মীর জুমলা সরকারি স্টাফ কোয়াটারের রাস্তার উপর কাঁচা বাজার, দুর্ভোগ চরমে
Published: 28th, January 2025 GMT
কাঁচা বাজার বসার জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকার পরও শহরের মীর জুমলা সরকারি স্টাফ কোয়াটারের রাস্তার উপর বসছে কাঁচা বাজার। এর ফলে সরকারি স্টাফ কোয়াটারের বসবসরত সরকারি কর্মচারীদের, বাজারে আসা-যাওয়া সকল ক্রেতাদের, স্কুল কলেজের আসা যাওয়া সকল ছাত্র ছাত্রীসহ সাধারন মানুষকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল বিক্রির পর পচা খারাপ সবজিগুলো রাস্তায় ফেলে রাখার ফলে চলাচলের রাস্তাটি ময়লা স্তুপে পরিণত হয়। পচা সবজি থেকে দুর্গন্ধ বেরিয়ে আশপাশের বসবাসরত মানুষের থাকা এবং রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। ময়লা রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় ছোট ছেলে-মেয়েরা ও বৃদ্ধ লোকেরা পা পিছলে পড়ে যায় এবং বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
পচা ময়লার দুর্গন্ধের কারনে স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে মীর জুমলা সরকারি স্টাফ কোয়াটারের বসবসরত সরকারি কর্মচারীগণ। কাঁচা বাজার বসার জন্য মার্কেটের ভিতর নির্ধারিত জায়গা রয়েছে। নির্ধারিত জায়গায় কাঁচা বাজার না বসিয়ে মানুষের চলাচলের রাস্তায় কাঁচা বাজার বসিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
এদিকে মীর জুমলা সরকারি স্টাফ কোয়াটারের রাস্তার উপর থেকে কাঁচা বাজার সরিয়ে নির্ধারিত মার্কেটের ভিতর কাঁচা বাজার বসার জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, গনপূর্তি বিভাগ নারায়নগঞ্জের নিকট মীর জুমলা সরকারি স্টাফ কোয়াটারের বসবসরত সরকারি কর্মচারীগণ আবেদন করলেও তা ফাইলবন্ধি অবস্থায় পড়ে আছে।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আমরা মীর জুমলা সরকারি স্টাফ কোয়াটারের বসবসরত সরকারি কর্মচারীগণ আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি, যাহার উপরে বসে কাঁচা বাজার কিন্তু ব্যবসায়িরা তাদের মালপত্র বিক্রয় করার পরে, পঁচা সবজিগুলো রাস্তার উপরে ফেলে রাখে যাহার ফলে রাস্তাটি ময়লা স্তুপে পরিণত হয়।
যার ফলে আমাদেরসহ বাজারে আসা, সকল ক্রেতা ও স্কুল কলেজের আসা যাওয়া সকল ছাত্র ছাত্রীদের চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। বৃষ্টি হলে উক্ত রাস্তা যাতায়াতের অনুপুযোগী হয়ে পড়ে। এটা পরিস্কার করা হলেও মাঝে মাঝে দুই একদিন বন্ধ থাকে কিংবা অর্ধেক রাস্তা পরিস্কার করা হয়।
উক্ত পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দুপুর ১২টার পরে পরিস্কার করার জন্য আসে। দেখা যায় পরিস্কার করার জন্য সারাদিন সময় লেগে যায়। যাহার ফলে সারাদিন উক্ত রাস্তা দিয়ে যাহারা চলাচল করে তাহাদেরকে সারাদিন ময়লার ভিতর দিয়ে যাতায়েত করতে হয়। ছোট ছেলে-মেয়েরা ও বৃদ্ধ লোকেরা পা পিছলে পড়ে যায় এবং বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
কাঁচা বাজারের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকাও স্বত্তেও তারা রাস্তার উপর কাঁচা বাজার বসিয়ে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করছে, যা আমাদের ও বাজারে আসা জনসাধরণের জন্য অসুবিধার সম্মুখিন হয়। এমতাস্থায়, নির্ধারিত কাঁচা বাজারের মার্কেট থাকলেও তারা রাস্তার উপর কাঁচাবাজার বসিয়ে আমাদের ও জনসাধারণের জন্য অসুবিধার সম্মুখিন করছে।
উক্ত কাঁচা বাজারটি নির্ধারিত স্থানে অর্থাৎ মার্কেটে বসানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসক মহোদয়ের দয়া দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতএব, মহোদয়ের নিকট আমাদের আকুল আবেদন উক্ত অসুবিধা থেকে যাহাতে আমরা রক্ষা পেতে পারি এবং কাঁচা বাজারের মার্কেটে অর্থাৎ নির্ধারিত স্থানে বসানোর জন্য তার প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনাবের নিকট সবিনয় নিবেদন জানাচ্ছি।
আবেদনের পরও সিটি কর্পোরেশন থেকে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। তাই সাধারন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে কঠোর হস্তক্ষেপ গ্রহনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মীর জুমলা সরকারি স্টাফ কোয়াটারের বসবসরত সরকারি কর্মচারীগণ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র স ত র উপর র জন য ব যবস ধরণ র
এছাড়াও পড়ুন:
তিন ফসলি জমি এখন জলাশয়
ঠিক এক বছর আগে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন সাতকানিয়ায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কাটায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে। একই সঙ্গে কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সেই জমি ভরাটের আদেশও দিয়েছিলেন আদালত। তবে ৯ মাসেও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এখন মাটিখেকো সিন্ডিকেট অস্ত্রের মহড়া দিয়ে দিবারাত খননযন্ত্র দিয়ে কৃষিজমির মাটি কাটছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের মনেয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা আবদুল মুনাফ সাতকানিয়ায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কাটার বিষয়ে ‘ইটভাটা মালিকদের জোরপূর্বক মাটি উত্তোলন, হুমকিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন ও গ্রামীণ অবকাঠামো’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৯ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে একটি ইটভাটার মাটিকাটার কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেন। আদেশের পরও সংশ্লিষ্ট কৃষিজমির টপসয়েল কাটা অব্যাহত থাকায় বিষয়টি গত বছরের ২২ এপ্রিল বিচারপতি মোস্তাফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর আদালতের নজরে আনেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী। শুনানি নিয়ে আদালত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাতকানিয়া থানার ওসিকে ২৩ এপ্রিল দুপুরে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত হতে তলব করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ। পরে কৃষিজমি নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না জানিয়ে টপসয়েল কেটে কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী করার ঘটনায় যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া কৃষিজমির উপরিভাগের কাটা মাটি (টপসয়েল) ৩০ দিনের মধ্যে বাইরে থেকে পলিমাটি এনে ভরাট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সাতকানিয়ায় ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন থেকে কত দূরে মাটি কাটা হচ্ছে এবং এতে করে রেললাইন হুমকির মুখে পড়ে কিনা তা-ও অনুসন্ধান করে রিপোর্টে উল্লেখ করতে হাইকোর্ট আদেশ দেন।
আদালতের নির্দেশের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত মাটিখেকো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ভরাট করা হয়নি খননকৃত কৃষিজমিও। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমির মালিক ও সাধারণ কৃষকদের হাইকোর্টের এসব নির্দেশনা প্রশাসন যথাযথভাবে অবহিত করেনি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী ১০ বার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস। এতে ১০টি খননযন্ত্র জব্দ করা হয়। অন্যদিকে, এসিল্যান্ড ফারিস্তা করিম সাড়ে ৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং এক ব্যক্তিকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার পরপর যারা মাটি কেটেছিল তাৎক্ষণিক তাদের দিয়ে অধিকাংশ জলাশয় ভরাট করে দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ বর্ষা চলে আসায় পুরো বিল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে; ফলে বড় জলাশয়গুলো ভরাট করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে মাটিকাটা বন্ধে দিনরাত অভিযান চলমান রয়েছে। মাটি খেকোদের কোনোমতেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কেঁওচিয়া, কালিয়াইশ, পশ্চিম ঢেমশা, এওচিয়া, ছদাহা, কাঞ্চনা, নলুয়া, মাদার্শা ও ধর্মপুর ইউনিয়নে নির্বিচারে টপসয়েল কাটা হচ্ছে। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহানী ও পাঠানিপুল এলাকা সংলগ্ন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশের তিন ফসলি জমি বিশালাকৃতির জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এসব কৃষিজমি থেকে ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে মাটি খনন করা হয়েছে। মাটিখেকোরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে ডাম্পার ট্রাকে কৃষিজমির মাটি পরিবহন করেন। এতে মহাসড়ক
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) এর প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো.মাহবুবুল করিম বলেন, ‘রেল লাইন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা হবে, রেললাইনের কতদূর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসকসহ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
স্থানীয়রা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় পদবীধারী এবং নামধারী অনেক নেতা কৃষিজমির টপসয়েল কাটার কাজে জড়িত ছিলেন। তাদের সাথে যুক্ত ছিল অন্য দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও। এখন প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এই অপকর্ম চলছে।
সরেজমিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মৌলভীর দোকান থেকে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের কেরানিহাট রেলক্রসিং এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একসময়ের তিন ফসলি কৃষিজমির মাঠ এখন বিরাট জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়াখাল, পাঠানিপুল ও আঁধার মানিক দরগাহর পশ্চিমে ঢেমশা এলাকায় সৃষ্ট জলাশয় থেকে পুনরায় মাটি কাটার জন্য পাম্প বসিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। এতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মিটারবিহীন পানির পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছৈ দোহাজারী বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে দোহাজারী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘জলাশয়গুলো থেকে মাছ ধরার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে, শুকিয়ে মাটি কাটার জন্য নয়।’ তবে, মোটা অংকের লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
ঢেমশা বারি সিকদার পাড়ার কৃষক আবু জাহের সিকদার বলেন, ‘২০১৪ সালে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে এক টাকাও না দিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার পাঁচ কানি জমির মাটি কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তখন অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হুমকির কারণে জায়গায় যেতে পারিনি। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরও আগের মতো একই কায়দায় চলছে ফসলি জমির মাটি কাটা। কোন জায়গায় বিচার পাচ্ছি না।’
কেঁওচিয়া ইউনিয়নের আবু সৈয়দ বলেন, ‘রেললাইন সংলগ্ন আমার মালিকানাধীন কৃষিজমির মাটি রাতের অন্ধকারে কেটে নিয়ে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। প্রথম দিকে মহাসড়কের দক্ষিণ পাশের জমির মাটি কেটে জলাশয়ে পরিণত করেছে। বর্তমানে উত্তর পাশের কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। একই অভিযোগ করেছেন কালিয়াইশ ইউনিয়নের রসুলাবাদ এলাকার মো. ওসমান।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মোস্তফা কামাল খান বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে মাটি কাটা বন্ধে অবস্থান নিয়েছি।’ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে মাটিকাটা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ কেউ করেননি, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ফসল উৎপাদনের জন্য টপসয়েল খুবই উপযোগী। মাটি কাটার কারণে প্রতিবছর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.ইকবাল সরোয়ার বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে মাটি সবচেয়ে মূল্যবান। টপসয়েলের ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চির মধ্যেই জৈব পদার্থ ও অনুজীবের ঘনত্ব সর্বাধিক এবং পৃথিবীর জৈবিক মাটির কার্যকলাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ অংশে ঘটে থাকে। জমির জৈব উপাদান হ্রাস পেলে তা ফিরিয়ে আনতে ১৮ থেকে ২০ বছর সময় লাগে।’
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখে থাকে। মাটি কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সচেতন।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম বলেন, ‘মাটি কাটা বন্ধে ইউএনও ও এসিল্যান্ড দিন-রাত অভিযান চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেককে শাস্তির আওতায়ও আনা হয়েছে।’ হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কাটা জমি ভরাট করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। ইউএনও’র সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন ‘আপনার কাছে হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়ে কাগজ থাকলে দেন, দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাতকানিয়ার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘মাটি কেটে কৃষি জমি ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় বন্ধে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃষিজমির মাটি কাটার সম্পূর্ণ বিরোধী। পরিবেশ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে চট্টগ্রামের একটি সভায় জলাবদ্ধতার একমাত্র কারণ হিসেবে আমি মাটি কাটাকে চিহ্নিত করেছিলাম। আমি ডিসি সাহেবকে বলেছি, অবৈধ ইটভাটা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। আমি এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করছি। প্রশাসন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমার কর্মী দিয়ে হলেও ক্ষতিকর মাটি কাটা বন্ধ করা হবে।’
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘কৃষিজমির টপসয়েল কেটে যারা জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জন্য আমি ডিসি ও ইউএনওকে বলে দেব। কোন অবস্থাতেই কৃষকের ক্ষতি করা যাবে না।’