রানিং এলাউন্সসহ বেশি কিছু দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। বন্ধ রয়েছে সারা দেশের ট্রেন চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় রয়েছেন। রাত পৌনে ১টায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার পর আর কোনো ট্রেন যাত্রা করেনি। আগে থেকেই টিকিট কাটায় এবং ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর না জানায় যাত্রীরা স্টেশনে আসেন। 

বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ১০০টিরও বেশি আন্তঃনগর ট্রেনসহ ৩৫০টিরও বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করে। 
রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কর্মবিরতির কারণে এর সবগুলো বন্ধ রয়েছে। 

কমলাপুর স্টেশন থেকে খুলনার যাত্রী শহীদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “আগে থেকেই অনলাইনে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। মধ্য রাত থেকে যে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে এ খবর জানতাম না। রেল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কোনো বার্তা আমাদের জানায়নি। শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন না চললে মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো উচিত ছিলো। আবার টাকা কীভাবে ফেরত পাবো সেটাও জানি না।”

হামিদা বেগম তার মাকে নিয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় আছেন। তারা যাবেন পঞ্চগড়। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, “মা ক্যান্সারের রোগী। ঢাকায় এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। ট্রেনের যাত্রায় কষ্ট কম হয়। কিন্তু এখন তো আরো বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হলো। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সবাই দাবি আদায় করতে চায়। আমাদের কষ্টের কথা কেউ ভাবে না।”

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। 

সমস্যার সমাধানে সোমবার ঢাকার কমলাপুরে আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।

বৈঠক থেকে বের হয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো.

সাইদুর রহমান।

পরে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে রেলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রানিং স্টাফরা যে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে, তাতে সারা দেশে রেল চলাচলে অচলাবস্থা ও চরম যাত্রী ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।

“এক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট। এরইমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবিগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে চিঠি চালাচালির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও চলছে।

“রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টার ফলে এরইমধ্যে তাদের রানিং অ্যালাউন্স ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, মাইলেজ অ্যালাউন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ৮ ঘন্টা ও ১০০ মাইল দূরত্বের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। রানিং স্টাফদের অন্যান্য দাবি আদায়েও রেলপথ মন্ত্রণালয় আন্তরিক ও সচেষ্ট আছে।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই অবস্থায় তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল কর্মকর্ত-কর্মচারীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে। যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বিবেচনা করে পূর্ব ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে রানিং স্টাফরা উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।”

গত বুধবার চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনের চালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। এ ধরনের কর্মী রয়েছেন প্রায় দুই হাজার। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।

প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।

এছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ র লওয় র লওয় র র কর ম

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বাংলাদেশির সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার তথ্য সঠিক নয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা ইউএসএআইডির ২ কোটি ৯০ লাখ (২৯ মিলিয়ন) ডলারের প্রকল্প দুই বাংলাদেশির মালিকানাধীন সংস্থাকে দেওয়ার দাবি সত্য নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ২৯ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকল্পটি নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন, যা নিয়ে জনমনে ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অনুসন্ধান করেছে।

অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইউএসএআইডি যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে (ডিআই) নির্বাচিত করে। প্রকল্প প্রস্তাবনা আহ্বানের পর অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। একটি স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্য দিয়ে ইউএসএআইডি সিদ্ধান্তটি নেয়। ২০১৭ সালের মার্চে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডিআই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় এবং এর অর্থ আসে ধাপে ধাপে।

এসপিএল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাজনৈতিক সহিংসতা হ্রাস করে শান্তি ও সম্প্রীতি বাড়ানো, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তৈরি, দলগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার উন্নয়ন ও প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্বের বিকাশে উৎসাহ দেওয়া। প্রকল্পের অধীনে ডিআই বাংলাদেশে জরিপ কার্যক্রমও চালায়।

শুরুতে এসপিএল প্রকল্পটি ছিল পাঁচ বছর মেয়াদি এবং বাজেট ছিল ১৪ মিলিয়ন ডলার। প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনায় ছিল ইউএসএআইডি এবং অর্থায়নে ছিল ইউএসএআইডি ও যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএফআইডি (বর্তমানে এফসিডিও)। এই প্রকল্পে ডিএফআইডির অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ছিল ১০ মিলিয়ন ডলার।

মন্ত্রণালয় বলছে, ইউএসএআইডির প্রকল্পের ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক। এতে আর্থিক নিরীক্ষার প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। প্রকল্প শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরও এ-সংক্রান্ত নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয়। প্রয়োজনে পুনর্নিরীক্ষণ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ