আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সাংবাদিকদের মর্যাদাও নিশ্চিত হবে না: কামাল আহমেদ
Published: 28th, January 2025 GMT
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সাংবাদিকেদের মর্যাদাও নিশ্চিত হবে না। এই কমিশনের কাজ হলো স্বাধীন বস্তুনিষ্ঠ ও শক্তিশালী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সংস্কার সুপারিশ করা। সে কারণে আমরা বলতে পারি, স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজন আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যাতে তারা স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে পারেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিভাগের চার জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় কমিশনের সদস্য মোস্তফা সবুজ ও আক্তার হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ আরও বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন পেশ করবে। প্রতিবেদন পেশ করার পর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের ওপর সাংবাদিকদেরই চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সাংবাদিকরা চাপ সৃষ্টি না করলে এই সংস্কার একটাও বাস্তবায়ন হবে না।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের ইউনিয়ন বিভক্ত হয়ে গেছে। অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হলে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে একক ইউনিয়নের জন্য চাপ দিতে হবে। সংস্কার সম্পর্কে গণমাধ্যমের বাস্তবতা সম্পর্কে আমরা এর আগেও সাতটি জায়গায় শুনেছি। সবগুলো জায়গায় একই কথা বলা হয়েছে। ওয়েজবোর্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সংস্কার কমিশনের আওতাভুক্ত নয়।
আপনাদের মতামতের পাশাপাশি গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় অংশীদার পাঠক, দর্শক-শ্রোতা। তাদের মতামতও বিবেচনায় নেবো। এ কারণে আমরা জাতীয় ভিত্তিতে একটি গণমাধ্যম সমীক্ষা ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে করেছি। চলতি বছরের ১ থেকে ৭ জানুয়ারি সারা দেশে প্রায় ৪৫ হাজার হাউজ হোল্ডে আমাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের মতামত নিয়ে এসেছে। তার ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি গণমাধ্যম সম্পর্কে তাদের কী প্রত্যাশা রয়েছে। এগুলো সবকিছুই বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কাজ এগোবে, আমরা আমাদের সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরবো।
মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহ জেলার কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশ নিয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শোলাকিয়ায় ১৯৮তম ঈদের জামাত, ৫ লক্ষাধিক মুসুল্লীর নামাজ আদায়
এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায়। পাঁচ লক্ষাধিক মুসুল্লীর অংশগ্রহণে ১৯৮তম ঈদের জামাতে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ছিল পরিপূর্ণ।
কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে মাঠের ভেতরের কাতার উপচে বাইরেও কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ঈদগাহ ময়দান। নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।
সোমবার (৩১ মার্চ) ভোরের আলো ফোটার আগেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। চার স্তরের অধিক নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। সকাল ৯টার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে জামাতে ছাতা, লাঠিসোটা, দিয়াশলাই কিংবা লাইটার নিয়ে মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বড় জামাতে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়-এমন বিশ্বাস থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে।
এদিন সকাল ১০টায় ঈদ-উল-ফিতরের জামাত শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে ইমামতি থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে। এবার নতুন করে আবার পুনর্বহাল করায় তিনিও অন্যন্ত আনন্দিত।
মুসল্লিদের ঢল শুরু হয় ভোর থেকেই। ঈদগাহমুখী সব রাস্তাঘাটে কয়েক ঘণ্টার জন্য যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জামাত শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। অনেকে আবার মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও আশপাশের বাসাবাড়ির ছাদে উঠে জামাতে শরিক হয়েছেন।
অন্যদিকে নারীদের জন্য শহরের সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। সেখানেও বহু নারী ঈদ জামাতে অংশ নেন।
নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী।
কুমিল্লা থেকে এবারই প্রথম এ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন কবির উদ্দিন ভূইয়া (৫৩)। তিনি গত রাতেই এসেছেন, উঠেছেন একটি আবাসিক হোটেলে।
তিনি বলেন, “বহু বছর ধরে এ মাঠের সুখ্যাতি শুনে আসছি। এবার আল্লাহ দরবারে নিয়ত করেছিলাম, তিনি আমার আশাপূর্ণ করেছেন। খুব ভালো লাগলো এখানে এসে। লাখ লাখ মুসুল্লীর সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।”
মাঠের সুনাম ও নানা জনশ্রুতির কারণে ঈদের কয়েক দিন আগেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম ঘটে। এদের অনেকেই উঠেছিলেন হোটেলে, কেউবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ও শোলাকিয়া ঈদগাহ মিম্বরে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রহমত ব্যাপারী (৬৫)। ভোরে পরিবারের পাঁচজনকে সাথে ট্রেনযোগে পৌছান শোলাকিয়া মাঠে। প্রতিবছরই তারা এ মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নেন। তিনি বলেন, “রোদ-বৃষ্টি বুঝি না। শুধু জানি যতদিন বেঁচে আছি-এখানে আসতেই হবে। এখানে এলে অন্যরকম এক শান্তি খুঁজে পাই। বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে আল্লাহতালা মনের আশাও পূরণ করেন।”
দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি ট্রেন চালু ছিল। ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে এ দুটি বিশেষ ট্রেন সকালে জামাতের আগে কিশোরগঞ্জে পৌঁছায়। এছাড়া মুসল্লিদের ওজু ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, মেডিক্যাল টিম, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা ছিল শোলাকিয়া মাঠে।
কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী (বিপিএম) জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার কথা মাথায় রেখে মাঠে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জামাতের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি ছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার।
নিরাপত্তার কাজে প্রথমবারের মতো এবার যুক্ত ছিল সেনাবাহিনীও। মাঠে ছিল ড্রোন ও মাইনো কোলারসহ ভিডিও ক্যামেরা। মাঠ ও শহরসহ প্রবেশ পথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এছাড়া মাঠে ছিল ছয়টি ওয়াচ। সেখান থেকে দূরবীন নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
নামাজ শুরু করার সঙ্কেত হিসেবে রেওয়াজ অনুযায়ী শোলাকিয়ার ঈদ জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে শটগানে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিটি আগে একটি গুলির আওয়াজ করা হয়।
জনশ্রুতি রয়েছে, শোলাকিয়ার সাহেববাড়ির সুফি সৈয়দ আহম্মদ ১৮২৮ সালে তার নিজ জমিতে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ঈদের প্রথম জামাতে তখন সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া এবং সেখান থেকে শোলাকিয়া শব্দটি প্রচলিত হয়েছে।
ঢাকা/রুমন/এস