রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে নিজ দলের একটি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে মাছপাড়া ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, পাংশা উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে সাবেক সাংসদ নাসিরুল হক সাবু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ পক্ষে বিভক্ত। দুই পক্ষের বিরোধ ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। মাছপাড়ায় হারুণ পক্ষের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জমির উদ্দিন। সাবু পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম টিপু। মাছপাড়া বাজারে অবস্থিত কার্যালয়ে জমির উদ্দিন পক্ষের নেতাকর্মীরা বসেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে ওই কার্যালয়টি প্রতিপক্ষ ভাঙচুর করে। 

মাছপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জমির উদ্দিন অভিযোগ করেন, মাছপাড়া ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বসতেন। সোমবার রাতে টিপু তাঁর লোকজন নিয়ে অফিসটি ভাঙচুর করেছেন। তারা অফিসে থাকা চেয়ার টেবিল আসবাব– সবকিছু ভেঙে ফেলেছে। শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানান তিনি।  

অভিযোগ প্রসঙ্গে মাছপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম টিপু বলেন, এটা বিএনপির কার্যালয় নয়। সেখান থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছিল। তিনি গত ৯ দিন ঢাকা ছিলেন। এই ৯ দিনের আট দিন ওই কার্যালয়ে বসা লোকজন সকাল-বিকেল মানুষকে ধরে মেরেছে আর চাঁদাবাজি করেছে। চাঁদার দাবিতে এ পর্যন্ত তারা চারটি দোকানে তালা মেরে রেখেছে। গত পাঁচ মাস ধরে এভাবে চাঁদাবাজি করছে।

টিপু দাবি করেন, গত সোমবার সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন চাঁদা না দেওয়ায় ওই কার্যালয়ে একজনকে পেটানো হচ্ছে। তখন সেখানে যান তিনি। চাঁদাবাজি করলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে– এ জন্য তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।  বিষয়টি দলীয় হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছিল কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে টিপু বলেন, সম্প্রতি জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব তাঁর ইউনিয়নে এসেছিলেন। তাঁকে সবকিছু জানানো হয়েছে। 

পাংশা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) রাসেদুল ইসলাম জানান, মাছপাড়ায় বিএনপির দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে– এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র ন ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট

আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।

পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।

এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা

এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও। 

রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।

প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”

অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”

অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”

গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”

কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”

স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ