তাঁত শ্রমিক রাজা মোল্লা ও আমেনা খাতুন দম্পতির তিন সন্তান। তাদের মধ্যে বড় ছেলে রাকিবুল ইসলাম এবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পরীক্ষার ফলাফলে মেধাতালিকায় ৪ হাজার ২৫৭তম হয়ে সুযোগ এসেছে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে পড়ার। কিন্তু সেখানে ভর্তি ও পড়াশোনার সার্বিক খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের নাড়িয়াগদাই গ্রামে রাকিবুলের বাড়ি। তার ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণি এবং বোন দশম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের মা-বাবা দু’জনেই তাঁত শ্রমিকের কাজ করেন। সেই কাজের আয় এবং ধারদেনা করে সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছেন তারা। রাকিবুল নিজেও তাঁতের কাজ করে মা-বাবাকে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ যুগিয়েছেন তিনি। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি থেকে শুরু করে সেখানে পড়ানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা তাঁর পরিবারের নেই। রাজা মোল্লার কোনো জায়গাজমি নেই। এমনকি বাড়ির ভিটেও নেই। তারা থাকেন নানাবাড়ি। 

রাকিবুল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। অভাব-অনটনের কারণে অনেক দিন স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে তাঁত শ্রমিকের কাজ করেছি। নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে পরিনি। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। ভর্তি ফি এবং পরবর্তীতে বইপত্র ও মেডিকেলের সরঞ্জাম কিনতে অনেক টাকা লাগবে। সেটা নিয়ে আমি ও আমার পরিবার চরম দুশ্চিন্তায় আছি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু। চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্ত এখন পর্যন্ত তার ভর্তির টাকা যোগাড় হয়নি। যত কষ্টই হোক, আমার একটাই স্বপ্ন, ডাক্তার হয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করা। আমি যেন ভবিষ্যতে ভালো চিকিৎসক ও ভালো মানুষ হয়ে জনগণের সেবা করতে পারি, সেজন্য সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’

রাকিবুলের মা আমেনা খাতুন বলেন, ‘আয়ের সব টাকা সন্তানদের পেছনে খরচ করেছি। ছেলে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন ছেলের ভর্তির টাকা ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

রাকিবুলের বাবা রাজা মোল্লা বলেন, ‘ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই প্রচুর পড়ালেখা করতো। রাকিবুলের পড়ালেখার পেছনে তার মায়ের অবদান বেশি। এ ছাড়া স্কুল থেকে শিক্ষকরা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। আমার স্বপ্ন ছিল ছেলেটাকে ডাক্তারি পড়ানোর। কিন্ত ছেলের মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে খুব টেনশনে আছি। ছেলেটাকে ডাক্তারি পড়াতে পারলে আমাদের সব কষ্ট সার্থক হতো। জানি না সে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। মেডিকেলে না কি ভর্তি ও পড়ার খরচ অনেক। এত খরচ কীভাবে জোটাবো?’

রাকিবুলের প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম ও সোবাহান বিশ্বাস বলেন, আমরা দেখেছি ছোটবেলা থেকেই তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেশি। রাকিবুলের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তাঁকে পড়ালেখা করাচ্ছে। আজ তাদের কষ্ট সার্থক। এখন সে আমাদের এলাকার গর্ব।’ 

নাড়িয়াগদাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘রাকিবুল আমার বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। প্রকৃত মেধাবীদের দারিদ্রতা কখনও সফলতা থেকে বিচ্যুত করতে পারে না– সেটা রাকিবুল প্রমাণ করেছে। আমার বিদ্যালয়ে থাকাকালীন যতটা পেরেছি তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এখনও সহযোগিতা করবো। তার স্বপ্ন পূরণে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন সহয গ ত

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ

বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।

সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।

জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।

জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।

এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।

আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।

বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ