জেলা পরিষদের ৭২০ কোটি টাকা মিলেমিশে লোপাট
Published: 28th, January 2025 GMT
বান্দরবান জেলা পরিষদে অস্তিত্বহীন ও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টন চাল ও ৮০ হাজার টন গম আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান বাজারমূল্যে আত্মসাতের পরিমাণ ৭২০ কোটি টাকা। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১৬ বছরে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানসহ চার কর্মকর্তা এসবের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।
অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত চারজন হলেন– সাবেক চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী থোয়াই চ মং, হিসাবরক্ষক উসাজাই মারমা।
কক্সবাজার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো.
দুদক সূত্রে জানা যায়, অনুসন্ধানের জন্য গত ৯ জানুয়ারি কমিশনের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। কমিশনের পক্ষে উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার পর গত ১৫ জানুয়ারি দুই সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। এ টিমের প্রধান সুবেল আহমেদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাদ্যশস্য প্রকল্পের আওতায় বান্দরবান জেলা পরিষদ লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঠান্ডাঝিরি রাস্তা সংস্কার, ডলুঝিরি থেকে রাবার বাগান রাস্তা সংস্কার, মরুঝিরি বাঁধ সংস্কার, ডেসটিনি বাগান থেকে লম্বাশিয়া রাস্তা সংস্কার এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের দুস্থ মহিলাদের মাঝে হাঁস-মুরগি-ছাগল বিতরণসহ অসংখ্য প্রকল্প কাগজ-কলমে দেখানো হলেও সংস্কার কাজের কোনো অস্তিত্বই নেই।
এ বিষয়ে জানতে বান্দরবান জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা ও নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়া তিনজনই সুবিধাবঞ্চিত কিশোর-তরুণ, ছিলেন স্টেশনের টোকাই: রেলওয়ে পুলিশ
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিন কিশোর-তরুণ সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির বলে জানা গেছে। রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য, তাঁরা সবাই ‘টোকাই’ ছিলেন। স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে বোতলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়াতেন।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা জানান, আজ বুধবার ভোরের কোনো এক সময় বুড়িচং উপজেলার মাধবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুনকুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ কিশোর-তরুণের মৃত্যু৫ ঘণ্টা আগেতিনজনের মধ্যে একজনের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। তাঁর নাম সাইফুল ইসলাম (১৮)। তিনি কুমিল্লা রেলস্টেশনে বোতল কুড়ানোর কাজ করতেন। তাঁর মা-বাবা সেখানে রেলস্টেশন পরিচ্ছন্নতা কাজের পাশাপাশি বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিহত অন্য দুজনের মধ্যে একজনের নাম তুহিন বলে জানা গেলেও আরেকজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তুহিনও কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে বোতল কুড়াতেন। তবে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা রেলস্টেশনে সাইফুলের মরদেহের পাশে মোখলেছুর নামের এক ব্যক্তিকে আহাজারি করতে দেখা যায়। তিনি নিজেকে সাইফুলের বাবা দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার তিনটা পুত (ছেলে)। এর মইধ্যে সাইফুলডা বড়। গতকালকা দুপুরে আমি সাত প্লেট ভাত আনছি হোটেল থাইক্কা। পুতে কইলো, “আব্বা, কসবা স্টেশনে যাইয়াম; বোতল টোকানোর লাইগ্যা।” আমি কইছি, “পুত, তুই ভাত খাইয়া যা; এহন বোতল টোকান লাগতো না।” পুতে আমার কথা না হুইন্যা চইল্যা গেল। রাইত ৩টা পর্যন্ত পুতের লাইগ্যা অপেক্ষা করছি। আজকা সহালে স্টেশনের এক লোক আমারে ভিডিওতে দেহাইলো, আমার পোলাডা ট্রেনে কাটা পইড়া মইরা গেছো।’
মোখলেছুর জানান, সাইফুলের সঙ্গে নিহত অন্য কিশোর-তরুণও টোকাই। তাঁদের মধ্যে একজনকে তুহিন নামে চেনেন তিনি। মোখলেছুরের গ্রামের বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলায়। সেখানে তাঁর ভিটেমাটি না থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকেন। ছেলের লাশ দাফন করার মতো জায়গা নেই। তাই রেলওয়ে পুলিশকে বলেছেন, লাশটি যেন সরকারিভাবে দাফন করা হয়।
সাইফুলসহ ওই তিনজন গতকাল দুপুরে কুমিল্লা স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন বলে জানান রাজীব হোসেন নামের আরেক সুবিধাবঞ্চিত তরুণ। সাইফুলের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল বেলা দেড়টার দিকে ওই তিনজন আমাকে ও ইউসুফকে (আরেক পথশিশু) যেতে বলছিল। আমরা যাইনি। আমাকে জানাইছিল, হেরা আখাউড়া যাইব। বিকালে ফিরে আওনের কথা থাকলেও রাইতে আর তাগো দেহি নাই। সাইফুল কুমিল্লা স্টেশনে থাকত। তয় ওই দুজন চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্টেশনে বোতল টোকাইতো।’
তবে ওই তিনজন কোন ট্রেনের নিচে এবং কীভাবে কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা। তিনি ধারণা করছেন, গতকাল শেষ রাতের দিকে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন তাঁরা।
সোহেল মোল্লা আরও বলেন, নিহত তিনজনই টোকাই ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন স্টেশনে বোতলসহ ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র কুড়াতেন। তবে যেখানে তাঁরা কাটা পড়েছেন, সেটি নির্জন এলাকা। হয়তো মাদক সেবন করে অসাবধানতার কারণে তাঁরা ট্রেনে কাটা পড়েছেন। কারণ, যেভাবে কাটা পড়েছেন, সেটি দেখে মনে হচ্ছে না তাঁরা ট্রেনের ছাদ থেকে লাফ দিয়েছেন। আবার চলন্ত ট্রেন থেকে নামার সময়ও এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তাঁদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে।
পুলিশ জানায়, লাশগুলোর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্তের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হবে। অন্য দুজনের পরিচয় পাওয়া না গেলে দাফনের জন্য সাইফুলের লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে পাঠানো হবে।