দুবলার চরে হামলা বনদস্যুদের, ১৫ জেলে অপহরণ
Published: 28th, January 2025 GMT
বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের দুবলার চরে হামলা চালিয়ে ১৫ জেলেকে অপহরণ করেছে বনদস্যুরা। রোববার রাতে সমুদ্রে মাছ ধরার সময় দস্যু দল তাদের অপহরণ করে। এ ঘটনায় দয়াল বাহিনীর তিন সদস্যকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। তবে অপহৃত ১৫ জেলেকে এখনও উদ্ধার করতে পারেননি তারা।
দস্যুদের জিম্মিদশা থেকে এসব জেলেকে উদ্ধারে এবং সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছে দুবলার চরের ১১ হাজার জেলে। ই-মেইলযোগে আজ মঙ্গলবার এ আবেদন পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ।
জেলেদের আবেদনে বলা হয়েছে, রোববার রাতে সমুদ্রে মাছ ধরার সময় একদল দস্যু জেলেদের ওপর হামলা চালায়। পরে মুক্তিপণের দাবিতে ১৫ জেলেকে অপহরণ করে তারা। এ সময় অন্য জেলেরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে তিন দস্যুকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করে কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেয়। তবে ১৫ জেলেকে নিয়ে বাকি দস্যুরা পালিয়ে যায়।
ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে পাঠানো আবেদনে বলেন, তাদের ১৫ জেলে মাছ ধরার একটি ট্রলারসহ দস্যুদের কাছে জিম্মি অবস্থায় আছেন। দ্রুত তারা যেন মুক্তি পান এবং সুন্দরবন ও সমুদ্র উপকূল জলদস্যু মুক্ত হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন ফিশারম্যান গ্রুপের এ নেতা।
অপহৃত জেলেরা হলেন- সাতক্ষীরার শাহ আলম, আজাহারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আরাফাত হোসেন, আলমগীর হোসেন, শাজাহান গাজী, মো.
কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. সিয়াম-উল-হক বলেন, দুবলার চরে হামলার সময় আত্মরক্ষায় অন্য জেলেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তারা কোস্টগার্ডের সহায়তা চেয়ে ফোন করেন। পরে কোস্টগার্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে এক নলা বিদেশি বন্দুক ও ৩৬ রাউন্ড গুলিসহ তিন দস্যুকে আটক করে।
আটক দস্যুরা হলো– দয়াল বাহিনীর মো. রহমত মোড়ল (২৬), মো. রবিউল মোল্লা (২৬) ও মো. জাহাঙ্গীর শেখ (৫১)। পরে তাদেরকে শরণখোলা থানায় সোপর্দ করা হলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান বলেন, দস্যুদের হাতে ১৫ জেলে জিম্মি আছে বলে শুনেছেন। তাদের উদ্ধার এবং দস্যুদের ধরতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উদ্ধার অভিযানে ‘ইউপিডিএফের আস্তানার’ সন্ধান
খাগড়াছড়িতে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ ছয় দিনেও মেলেনি। তাদের উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ সোমবারের অভিযানে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) গোপন আস্তানা পাওয়ার দাবি করেছে যৌথবাহিনী।
জানা গেছে, আজ ভোর পাঁচটার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পূর্ণচন্দ্র কারবারি পাড়ায় যৌথবাহিনী অভিযান চলায়। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা টিনশেডের তালাবন্ধ একটি ঘর দেখতে পান। এরপর স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে তালা ভেঙে ঘরটিতে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় তিন জোড়া পোশাক ও ১৯টি ইউনিফর্ম, পিস্তলের গুলি, ১টি ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি সেট, দুটি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি প্রিন্টার, সেলাইমেশিন, তাঁবু, নেট, লোহার শেকল, খাবারের তৈজসপত্র ও খাবারের কাঁচামাল, চাঁদা আদায়ের রসিদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই আস্তানায় অপহরণের শিকার শিক্ষার্থীদের রাখা হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান।
অভিযানের বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে আজ ভোরে ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় পূর্ণচন্দ্র কার্বারি পাড়ার একটি ঘর থেকে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানার সন্ধান পায় যৌথবাহিনী। সেখান থেকে ইউপিডিএফের প্রশিক্ষণ সরঞ্জামসহ ল্যাপটপ, মোবাইল, ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। পাঁচ শিক্ষার্থীকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন সড়কেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
বিজু উৎসব উদযাপন শেষে ফেরার পথে গত ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাঁদের বহন করা অটোরিকশার চালককে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন– পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপহরণকারীরা চালককে ছেড়ে দিলেও পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি।
এ ঘটনায় ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস- সন্তু লারমা) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।