে নিজ দলের অন্য প্রার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।  

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ এস জিন্নাহ কবীর জানান, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মেজবাউল হক দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য আদালতে জামিন শুনানি করেছেন। এতে তিনি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। এ কারণে (আজ) বৃহস্পতিবার তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি সদুত্তর দিতে না পারলে বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আওয়ামীপন্থি আইনজীবীকে জামিন, বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ