Samakal:
2025-02-27@18:54:24 GMT

লবণ বিষে নীল দক্ষিণের ২০ নদনদী

Published: 28th, January 2025 GMT

লবণ বিষে নীল দক্ষিণের ২০ নদনদী

বরিশাল বিভাগের নদনদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিভাগের অন্তত ২০টি নদীর পানি প্রায় শতভাগ লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। অথচ ১০ বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল চারটি। এমন পরিস্থিতিতে লবণাক্ত পানির প্রভাবে এরই মধ্যে বিভাগে ৫২ ভাগ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে ফসল উৎপাদন। আসছে দিনগুলোয় উৎপাদন আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বরিশাল মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, সেচের জন্য নদীর পানিতে ০ দশমিক ৭ ডিএস পার মিটার এবং মাটিতে ২ ডিএসের নিচে পার মিটার লবণাক্ততা থাকতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি চালানো গবেষণায় দক্ষিণাঞ্চলের নদীর পানিতে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ ডিএস পার মিটার ও মাটিতে সর্বোচ্চ ২৫ ডিএস পার মিটার লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। আগে সাগর সংলগ্ন নদীতে শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা পাওয়া যেত। এ নদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ হলো– আন্ধারমানিক, আগুনমুখা ও বিষখালী। বর্তমানে এই তিনটিসহ বিভাগের অভ্যন্তরীণ যেমন বরিশাল নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলা, কারখানা, ভোলা সংলগ্ন মেঘনা, পিরোজপুরের বলেশ্বরের মতো মোট ২০টি নদীর পানি শুকনো মৌসুমে লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। তবে বর্ষা মৌসুমে জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে লবণাক্ত পানি সরে যায়। 
মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বরিশাল দপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একীম মামুন বলেন, ‘জোয়ারে লবণ পানি ঢুকে নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে যায়। ১০ বছর আগে শুষ্ক মৌসুমে (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) সাগরসংলগ্ন তিন থেকে চারটি নদীতে লবণ পানি পৌঁছাত। সেটি এখন প্রতিবছর বৃদ্ধি পেতে পেতে অভ্যন্তরীণ প্রায় ২০টি নদীতে পৌঁছায়। কীর্তনখোলার পানিতে লবণের অস্তিত্ব মেলে ২০২১ সালে। নদীর পানিতে লবণ বাড়লে এর প্রভাব মাটিতেও পড়ে। মাটির লবণাক্ততা ৮ ডিএস পার মিটার অতিক্রম করলে তা ফসল উৎপাদনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।’ 

পটুয়াখালী মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মিত বৃষ্টিপাত ও গরম মৌসুমে তাপমাত্রা সহনীয় থাকলে লবণাক্ততার সমস্যা হয় না। কিন্তু প্রতিবছর মৌসুমের বিপরীত আবহাওয়া বিরাজ করে। বর্ষা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত হয় না। আবার গরমে তাপমাত্রা হয় অসহনীয়। নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ১০ বা ১২ ডিএস পার মিটার অতিক্রম করলে সংলগ্ন জমি চাষাবাদযোগ্যতা হারায়। এ কারণে লবণাক্ততা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ 

বরিশাল মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুষমা রানী হালদার বলেন, ‘গত কয়েক বছর মাটি ও পানি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুকনো মৌসুম তথা নভেম্বর মাস থেকে এখানে নদীগুলোয় লবণাক্ততা বাড়তে থাকে। ফলে এখানে পানি ও মাটির গুণাগুণ হ্রাস পাচ্ছে। পরীক্ষার পর এ খবর কৃষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়।’ 

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, বিভাগে চাষযোগ্য ৮ লাখ ২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৪ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর বা ৫২ শতাংশ লবণাক্ততায় আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সাগরপারের জেলা পটুয়াখালী। সেখানে ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৮০ হেক্টর বা ৩৯ শতাংশ জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এ ছাড়া সাগরপারের আরেক জেলা বরগুনায় ২৪ শতাংশ, ভোলায় ২৪ শতাংশ জমি লবণাক্ততার বিষের কবলে পড়েছে। লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমি সবচেয়ে কম ঝালকাঠি জেলায় মাত্র ১ শতাংশ। এ ছাড়া বরিশালে ৩  ভাগ ও পিরোজপুরে ৯ ভাগ জমি লবণাক্ততার কবলে পড়েছে। 
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুরাদুল হাসান বলেন, ‘বৃষ্টিপাত বেশি হলে নদী ও মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কিছু কমে এবং বৃষ্টি কম হলে আবার বাড়ে। তবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর চরমন্তাজের জমি স্থায়ীভাবে লবণাক্ততার দিকে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে এসব এলাকায় লবণ সহনশীল ফসল চাষ করতে হবে।’

দক্ষিণাঞ্চলে নদীর পানি ও জমির লবণাক্ততা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং উন্নয়ন সংগঠন হাঙ্গার প্রজেক্ট। বেলার বরিশাল সমন্বয়ক লিংকন বায়েন বলেন, পটুয়াখালীর নদনদীতে লবণাক্ততা তিন ভাগ থাকাকালে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা সতর্ক করেছিলাম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় এখন সেটা ৩৯ ভাগে পৌঁছেছে। ভবিষ্যতে লবণাক্ততা শত ভাগে উন্নীত হওয়া অসম্ভব কিছু না। 

হাঙ্গার প্রজেক্টের বরিশাল সমন্বয়ক নিগার আফরোজ মিতা বলেন, আগামী ১০ বছরে অবস্থাটা কী ভয়াবহ হবে, তা এখনই ভাবতে হবে। তখন ফসল উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসতে পারে। তাই সময়ক্ষেপণ না করে এখনই উত্তরণের পথ ঠিক করতে হবে। 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এস প র ম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ভিড়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেন হাট

হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট মধ্যবর্তী সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের আগমন বেড়ে যাওয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে। বনে প্রতিদিন হাজারো মানুষ প্রবেশ করায় বনের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় মানুষের অবাধ প্রবেশ ও ব্যাপক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কারণে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেন হাটে পরিণত হয়েছে।
২০০৫ সালে সাতছড়ি বনের ২৪৩ হেক্টর বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। সাত ছড়ার সমন্বয়ে গঠিত বলে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক বনকে সাতছড়ি বলা হয়। এ বনটি একটি সমৃদ্ধ বন হিসেবে পরিচিত। এই বনে চিত্রা উড়ন্ত টিকটিকি, মুখপোড়া হনুমান, উল্টোলেজি বানর, কালো ভালুক, উদয়ী পাকড়া বন্যকুকুর, মায়া হরিণ, এশিয়াটিক কালো ভালুক, মেছোবাঘসহ ২১ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বসবাস। এ বনাঞ্চলে ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ২০৩ প্রজাতির পাখি রয়েছে ও ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও সাপ অবমুক্ত করায় বনে এখন জীবের সংখ্যা বেড়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এতে বন যেন এখন হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে। বনের ভেতরে পিকনিক করতে আসা লোকজন ও পর্যটকরা প্লাস্টিক ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করেছে। লোকজন হইহুল্লোড় করার কারণে বনে বসবাসকারী জীবজন্তু এখন বন ছেড়ে পালিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। বনের ছড়ায় পর্যটকদের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হচ্ছে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় সেতু। 
মাধবপুরে পরিবেশবাদী এনজিও সংস্থা বাসার চেয়ারম্যান মুখলেছুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করে পশুপাখির জন্য বনে লাগানো হয় ফলদ বাগান। বিদেশি অর্থ সহায়তায় টেকসই বন ও জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বনের ভেতর ফলের গাছ রোপণ করা হয়। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা ও অবহেলায় ফলদ বাগান প্রকল্প তেমন সফল নয়। 
বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বনের ভেতর লোকজন যত কম যাবে, তাতে পরিবেশ নীরব থাকবে। এতে বন তত সমৃদ্ধ হবে। বনের ভেতর বসবাসকারী জীববৈচিত্র্য নিরাপদে বেড়ে উঠার পরিবেশ পাবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। অপরিকল্পিতভাবে বন এলাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ায় বনের ক্ষতি হচ্ছে। তারা বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেন সে নির্দেশনামতো কাজ করতে হয়। জাতীয় উদ্যান ঘোষণার কারণে সাতছড়ির প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় বনরক্ষীরা সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, পর্যটন মৌসুমে বিশেষত শীত ও বসন্ত ঋতুতে সাতছড়িতে মানুষের ভিড় খুব বেড়ে যায়। মানুষ বেশি আসার কারণে বনের জীববৈচিত্র্য ধরে রাখা এখন কঠিন। মানুষের প্রবেশ কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এ বিষয়ে চিন্তা করছে বন বিভাগ। কারণ, দিন দিন বনে যে হারে লোকের প্রবেশ বাড়ছে, এটা বনের জন্য অশনিসংকেত।
মৌলভীবাজার প্রকৃতি সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাতছড়ি বন বাংলাদেশের মধ্যে চিরহরিৎ সমৃদ্ধ বন। এ বনের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত মূল্যবান। তাই সাতছড়ি বনকে সমৃদ্ধ করতে বন বিভাগ খুবই আন্তরিক। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ