গ্রিড লাইন নির্মাণে কচ্ছপ গতি। পিছিয়ে যাচ্ছে উৎপাদনের সময়সীমা। আটকে রয়েছে ঋণ পরিশোধও। আগেই মাত্রাতিরিক্ত খরচ, পরিচালনা, নিয়োগ, পদোন্নতিসহ নানা অনিয়মে প্রশ্নবিদ্ধ পাবনার ঈশ্বরদীর ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’। এখন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

২০১১ সালের প্রকল্পে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা করছে রাশিয়া। চূড়ান্ত হস্তান্তরের সময় ২০২৫ সালের ১৭ অক্টোবর থাকলেও, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সাল করা হয়। দুই ইউনিটের প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার ব্যয় ধরা হয়, যার ৯০ শতাংশ ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে ব্যয় হবে আরও ২০০ কোটি ডলার। ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রকল্পে যুক্ত হয় ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা চুক্তি হয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এশিয়ায় সবচেয়ে ব্যয়বহুল
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তথ্য, ভারত, রাশিয়া, তুরস্ক, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি কিলোওয়াট নির্মাণে খরচ গড়ে ১ হাজার ৫৫৬ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৮১ ডলার। কিন্তু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় ৫ হাজার ৮৯০ ডলার। রাশিয়ার সর্বাধুনিক ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তিতে হচ্ছে রূপপুর কেন্দ্র। একই প্রযুক্তিতে রাশিয়ায় নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিলোওয়াটপ্রতি নির্মাণ খরচ পড়েছে ৪ হাজার ৭৫ ডলার। এমনকি রাশিয়ার রোসাটম ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, ইরান, বুলগেরিয়াসহ কয়েকটি দেশে ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তিতে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে, তার খরচ রূপপুরের চেয়ে অনেক কম। ফিনল্যান্ডে ৫ হাজার ও তুরস্কের আক্কুইউ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াটের নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার ২০০ ডলার। ভারতের কুদামকুলামে রাশিয়ার ভিভিইআর-১০০০ প্রযুক্তির প্রতিটি ১ হাজার মেগাওয়াটের ছয় ইউনিটের নির্মাণ খরচ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা।

মূল প্রকল্প ব্যয়ের বাইরে আরও ১৯ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে রেল মন্ত্রণালয়ের ৩৩৯ কোটি টাকার ২২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্প।

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। তথ্যপ্রযুক্তির জন্য নেওয়া হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। রূপপুরের জন্য যন্ত্রপাতি আনতে নদীপথ খনন ও নাব্য রক্ষায় খরচ হচ্ছে নৌ মন্ত্রণালয়ের ৮৮২ কোটি টাকা।

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা আনু মুহাম্মদ বলেন, রূপপুর প্রকল্প দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। যাচাই-বাছাই ছাড়াই রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কোনো জবাবদিহি ছিল না। দেশের স্বার্থেই এ প্রকল্প বন্ধের দাবি জানান তিনি।

দুর্নীতিতে হাসিনা পরিবার, তদন্তে দুদক
রূপপুর প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, রেহানার মেয়ে (সদ্য ব্রিটিশ মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ) টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানে নেমেছে। সংস্থায় জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার লোপাট করেছেন হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
গ্লোবাল ডিফেন্স করপোরেশনের প্রতিবেদন বলেছে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ প্রকল্পের চুক্তি করেছিলেন শেখ হাসিনা। মধ্যস্থতার জন্য মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ অর্থ পেয়েছেন শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ অন্যরা। যদিও গত ১১ সেপ্টেম্বর বিবৃতিতে ঢাকার রুশ দূতাবাস রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতি বিষয়ে প্রচারিত সংবাদ ও তথ্য ‘বিভ্রান্তিকর’ এবং ‘মিথ্যা’ দাবি করেছে।

এক ব্যক্তির প্রকল্প
শুরু থেকে এ প্রকল্পের পরিচালক ড.

শৌকত আকবর। তাঁর নিয়োগ নিয়ে আপত্তি ছিল বিজ্ঞানীমহলের। প্রকল্প পরিচালকের পাশাপাশি তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক কোম্পানি এনপিসিবিএলের এমডিও ছিলেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারির পর শৌকতকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। এর পর তিনি প্রকল্প পরিচালক পদ ছাড়লেও এনপিসিবিএলের এমডি রয়ে গেছেন।

সূত্র জানায়, পরমাণু শক্তি কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. অশোক কুমার পাল গত বছরের ১৫ জানুয়ারি অবসরে যান। এ সময় কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন সদস্য (পরিকল্পনা) ডা. শামীমা মমতাজ ফেরদৌসী এবং প্রথা মতে তাঁরই চেয়ারম্যান হওয়ার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান পদটি খালি রেখে ১৮ জুলাই শৌকতকে সদস্যের (ভৌত বিজ্ঞান) চলতি দায়িত্ব দিয়ে দুপুরেই চেয়ারম্যান করা হয়। সাবেক তথ্য ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় জ্যেষ্ঠতার চার নম্বরে থেকে পদটি বাগিয়ে নেন শৌকত। পরে এ প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি প্রকল্পে একক কর্তৃত্ব চালিয়েছেন। বিশ্বস্ত কয়েক কর্মকর্তার মাধ্যমে পুরো কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন শৌকত। বর্তমান প্রকল্প পরিচালক ড. জাহেদুল হাছানও তাঁর আস্থাভাজন। প্রকল্পের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি পরিদর্শনে রাশিয়া যেতেন তারা দু’জন। শৌকত ও জাহেদুলের কারও পারমাণবিক বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত পড়াশোনা নেই।
জানতে চাইলে শৌকত আকবর বলেন, ‘যোগ্যতার কারণেই তৎকালীন সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। কারও কাছে কোনো তদবির করিনি।’ প্রকল্পের কাজে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

গ্রিড লাইন নির্মাণে বিলম্ব
ঠিক সময়ে গ্রিড লাইন নির্মাণ না হওয়ায় প্রায় দুই বছর পিছিয়ে গেছে রূপপুর কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম। ২০২৪ সালে চালুর কথা ছিল। কিন্তু এখন ২০২৬ সালেও দেশের প্রথম পারমাণবিক কেন্দ্র চালু হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। গ্রিড লাইনে ভারত ঋণ দিতে চাইলেও, অর্থছাড়ে গড়িমসির কারণে প্রায় দুই বছর নষ্ট হয়। পরে ভারতীয় কোম্পানি গ্রিড লাইন নির্মাণেও ঢিলেমি করে। গত বছর ৫ আগস্টের পর দীর্ঘদিন কোম্পানিগুলো নির্মাণকাজ বন্ধ রাখে। আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও লাইন নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হয়।
প্রকল্পের আওতায় তিনটি সঞ্চালন লাইনের মধ্যে শেষ হয়েছে রূপপুর-বাঘাবাড়ী ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন। রূপপুর-বগুড়া ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইনের কমিশনিং হয়েছে। আর রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট লাইনের পদ্মা রিভার ক্রসিং অংশের কাজ বাকি রয়েছে। পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলেছে, চলতি বছরের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের সব কাজ শেষ হবে।

ভারতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আপত্তি
প্রকল্পের জন্য ভারতের সঙ্গেও সহযোগিতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এর আওতায় পরামর্শক সেবা ও জনবল প্রশিক্ষণে ভারতের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। চুক্তি অনুসারে নির্মাণ শেষে রূপপুর প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের দেওয়ার কথা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এ চুক্তি নিয়ে আপত্তি রয়েছে খাত-সংশ্লিষ্টদের। তাদের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ‘নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার্স’ গ্রুপের (এনএসজি) সদস্য নয় ভারত। অন্য দেশে পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণে তার অভিজ্ঞাতাও নেই। তাহলে কেন রূপপুরে ভারতীয় সহযোগিতা নেওয়া হবে? স্পর্শকাতর এ প্রকল্পে ভারতের সম্পৃক্ততা নিরাপত্তা হুমকি বলেও মনে করেন এ খাতর বিশ্লেষকরা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে ২০১২ সাল থেকে কয়েক দফা চিঠি দেয় ভারত। পরে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল ৪০ বছরের পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি করে দুই দেশ।

ঋণ পরিশোধে জটিলতা
রাশিয়া প্রকল্পের শুরুতে সমীক্ষা ও নকশার জন্য ৪৯ কোটি ডলার ঋণ দেয়। পরে মূল নির্মাণকাজে এ পর্যন্ত দেশটি ৭৩০ কোটি ডলার ছাড় করেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর আগেই বাংলাদেশ রুশ একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের সুদ পরিশোধ শুরু করে। কিন্তু রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে আটকে যায় ঋণ পরিশোধ। বর্তমানে প্রকল্প বাবদ বাংলাদেশের কাছে রাশিয়ার পাওনা প্রায় ৮০০ কোটি ডলার। একবার চীনের মুদ্রায় শোধের আলাপ উঠলেও এগোয়নি। এখন দুই দেশ নতুন পথ খুঁজছে।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প ব প রকল প র এ প রকল প ত র জন য সহয গ ত পর শ ধ ই বছর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট

আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।

পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।

এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা

এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও। 

রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।

প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”

অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”

অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”

গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”

কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”

স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ