পলিথিন বিরোধী অভিযানে আহত পরিচালকের বাসায় পরিবেশ উপদেষ্টা
Published: 28th, January 2025 GMT
রাজধানীর চকবাজার এলাকায় পলিথিন কারখানায় অভিযানের সময় হামলায় আহত পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শওকত আলীকে দেখতে তাঁর বাসায় গিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি পরিচালকের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। সব রকম সহায়তার আশ্বাস দেন।
এ সময় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.
উপদেষ্টা বলেন, পলিথিন বিরোধী অভিযানে পরিচালকের ওপর হামলা নিন্দনীয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভিডিও ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য অপরাধীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। দেশের প্রয়োজনে কাজ করতে গিয়ে বাধা আসবেই। আমাদের নতুন উদ্যমে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
গত রোববার সকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়জুন্নেছা আক্তারের নেতৃত্বে একটি দল চকবাজারে পলিথিনবিরোধী অভিযান চালায়। এই সময় চকবাজারের পশ্চিম ইসলামবাগে কবির হোসেন ও ইলিয়াছ সরদারের ভাড়া করা বাসা থেকে মোট ৪০ বস্তা নিষিদ্ধ পলিথিন উদ্ধার করা হয়। এসব পলিথিন একটি পিকআপে তুলে ফেরার পথে ১৫০-২০০ জন ব্যক্তি লাঠি, ইট, লোহার রড নিয়ে অভিযানকারী দলের পথ আটকান। পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের পরিচালক (উপসচিব) মো. শওকত আলীকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন তাঁরা। এমনকি পিকআপে থাকা জব্দ হওয়া পলিথিনের বস্তা ছিনিয়ে নিয়ে যান এবং পিকআপটি ভাঙচুর করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যায়নিষ্ঠ কর্মতৎপর মানুষ
এএমএম শওকত আলী ১৯৬৬ ব্যাচের সিএসপি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৯৪৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এম হুসাইন আলী জেলা ও দায়রা জজ এবং পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আইন সচিব ছিলেন। তাঁর পিঠাপিঠি বড়ো ভাই এম আকতার আলী ১৯৬৫ ব্যাচের অফিসার ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর ৩ মাস ২৮ দিন। এম আকতার আলী এবং ড. এএমএম শওকত আলী ডাকসাইটে সিএসপি অফিসার ছিলেন। আমি ১৯৮৩ সালের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করি। তখন থেকেই দুই সহোদর সিএসপির মেধা, দক্ষতা ও সাহসী মনোভাবের নানা গল্প শুনেছি। তারা দুই ভাই তখন যুগ্ম সচিব। এম আকতার আলীর সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি। ড. শওকত আলীর সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তিনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আমি অতিরিক্ত সচিব। ওই সময় তিনি আমার শ্রদ্ধাস্পদ ও প্রিয় মানুষে পরিণত হন।
ড. এএমএম শওকত আলী ছিলেন একজন অসাধারণ মেধাবী, দক্ষ, বাস্তববাদী, ন্যায়নিষ্ঠ, সময়নিষ্ঠ, সাহসী ও দৃঢ়চিত্ত।
আমি শওকত আলীর সঙ্গে এক বছর চাকরি করেছি। কখনও তাঁর সময়নিষ্ঠার ব্যত্যয় দেখিনি। তিনি ঠিক ৯টা বাজার ৫ মিনিট আগে অফিসে উপস্থিত হতেন এবং ৫টায় বেরিয়ে যেতেন। উপদেষ্টা হিসেবেও ঠিক ৯টা-৫টা অফিস করতেন।
উপদেষ্টা রাজনৈতিক পদ। তা সত্ত্বেও তাঁর কোনো ভিজিটর থাকত না। তিনি অফিস আওয়ারের পুরো সময় নিবিষ্ট মনে দাপ্তরিক কাজ করতেন। তাঁর টেবিলে কোনো ফাইল পৌঁছার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেরত আসত। তাঁর সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষিপ্রতা ছিল শিক্ষণীয়। তিনি অতি সহজে যে কোনো জটিল বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। সিদ্ধান্ত দিতে তিনি কখনোই ঢিলেমি করতেন না।
তিনি আইনানুগ ও ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত দিতেন। তাঁর মধ্যে কোনো আঞ্চলিকতাপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি ও প্রিয়তোষণ দেখিনি। তিনি যার যার ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার নীতি মেনে চলতেন। অন্যের ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য তিনি স্রোতের উল্টো দিকে হাঁটতেও দ্বিধান্বিত হতেন না।
ড. এএমএম শওকত আলী অনুজদের কর্মের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতেন না। কোনো তদবির করতেন না। তিনি অনুজদের মেধা ও দক্ষতার স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করতেন না। অনুজদের বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের এক মহিরুহ, আইকন, কিংবদন্তি ও সূর্য সন্তান। তাঁর কাছে অনেক শিখেছি। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং এমএ পাস করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পল্লি উন্নয়নে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পল্লি উন্নয়ন, জেলা প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেন।
কর্মজীবনেও তিনি ছিলেন সফল মানুষ। তিনি সিলেট এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের
চেয়ারম্যান ছিলেন। ডাক ও তার মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন।
ড. এএমএম শওকত আলীর পেশাদারিত্বের গুণাবলি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি আমার একজন প্রিয় মানুষ। দৈহিকভাবে এ পৃথিবীতে না থাকলেও তিনি আমার হৃদয়ে আছেন জাগরূক। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে পরকালে শান্তিতে রাখুন।
একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার: সাবেক সচিব;
লেখক ও গবেষক