ঝুট ব্যবসা নিয়ে সংঘর্ষ, বিএনপির ২ নেতা বহিষ্কার
Published: 28th, January 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ শাহজাহান ফকির এবং সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম মাস্টারের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের তথ্যটি জানানো হয়।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- গাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ও ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান মোল্লা এবং গাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আয়াত উল্লাহ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মজিবুর রহমান মোল্লা এবং আয়াত উল্লাহকে দল থেকে প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত ব্যক্তির অপকর্মের কোনো দায়দায়িত্ব দল নেবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃত ব্যক্তির সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার নয়নপুর বাজার রিদিশা কারখানার সামনে ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। এছাড়া পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
বহিষ্কৃত এ দুই নেতার নির্দেশে গাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও তার সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর দা, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আক্রমণের ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়ে দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এসময় এক পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে রিদিশা কারখানার সামনে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে বহিষ্কৃত ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আয়াত উল্লাহ বলেন, “আক্তার মাস্টার লোকজন পাঠিয়ে গণ্ডগোল সৃষ্টি করে। সে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তার হাতে ক্ষমতা আছে। তাই আমাদের বহিষ্কার করেছে। দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি পক্ষের লোকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম মাস্টার বলেন, “গাজীপুর ইউনিয়নের নয়নপুর বাজার রিদিশা কারখানার সামনে ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
ঢাকা/রফিক/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ড ব এনপ র স গ জ প র ইউন ঝ ট ব যবস স ঘর ষ উপজ ল র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী
অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।
কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?
ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।
এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।
আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!
এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।
বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।
সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী
[email protected]