বাসে বিএম কলেজছাত্রী লাঞ্ছিত, বাস শ্রমিক-শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর
Published: 28th, January 2025 GMT
বাস ভাড়া নিয়ে এক ছাত্রীকে হেনস্থার অভিযোগে বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনাল অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ৮ দফা দাবী জানিয়েছেন। তবে সড়ক অবরোধের আগে ছাত্রী হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে গেলে বাস শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
সড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কসহ বিভাগের অভ্যন্তরীণ ৬টি রুটে সড়ক যোগাযোগ অচল হয়ে পড়েছে। আটকা পড়েছে শত শত যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী পৌঁছেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রূপাতলী বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রক হলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। ৫ আগস্টের পর তিনি এ টার্মিনাল কেন্দ্রিক বাস মালিকদের সংগঠন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি হন।
শিক্ষার্থীদের দাবী, বিএম কলেজের এক ছাত্রী মঙ্গলবার ঝালকাঠি থেকে বাসে বরিশালে যাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থী হিসাবে তিনি হাফ ভাড়া দেন। এ নিয়ে সুপারভাইজারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়।
ছাত্রী অভিযোগ করেন, তাকে হেনস্থা করেছে বাস শ্রমিকরা। তিনি ঘটনাটি বিএম কলেজে সহপাঠীদের জানান। বিকেলে বিএম কলেজের একদল শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ জানাতে রূপাতলী বাস টার্মিনালে যান। তখন দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা হয়।
বাস শ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস ও কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেছে।
শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, সহপাঠী লাঞ্ছিত হওয়ায় প্রতিবাদ জানাতে তারা রূপাতলীতে যান। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। টার্মিনালের কারো সঙ্গে কথা বলেননি। উল্টো শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে তিন শিক্ষার্থী আহত হন।
বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, শিক্ষার্থীরা হামলা-ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন। তারা সেটা না করে মালিক সমিতিতে অভিযোগ দিলে সমিতি যথাযথ ব্যবস্থা নিত।
শিক্ষার্থীদের ৮ দফা গুলো হচ্ছে- ছাত্রীকে হেনস্থাকারী বাস শ্রমিকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনা, হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বরিশাল বিভাগের সকল রুটে আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর, আর কোনো বাসে শিক্ষার্থী হেনস্তা হলে সংশ্লিষ্ট বাসের রুট পারমিট বাতিল ও কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস মালিক সমিতিতে নির্বাচিত কমিটি গঠন, আধুনিক বাস সেবা ও ডিজিটাল ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন, প্রশিক্ষিত চালক নিয়োগ এবং বাস টার্মিনালে সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ করা।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখায় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল সড়ক অবর ধ সড়ক অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। ইজতেমা এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে র্যাব হেডকোয়ার্টার থেকে জানানো হয়, সার্বিকভাবে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে তুরাগ নদীর তীরে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসলমানসহ সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতি বছর ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য দেশি-বিদেশি মুসল্লির আগমন ঘটে।
এ বছর তিন ধাপে ৩ দিন করে ইজতেমা মোট ৯ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় ধাপে ৩-৫ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় ধাপে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন নিশ্চিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে র্যাব ফোর্সেস অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
র্যাব জানায়, সামগ্রিকভাবে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর, র্যাব-১ সহ ঢাকাস্থ ৫টি ব্যাটালিয়ন আগামী ৩০ জানুয়ারি হতে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে। ইজতেমা এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব সদর দপ্তর হতে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে।
ইজতেমা মাঠ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুইপিং টিম দ্বারা তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র্যাবের স্পেশাল টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমগ্র ইজতেমা ময়দান ঘিরে উঁচু ভবনসমূহে বাইনোকুলারসহ র্যাব সদস্য নিয়োগ এবং র্যাবের অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও, র্যাব কর্তৃক ইজতেমাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে সমগ্র ইজতেমা এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। নৌ-পথে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধকল্পে চলমান টহলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নৌ-টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে তিন ধাপে আয়োজিত ইজতেমা মধ্যবর্তী সময়ে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইজতেমা এলাকার আশপাশে উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকসেবন, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি ইত্যাদির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি খিত্তা এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক দৃষ্টি ও নজরদারি রাখা হয়েছে।
মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিং এলাকাসহ ইজতেমা এলাকায় অবৈধ টোল বা চাঁদা আদায় করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইজতেমামুখী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির জন্য চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী কালীগঞ্জ রোড, উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সম্মুখে এবং আশুলিয়া কামারপাড়া এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
ইজতেমা এলাকায় র্যাবের চিকিৎসাকেন্দ্র সার্বক্ষণিকভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। র্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিকভাবে আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিনে আগত ও ঘরমুখী মুসল্লিরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য র্যাবের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা চলমান থাকবে। বিশ্ব ইজতেমা কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী অপপ্রচার/গুজব রোধে র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি অব্যাহত রাখছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে কোনো ব্যক্তি/স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা/অপপ্রচার কঠোরহস্তে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।
এ ছাড়াও যে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে র্যাবের সহযোগিতা পেতে টহল ইনচার্জ অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত র্যাব ব্যাটালিয়নকে অবহিত করণসহ র্যাবকে (র্যাব কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরে মোবাইল: ০১৭৭৭৭২০০২৯) জানানোর জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ