বিদেশি বিনিয়োগের নীতিমালা পরিবর্তন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
Published: 28th, January 2025 GMT
দেশে বেসরকারি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগের নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নিয়মে অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে কোন অনিবাসী, বিদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ বিনিয়োগ করতে পারবেন। ১০ লাখ টাকার বেশি শেয়ারে বিনিয়োগ করলে অনুমোদিত ডিলারের পাঠানো প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচাই করে নির্দেশনা দেবে। তবে সব ধরনের বিনিয়োগই ব্যাংকিং চ্যানেলে করতে হবে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের বেসরকারি বা তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিতে শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে করতে হবে। অনিবাসী, বিদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ লাখ টাকার বেশি হলে কোম্পানির শেয়ার ইস্যুর ১৪ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। এসব তথ্যের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারের নাম-ঠিকানা, শেয়ারের সংখ্যা, ইস্যুর তারিখ, প্রতি শেয়ারের অভিহিত মূল্য, শেয়ার প্রিমিয়াম, অনলাইনে ব্যবহৃত রিপোর্টিং আইডি, ইস্যুকৃত শেয়ারের মোট মূল্যমান, বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগের পরিমান, বিনিয়োগ দেশে আনার তারিখ, বিনিযোগকারীর দেশের নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে। এছাড়া সুইফটের মাধ্যমে লেনদনের জন্য উপযুক্ত হিসাব নম্বর, খুদে বার্তার মাধ্যম হিসাবে ইমেইল, স্বাক্ষর ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে।
এছাড়া শেয়ার ইস্যুর আগেই বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগের উৎস ও দেশ উল্লেখ করতে হবে। দেশের অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকের পাঠানো প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগের নির্দেশনা দেবে। আমদানিকৃত মূলধনী যন্ত্রপাতির বিপরীতে ইস্যু করা শেয়ারের ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। বিনিয়োগকারীর অনুকূলে কোনো কোম্পানির শেয়ার ইস্যু করার আগে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাতে হবে।
জানা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে দুই ধরনের পোর্টফোলিও বিনিয়োগ করেন। এর মধ্যে একটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে, যা ইকুইটি সিকিউরিটিজ হিসেবে পরিচিত। অন্যটি ডেবট সিকিউরিটিজে। ইকুইটি সিকিউরিটিজ বলতে সেসব সিকিউরিটিজকে বোঝায়, যারা বছরের শেষে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়। তালিকাভুক্ত লভ্যাংশ নির্ভর বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ইকুইটি সিকিউরিটিজ হিসেবে বেশি পরিচিত। আর ডেবট সিকিউরিটিজ বলতে সেসব সিকিউরিটিজকে বোঝায়, যারা বিনিয়োগের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে সুদ দিয়ে থাকে। এ ধরনের সিকিউরিটিজের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিল ও বন্ড।
ঢাকা/এনএফ/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী
অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।
কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?
ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।
এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।
আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!
এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।
বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।
সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী
[email protected]