খুলনা বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকরা। ফলে খুলনা নগরীর খালিশপুর থানার কাশিপুর এলাকার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও ১৬ জেলায় পরিবহন এখনও বন্ধ রয়েছে। এতে খুলনার পেট্রোল পাম্পে দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের সংকট। 

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ের মেঘনা মডেল সার্ভিস সেন্টার নামে পেট্রোল পাম্পে গিয়ে তেলের জন্য যানবাহনের ভিড় দেখা যায়। 

পাম্পের কর্মচারী মো.

মিথুন জানান, দুপুর ২টায় ডিজেল শেষ হয়ে গেছে। আধাঘণ্টার মধ্যে পেট্রোল, অকটেনও শেষ হয়ে যাবে। একই এলাকার মেসার্স কেসিসি পেট্রোলিয়ামে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। 

পাম্পের কর্মচারী ধীমান জানান, সকালে অকটেন শেষ হয়ে যায়। সামান্য পরিমাণ ডিজেল ও পেট্রোল রয়েছে। মোটরসাইকেল চালক হাফিজুর রহমান বলেন, অকটেন নিতে এসেছিলাম; কিন্তু পাইনি।

নগরীর অন্যান্য পেট্রোল পাম্পে গিয়েও তেল সংকটের কথা জানা যায়। পাম্পগুলো বলছে, রাতেই এগুলো জ্বালানি তেলশূন্য হয়ে পড়তে পারে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকরা নতুন রাস্তার মোড়ে ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। খালিশপুরে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপোর সামনে গিয়ে কোনো ট্যাঙ্কলরি দেখা যায়নি। 

ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিজু জানান, মহানগর হাকিম আদালতে সোমবার আলী আজিমের জামিন নামঞ্জুর হয়। মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হলে সেখানে মামলার নথি না থাকায় শুনানি হয়নি।

খুলনা বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এনাম মুন্সী বলেন, বিএনপি অফিস ভাঙচুরের মামলায় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির বর্তমান চার নেতা, সাবেক দুই নেতা এবং তিন সাধারণ সদস্যের বিরুদ্ধে গত ২১ আগস্ট খালিশপুর থানায় মামলা হয়। অথচ আলী আজিম বিএনপি নেতা। আলী আজিমের মুক্তি এবং ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর দাশকে একাধিকবার কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি। 

এদিকে শ্রমিক নেতা আলী আজিমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও জামিনের দাবিতে বৃহত্তর ফরিদপুরের সব তেলের পাম্প বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুর পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বিকেল ৪টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আমাদের সভায় সিদ্ধান্তের পরই বৃহত্তর ফরিদপুরের সব পাম্প মালিকদের বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া খুলনা বিভাগের দায়িত্বরত নেতারা তেল পাম্প মালিকদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকরা আমাদের আলটিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন, আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ না করেন এবং বিপদে পাশে না থাকেন, তাহলে আর গাড়ি চালাবেন না। পরে জরুরি বৈঠকে একাত্মতা ঘোষণা করে পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক নেতার জামিন না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট য ঙ কলর

এছাড়াও পড়ুন:

সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট

আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।

পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।

এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা

এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও। 

রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।

প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”

অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”

অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”

গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”

কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”

স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ