পরীমণির সঙ্গে আমার পরিবারিক সম্পর্ক: শেখ সাদী
Published: 28th, January 2025 GMT
ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এক দিনের মাথায় জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। সোমবার আত্মসমর্পণ করলে তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। গত কয়েকদিন ধরে পরীমণির পাশে নতুন করে দেখা যাচ্ছে তরুণ গায়ক শেখ সাদীকে। সোমবার আদালতে শুরু থেকে পরীমণির সঙ্গেও ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় পরীমণির জামিননামায় তিনি স্বাক্ষর করেন। এরপর থেকে গুঞ্জন, পরীমণির সঙ্গে প্রেম করছেন এই গায়ক।
শেখ সাদী সমকালকে বলেন, ‘একই অঙ্গনে দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে পরীমণির সঙ্গে বেশ আগেই পরিচয়। বলা চলে পেশাগত বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। নিয়মিত কথাবার্তাও হয়। এটা নিয়ে কিছু বলার তো কিছু দেখি না।’
পরীমণির সঙ্গে আদালতে যাওয়া ও তার জামিনদার হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিজের দায়িত্ববোধোর জায়গা থেকে আদালতে গেছি। পরীমণি আমার সহকর্মী। তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর শুনে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। তখন পরীমণির সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। জামিন হওয়ার পর তার আইনজীবী একজন জামিনদার হন। আমিও আরেকজন জামিনদার হয়েছি।’
দুই দিন হল পরীমণির প্রেমিক হিসেবে শেখ সাদীকে জাড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা কথা ছড়াচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ বিরক্ত শেখ সাদী। নায়িকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরীমণির সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক হতেই পারে না। পারিবারিকভাবে আমাদের বোঝাপড়া ভালো। আমাদের পরিবারের সদস্যরা তার বাসায় যায়। তিনিও আমাদের বাসায় আসেন। পারিবারিক সম্পর্কের বাইরে তার সঙ্গে প্রেমের কোন সম্পর্ক নেই। লোকে না জেনে না বুঝে আমাদের নিয়ে রিউমার ছড়াচ্ছে।’
গেল মাসে ডিজে রাহাতের সঙ্গে একটি পুরতন গানের রিমেক করেছেন শেখ সাদী। সেটি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। নতুন গান নিয়ে তিনি বলেন, “২৯ জানুয়ারি ‘কুফা’ শিরোনামে আমার নতুন একটি গান মুক্তি পাবে। ফাঙ্কি-পপ মিক্স ধরনের গান এটি। অনেক যত্ন নিয়ে গানটি করেছি। এছাড়া ঈদের জন্য বড় পরিসরে গান আসার কথা আছে। সেটা নিয়েই অলরেডি কাজ শুরু করেছি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো
সুন্দরবনে দস্যুতায় টাকা ছিল। কিন্তু সে অবৈধ টাকা নিজেরা উপভোগ করতে পারতেন না। বনের মধ্যে সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়িয়ে বেড়াত, এক ঘণ্টা শান্তির ঘুমও হতো না। মোটেও সুখ ছিল না। দস্যুতার জগতে গিয়ে নিজের প্রাপ্তি বলতে নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ডাকাত শব্দটি। স্ত্রী-সন্তানদেরও চলতে হতো মাথা নিচু করে। কথাগুলো একসময়ের বনদস্যু আল-আমীনের।
আল-আমীন বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি ভালোই আছেন। আর কখনো ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে চান না তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা খোড়লকাঠি বাজারসংলগ্ন কয়রা নদীর তীরে। ছোট বাজারটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করেছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী।
নদীর ওপারের সুন্দরবনের ত্রাস ছিলেন আল-আমীন। তিনি বলেন, তখন শরীফ বাহিনী ছিল বড় দস্যুদল। সেই দলে যোগ দিয়ে ডাকাত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নাম ছড়িয়ে গেলে বাড়ি ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা সুন্দরবনের মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। র্যাব আর কোস্টগার্ডের অভিযানের ভয়ে বনের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটত তাঁদের।
আল-আমীনের বলতে থাকেন, ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল তাঁর গণ্ডি। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠত। অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হতে চাইতেন, তবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুযোগ আসে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। দস্যুনেতা শরীফ না চাইলেও তাঁকে কৌশলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁরা দলের ১৭ জন সদস্য ১৭টি অস্ত্র আর ২ হাজার ৫০০ গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
দস্যুজীবন যাঁরা একবার দেখেছেন, তাঁরা না খেয়ে থাকলেও আর দস্যুতায় ফিরতে চান না—এমনটাই দাবি আল-আমীনের। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গল্প গল্পে তিনি বলেন, ডাঙায় থাকা মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের বাজার, বন্দুক, গুলি সবই সাপ্লাই দিতেন। সব জিনিসের দাম নিতেন তিন থেকে চার গুণ বেশি।
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সব শেষ দস্যুদল হিসেবে আত্মসমর্পণ করে শরীফ বাহিনী। সেদিনই প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে দস্যুনেতা শরীফ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন বলে তাঁর একসময়ের সাথীদের ভাষ্য।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি বলেন, দলনেতা শরীফের পুরো নাম করিম শরীফ। কয়রার আল-আমীন ছিল বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। শরীফ প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেন। অন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে শরীফ এখন পুনরায় সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম আবদুল মালেক বলেন, বনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এভাবে দস্যুতা চলতে থাকলে বনজীবীদের জীবিকা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায় ও পর্যটন হুমকির মুখে পড়বে; বিপন্ন হবে বন্য প্রাণী আর প্রাণবৈচিত্র্য। দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।