ফরচুন বরিশাল ও খুলনার ম্যাচ চলাকালে দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে ফটোগ্রাফারদের মনোযোগ কেড়ে নেন। কেউ কেউ দলের বিদেশি ক্রিকেটারদের খোঁজ করছিলেন। রায়ান বার্ল ও আফতাব আলমের উপস্থিতি সে কৌতূহল মেটালেও নতুন করে প্রশ্নের উদয় টাকা পাওয়া নিয়ে। একজন ফটো সাংবাদিক পাশ থেকে ঠাট্টাচ্ছলে জানতে চান, টাকা পেয়েছে কিনা। বিদেশিদের হয়ে কেউ একজন বলেন, ‘টাকা না পেলে মাঠে আসত না।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে সম্মানীর আংশিক পেমেন্ট পেয়েছেন রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটারদের অনেকে। তারাই গতকাল লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে দলের সঙ্গে মাঠে এসেছেন। হোটেলে রেখে এসেছেন মোহাম্মদ হারিসকে। বিদেশি ক্রিকেটার পাঁচজন মাঠে এলেও নিয়মরক্ষার দুই বিদেশি খেলান কোচ এজাজ আহমেদ। তবে এভাবে সম্মানী নিয়ে অনিশ্চয়তার ব্যাপারটি বিপিএল খেলতে আসা বিদেশি ক্রিকেটাররা ভালোভাবে নেননি। 

ফরচুন বরিশালের ডেভিড মালান যেমন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেই ফেললেন, টাকা না থাকলে দল নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ‘তোমার টাকা থাকলে দল বানাও। টাকা না থাকলে দল বানানোর প্রয়োজন নেই। এটাই হওয়া উচিত। পেমেন্ট নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, আমি সে রকম দলে খেলি না। আমার দলের পরিবেশ ভালো। আশা করি, সামনেও খারাপ সময় আসবে না।’ 

খুলনার অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বোসিস্টেরের সুরও একই রকম, ‘আমি চুক্তি অনুযায়ী টাকা পাচ্ছি। যদিও কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে হতাশ করা অনেক কথাই শুনছি।’

তবে শেষ মুহূর্তে বিসিবি সভাপতির কাছ থেকে টাকার নিশ্চয়তা উজ্জীবিত করেছে রাজশাহীকে। রাজশাহীর অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন বিসিবি দেবে তাদের টাকা। বিসিবির একজন পরিচালকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এক পর্যায়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি উল্টো জানতেও চেয়েছিলেন, বিসিবি এত টাকা কেন দেবে?

হোটেল ভাড়ার ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় যে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে আটকে রাখা হয়েছিল, তার পক্ষে ১৩ কোটি টাকা খরচ করার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের এমডি শফিকুর রহমান চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে বলেছেনও একটি দল চালানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা তাঁর নেই। একপ্রকার জোর করেই বিপিএলে আনা হয়েছে তাঁকে। 

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে মেসেজ দেওয়া হলে শফিকুর রহমানের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেন। কারণ, এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টাকা না দিলেও অভিনয় করতে জানেন। ক্রিকেটারদের সোমবার চেক দিয়ে নজর কাড়েন তিনি। তাসকিনরা রোববার রাতে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে জয় পাওয়ার পর হোটেলে ফিরে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক শফিকুরকে ঘিরে নৃত্য করেছেন। ক্রিকেটারদের কেউ কেউ সকালে ফেসবুকে চেকের ছবি দিয়ে জানান দেন সম্মানী পেয়েছেন। তবে আজ বোঝা যাবে তাসকিনদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে কিনা। 

ক্রিকেটারদের এই দ্বিচারিতায় বিস্মিত বিসিবি কর্মকর্তারাও। যদিও বিসিবি মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু বলছেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটারদের টাকা দিতে বাধ্য। এ ব্যাপারে বোর্ড কঠোর অবস্থানে।’ 

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বিসিবি থেকে টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ পাবে এবার। সুপার ফোরে খেলার জন্য একটা টাকা দেওয়া হতে পারে বলে জানান ইফতেখার মিঠু।

রাজশাহীর মতো চিটাগং কিংসের বিরুদ্ধেও ক্রিকেটারদের সম্মানী না দেওয়ার অভিযোগ আছে। বিসিবি বিষয়টি জানার পরও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ এই ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে ২০১২ সালে ১৮ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। সেই টাকা কমিয়ে ৪ কোটি টাকা করেছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। বকেয়া এবং ‘গ্যারান্টি মানি’ না দিয়েই বিপিএল খেলছে দলটি। 

বিসিবি পরিচালকরাও শঙ্কায় আছেন চট্টগ্রামের দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের সম্মানী পরিশোধ করা নিয়ে। রাজশাহী ও চিটাগং ছাড়া বাকি পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজির চুক্তি অনুযায়ী ক্রিকেটাররা ৫০ শতাংশ টাকা পেয়ে গেছেন। ৩০ জানুয়ারি শেষ ম্যাচের আগে চুক্তির ৭৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে চায় সিলেট স্ট্রাইকার। ফরচুন বরিশাল ৬৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

আমি এসব থেকে মুক্তি চাই: তারিক আনাম

উনি তো বাংলাদেশের অমিতাভ বচ্চন, শোবিজ অঙ্গনে এ বাক্যটি প্রায়ই শোনা যায় তাঁর সহকর্মীদের মুখে। কেবল অমিতাভদের মতো করে কাজে লাগানো হয়নি। তাঁকে কেন্দ্র করে গল্প ভাবলে, গল্পের মূল শক্তিতে যদি তাঁকে রাখা হয়, তাহলে দারুণ কিছু পেতে পারত ঢাকার সিনেমা কিংবা নাটকের ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু ক’জন ভাবে এটা। অধিকাংশের ভাবনায় কেবল ট্রেন্ডি কনটেন্ট। ভাইরাল শিল্পী। ফলে ঢাকার শোবিজে দাপুটে অভিনেতা হয়েও অমিতাভ কিংবা রজনীকান্তদের মতো প্রভাব নিয়ে পর্দায় হাজির হতে পারছেন না। তিনি তারিক আনাম খান।  

ব্যক্তিজীবনে যিনি সৌম্য, শান্ত, ধীরস্থির প্রকৃতির একজন মানুষ। অভিনয়ে প্রথাগত নন। আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য নিয়েই চলমান। তারিক আনামের সঙ্গে যারা মেশেন বা যারা তাঁকে জানেন তারা কায়মনোবাক্যে স্বীকার করবেন তিনি বলেন কম, শোনেন বেশি। শোঅফ কম, করেন বেশি। 

সদা গম্ভীর প্রকৃতির একজন মানুষ হয়েও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন নিজের অভিনয় সৌকর্য ও সাংগঠনিক দূরদর্শিতা দিয়ে। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে মঞ্চের আলোয় আলোকিত তিনি। গ্রুপ থিয়েটারের অন্যতম দল নাট্যকেন্দ্রের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেও নিজের ভেতর বিন্দুমাত্র অহমিকা নেই। নেই ‘অনেক কিছু করেছি টাইপ’ দৃষ্টিভঙ্গি।

নতুন বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল তারেক আনাম খান অভিনীত ‘মেকআপ’ সিনেমাটি। বহু আগে শুটিং হওয়া এ সিনেমাটি বারবার সেন্সর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল। মূলত দেশের শোবিজ অঙ্গনের খুঁটিনাটি বিষয় ও সম্পর্কের বিষয়গুলো চিত্রায়ণ করায় এই নিষেধাজ্ঞা। এই সিনেমায় একজন সুপারস্টার নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তারিক আনাম খান। সিনেমাটি ব্যবসা করতে পারেনি। পারছে আলোচনায় আসতে। যেটা পেরেছে সেটা তারিক আনাম খানকে নতুন করে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে। যে তারিক আনাম খানদের এই সময়ের নির্মাতারা এড়িয়ে চলেন, কিংবা শুধু বাবার চরিত্রের জন্যই কাস্ট করেন, তাদের নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছেন। এই ছবিতে তারিক আনাম খান সত্যি সত্যিই দেখিয়েছেন বয়স একটা সংখ্যামাত্র। তাঁকে নিয়ে বহুমাত্রিক চিন্তা করার সময় এখন। তবে সেই চিন্তা কতটা প্রসারিত হবে, তা অজানা। যদিও অভিনেতা অনেকটা কৌতুকের সুরেই বিষয়টি সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বলেন, এখন তো সব সিনেমায় বাবা চরিত্রেই অভিনয় করছি। আমি তো জাতীয় বাবা হয়ে গেছি। এর থেকে মুক্তি চাই।’

 তাঁর মতে, সিনিয়র শিল্পীদের চরিত্র নিয়ে নির্মাতাদের আলাদা করে ভাবা উচিত। যেখানে বলিউডে সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে আলাদা গল্প বলা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এটা হয় কী? আমাদের নিয়ে নতুন নতুন ভাবনার গল্প তৈরির লোক কই? কথাগুলো বলার সময় এক ধরনের আক্ষেপ ছিল বরেণ্য এই অভিনেতার। ছিল অতৃপ্তিও। তাই কথা বলতে বলতে ফিরে যাওয়া হয় অতীত স্মৃতিতে। যে স্মৃতি বর্ণিল, রঙ্গিন। যাকে সবাই সোনালি দিন বলেই সম্বোধন করেন। সেই সোনালি দিনগুলোর কথা কতটা মনে তারিক আনাম খানের? জানালেন, তিনি আসলে অতীত রোমন্থন করে তাতে মুগ্ধ থাকার মানুষ নন। বলেন, আমি অতীত মগ্ন মানুষ নই। স্মৃতি রোমন্থন করারও মানুষ নই। আমি মনে করি, বর্তমান সময়টাই সত্য।’ 

তারপরও অতীতের কাজের পদ্ধতি নিয়ে কথা বললেন এই অভিনেতা। কথা বলতে বলতেই উঠে এলো সব। বললেন, তখনকার সময়ের কথা যদি বলি তখন ভালো ছিল এই যে, স্ক্রিপটা নিয়ে নাট্যনির্দেশকরা অনেক আগে থেকে চিন্তাভাবনা করতেন। কমপক্ষে চারদিন নাটকের রিহার্সেল হতো। একটানা তিন ক্যামেরায় কাজ হতো, আর্টিস্ট অংশগ্রহণ করত। আমি এখন যদি এই একই ঢঙে নাটক নির্মাণ করি, তাহলে দর্শক গ্রহণ নাও করতে পারে। ওই সময় এবং এ সময়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ যদি করি, দেখা যাবে তখন সিরিয়াসনেসটা বেশি ছিল। হোমওয়ার্ক বেশি হতো। কোয়ালিটিও ছিল এবং ভালো কাজের যথেষ্ট সুযোগও ছিল। কোয়ালিটি কিন্তু আপেক্ষিক বিষয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লির মৃত্যু 
  • গায়িকা-অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল আর নেই
  • সাইফুল-সাজ্জাদে তটস্থ চট্টগ্রামের ৫ থানার পুলিশ
  • কামরুল হাসানের কাছে শিল্প ধরা দিয়েছিল
  • ‘আমার চিত্রকর সত্তার মৃত্যু ঘটিয়েছি’
  • ‘রেখাচিত্রকে অবহেলা করা উচিত নয়’
  • অনুষ্ঠানে প্রবেশে নারী সাংবাদিককে ‘বাধা’, যা হয়েছিল সেদিন
  • যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ-হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বেঁচে নেই কেউ
  • জামালপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৫ যাত্রী নিহত
  • আমি এসব থেকে মুক্তি চাই: তারিক আনাম