টঙ্গী ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষ: আহত একজনের ৪০ দিন পর মৃত্যু
Published: 28th, January 2025 GMT
গাজীপুরে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাওলানা জোবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে গত ১৮ ডিসেম্বরের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৪০ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তিনি। তার নাম মিজানুর রহমান (৪১)। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হওয়ার পর থেকে মিজানুর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায়। বাবার নাম ছবির উদ্দিন।
টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর ভোরে জোবায়ের ও সাদ অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তখন ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হন অনেকে। মিজানুরকে নিয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হলো।
আরো পড়ুন:
মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
মৌলভীবাজারে ‘ভারতীয়দের কোপে’ বাংলাদেশির মৃত্যু
মিজানুরের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ আলী। এই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার ইজতেমার মাঠে দুইপক্ষের সংঘর্ষে মিজানুর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ভোরে তার মৃত্যু হয়।
মিজানুরের ভগ্নিপতি মোসাদ্দেকুল হক বলেন, “মিজানুর পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।”
এদিকে মিজানুরের মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন সাদপন্থীরা। বিবৃতিতে বলা হয়, মিজানুর সাদপন্থী ছিলেন।
বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের দাওয়াতি কার্যক্রম নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে দুটি পক্ষ তৈরি হয়। একটির নেতৃত্বে আছেন ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিনের মাওলানা সাদ কান্ধলভী ও তার সমর্থকেরা। অন্যটি সাদের বিরোধীপক্ষ।এর নেতৃত্বে রয়েছেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে।”
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ ব ইজত ম ম ড ক ল কল জ স ঘর ষ ইজত ম
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবারও উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
উপাচার্যের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। গত ২৩ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার পর গত ৭ মাসে একাধিকবার তাঁর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। ড. মুহসিনকে পুনর্বহাল ও উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোমবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
ড. মুহসিন জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং উপাচার্যের আস্থাভাজন শিক্ষকরা আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন– তাঁর একটি ভার্চুয়াল সভার অডিও গত শনিবার ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে ওই সভাটি করেছিলেন। অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ড. মুহসিনকে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও পরে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দাবিগুলো হলো– অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা-অপমানজনক অপবাদ প্রত্যাহার, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদে পুনর্বহাল; অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ; ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের লাভজনক কমিটি থেকে অপসারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিন খান জানান, একজন নিরপরাধ শিক্ষককে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষর্থীরা ক্ষুব্ধ। সোমবার তারা উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা জেনেছেন, গতকাল তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন না। চার দফা দাবি না মানলে বড় আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ড. শুচিতা যোগদানের পরই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন, তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর অনুসারী। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের ৩৫০ বিশিষ্টজন গত বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন। উপাচার্যও সেই বিবৃতিদাতাদের একজন। এ ছাড়া কলিমুল্লাহকে ববির একাডেমিক কাউন্সিলর, পরীক্ষা কমিটি ও পূর্বের চাকরি গণনা কমিটির সদস্য করা হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রত্যাহার করেন তিনি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানীর অভিযোগ, তিনি সব একাডেমিক কাজের প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান করবেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁকে বাদ দিয়েই নথিভিত্তিক ও সভাভিত্তিক একাডেমিক সিদ্ধান্ত নেন। কোষাধ্যক্ষ ড. মামুন অর রশিদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত চেক কোষাধ্যক্ষ এবং তদূর্ধ্ব চেক উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ যৌথ স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু উপাচার্য সব চেকে একাই স্বাক্ষর করেন। এসব অভিযোগ এর আগে শিক্ষার্থীরা দুইবার উপচার্যের পদত্যাগে এক দফার আন্দোলনে নেমেছিলেন। গত ২৮ নভেম্বর তাঁর কক্ষে তালাও লাগিয়েছিলেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে সোমবার রাতে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাকিব হোসেন জানান, উপাচার্য সারাদিন একাধিক বৈঠক করেছেন। এখন তিনি বিশ্রামে রয়েছেন।