সৌদির সড়কে মৃত্যুর ২০ দিন পর ফিরল মাসুকের মরদেহ
Published: 28th, January 2025 GMT
পরিবারের সুখশান্তি আর উন্নত জীবনের আশায় স্ত্রী-সন্তান ও মা-বাবাকে ছেড়ে মাত্র ৫ মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী গ্রামের মাসুক মিয়া। প্রবাসে চাকরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালই কাটছিল তার জীবন। সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে গেল মাসুকের জীবনের চাকা।
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ২০ দিন পর সড়কে নিহত মাসুক মিয়ার মরদেহ ফিরলো বাড়িতে। লাশ বাড়িতে পৌঁছার পর স্ত্রী সন্তানসহ আত্মীয়স্বজনের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
মাসুক মিয়া উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের জহুর আলীর ছেলে। সংসারে তার স্ত্রী ও দেড় বছরের আফনান নামে একমাত্র ছেলে রয়েছে।
পরিবার জানায়, মাসুক মিয়া মাত্র ৫ মাস পূর্বে চাকরি নিয়ে সৌদি আরব যান। ভালই চলছিল তার সহকর্মীদের নিয়ে প্রবাস জীবন। ৭ জানুয়ারি সৌদি আরবে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মাসুক। মাসুকের মৃত্যুর পর সন্তানের লাশ দেখতে পাবেন কিনা এ নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েন অসহায় বাবা-মা ও স্ত্রী স্বজন।
অবশেষে মৃত্যুর ২০দিন পর প্রবাসে তার সহকর্মী একই গ্রামের মাহমুদুর রহমান রুবেল সৌদির দূতাবাসের সহযোগিতায় লাশ নিয়ে দেশে আসেন। সোমবার ভোর রাতে লাশ পৌঁছায় হযরত শাহজালাল (রহঃ) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। সেখান থেকে পরিবারটির পক্ষে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য কামাল হোসেন লাশ গ্রহণ করে বাড়ি নিয়ে আসেন। সোমবার বিকেলে লাশ বাড়িতে পৌঁছার পর স্ত্রী সন্তান, বাবা-মা ও স্বজনের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
ঢাকা/মামুন/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দেখে এলাম প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থিত বান্দরবান জেলা। এই জেলা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানে প্রকৃতিতে রূপের পসরা সাজিয়েছে পাহাড়, ঝরনা, নদী। শহুরে কোলাহল ছেড়ে বান্দারবানে পৌঁছালে প্রকৃতি আর সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ভ্রমণকারীর মনে অবারিত শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। সম্প্রতি সহকর্মীদের সঙ্গে উপভোগ করে এলাম নীলাচলের নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত এবং নীলগিরি কুয়াশায় মোড়া ভোরে ভাসমান মেঘের খেলা আমাদের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে।
শুরুতেই আমরা গিয়েছিলাম নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে। বান্দরবান শহরের কাছেই অবস্থিত এই পাহাড়ি স্থানটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের প্রতীক। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে মনে হয় পৃথিবী হাতের মুঠোয়। সূর্য তখন ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। আকাশে রঙের খেলা, কমলা আর লাল রঙের অপূর্ব মিশ্রণ। এ সময় বাতাসে এক ধরনের প্রশান্তি। দূর পাহাড়ের সারি আর নীলাচলের চারপাশে মেঘের আনাগোনা আমাদের মুগ্ধ করে। ‘ইকোসেন্স’ নামক একটি স্পটে বসে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই স্বর্গীয়। প্রকৃতির এই অনবদ্য দৃশ্য জানিয়ে দেয় জীবন কতটা সুন্দর ও উপভোগ্য।
এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল নীলগিরি, যা বান্দরবানের সবচেয়ে উঁচু পর্যটন কেন্দ্র। পথে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা আমাদের ভ্রমণকে আরও দারুণ করে তোলে। নীলগিরির চূড়ায় পৌঁছে মেঘের ভেলায় ভেসে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলো। মনে হলো যেন আকাশের কাছে চলে এসেছি। হিমেল হাওয়া আর মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটা সত্যিই এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথটা অসাধারণ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে যেতে যেতে চোখে পড়ে পাইন গাছের সারি। যা ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে। চিম্বুকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালে মনে হয় সবুজ পাহাড়ের ঢেউ সমুদ্রের মতো দুলছে। ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসা প্রকৃতির মিষ্টি গন্ধ আর সূর্যের আলোয় ঝলমলে পাহাড়ি গ্রামের দৃশ্য এক অন্যরকম শান্তি দেয়। এখানকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সরল জীবনযাত্রা আরও মুগ্ধ করে।চিম্বুকের সৌন্দর্য শুধু চোখ নয়, মনও ছুঁয়ে যায়। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির বিশালতা অনুভব করাই চিম্বুক ভ্রমণের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ।
সবশেষে আমরা যাই সাঙ্গু নদীর তীরে। পাহাড়ি স্রোতস্বিনী সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ ছিল পুরো সফরের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ। পাহাড়ি নদীর শীতল স্রোতে ভেসে চলার সময় মনে হলো প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। নদীর দুই পাশে সবুজের সমারোহ, পাহাড়ি গ্রামের চিত্র আর নদীর বয়ে চলার মৃদু শব্দ আর নদীর দুই পাড়ে স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর কর্মব্যস্ততা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আমরা ছোট্ট নৌকায় নদীতে ভেসে প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগ করি। সাঙ্গুর মায়াবী সৌন্দর্য যেন মনকে গভীর প্রশান্তি এনে দেয়।
এই ভ্রমণ শুধু পাহাড়, নদী আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না এটি ছিল সহকর্মীদের সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা আর বন্ধনের মুহূর্ত তৈরি করারও সুযোগ। বান্দরবানের এই সৌন্দর্যময় ভ্রমণ আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দে যে প্রশান্তি, তা আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।
ঢাকা/লিপি