তরুণরা মনে করেন ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার পরিবেশের অন্তরায়
Published: 27th, January 2025 GMT
দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তরুণরা সবার আগে সংস্কার চান। তারা চান দুর্নীতি বন্ধ হোক; নাগরিকদের, বিশেষ করে নারীর অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত থাকুক। তারা নির্ভয়ে কথা বলার পরিবেশ চান। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার অবাধ পরিবেশ বজায় রাখার অন্তরায় বলে মনে করেন তাদের বড় একটি অংশ। তরুণদের অনেকেই মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ এক থেকে তিন বছর হওয়া উচিত। এক জরিপে জানা গেছে এসব তথ্য।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে যুবসমাজের ভাবনা ও প্রত্যাশা সম্পর্কে জানার জন্য সরাসরি ও অনলাইনে এই জরিপ করেছে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)। সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে’ শীর্ষক এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তুলে ধরেন বিওয়াইএলসির রিসার্চ, মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন ম্যানেজার আবুল খায়ের সজীব। দেশের ২৩টি জেলায় ১ হাজার ৫৭৫ তরুণ-তরুণী জরিপে সরাসরি অংশ নেন। এ ছাড়া অনলাইন জরিপে অংশ নেন ১ হাজার ৬৬৩ জন।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তরুণরা আগামীর বাংলাদেশ গঠনে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তা তুলে ধরাই এই জরিপের মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে তরুণদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসন, তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিপ্রয়াণ বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের চেয়ে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের মতামত প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ৭৮ শতাংশ তরুণ-তরুণী। ৪৬ দশমিক ১৫ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ১ থেকে ৩ বছর হওয়া উচিত। এর মধ্যে সরাসরি জরিপে এই মত দেন ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ও অনলাইনে এই মত দেন ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব মানসিক স্বাস্থ্যে
সরাসরি ও অনলাইন জরিপে ৭৫ দশমিক ১ ও ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে নিজেদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এমনকি ২ থেকে ৩ মাস ধরে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন, তাদের জন্য সামাজিক ও মানসিক কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন।
নিরাপদ নয় নারী
সরাসরি জরিপে অংশ নেওয়া ২১ শতাংশ ও অনলাইনে অংশ নেওয়া ৫৪ শতাংশ তরুণ নিশ্চিত নন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে কিনা। সরাসরি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৫ শতাংশ মনে করেন নারীরা নিরাপদ নয়। অনলাইনে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭০ শতাংশ মনে করেন বর্তমানে নারীরা নিরাপদ বোধ করছেন না।
শিক্ষার মান উন্নয়ন চায় তরুণরা
শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তরুণরা। ৭৯ শতাংশ তরুণ মনে করেন ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার অবাধ পরিবেশ বজায় রাখার অন্তরায়। সরাসরি জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ তরুণ মনে করেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিশ্চিত করে। তবে অনলাইন জরিপের ক্ষেত্রে ৭৯ দশমিক তরুণ তা মনে করেন না।
বেড়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
সরাসরি জরিপে ৮৬ শতাংশ ও অনলাইনে অংশগ্রহণকারীদের ৩৯ শতাংশ মনে করেন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে। এ ছাড়া সরাসরি জরিপে প্রায় ৬৯ শতাংশ ও অনলাইনে ৮৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা উচিত নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিওয়াইএলসির নির্বাহী পরিচালক তাহসিনা আহমেদ বলেন, দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যুবসমাজ সবার আগে সংস্কার চায়। উন্নয়ন ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ চায়। তারা বলেছে, সংস্কার কার্যকর করার জন্য সরকারকে সময় দিতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকারের সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে তারা কাজ করতে চায়।
বিওয়াইএলসির স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার মুনিরা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে পারছে না। এ সমস্যার সমাধানে বিওয়াইএলসি তাদের প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে সমস্যা সমাধান, সংঘাত নিরসন, এবং জনসমক্ষে কথা বলার মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো অন্তর্ভুক্ত করছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শ্রম বাজারের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য স সরক র র র র জন পর ব শ র পর ব দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসির নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর
তারল্যসংকট, কারসাজি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে গত বছরজুড়ে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম ছিল খুবই দুর্বল। চলতি বছরও তারল্যসংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা শেয়ারবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি এক জরিপে অংশ নিয়ে শেয়ারবাজার সম্পর্কে এমন মতামত বা ধারণা তুলে ধরেছেন বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেশির ভাগের। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৯ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের কোনো আস্থা নেই। সাড়ে ৩৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের কিছুটা আস্থা আছে এই নেতৃত্বের প্রতি। মাত্র ১০ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাঁরা আস্থাশীল।
দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে-২০২৫’ নামে এই জরিপ করেছে। সম্প্রতি এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তাতে শেয়ারবাজার নিয়ে এসব মতামত উঠে এসেছে।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই জরিপ করা হয়। জরিপে ১০১ জন তাঁদের মতামত দেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সেবা খাত, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগ ব্যাংকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ট্রেডার বা লেনদেনকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
শেয়ারবাজারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাত নিয়েও বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করে আসছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী। জবাবে ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, এ বছর অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ৫৯ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ৫৬ শতাংশ ব্যাংক খাতের সংকটকে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাত সংস্কারে যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা ফিরবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাড়ে ৬৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, এসব নীতি গ্রহণের ফলে কিছুটা আস্থা ফিরবে।
জরিপে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর কোন বিষয়টি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, জবাবে প্রায় ৩৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের ওপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নবগঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে কোনটি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ২৮ শতাংশ মতামতকারী জানিয়েছেন, কারসাজির দায়ে কারসাজিকারকদের যে জরিমানা করা হয়েছে, বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চলতি বছর শেষে পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬১ শতাংশই এ ধারণা পোষণ করেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মতামত প্রদানকারী বলেছেন, চলতি বছর শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো। এরপরের অবস্থানে থাকবে ব্যাংক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ মনে করেন শেয়ারবাজারে প্রবৃদ্ধিতে চলতি বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে ব্যাংক খাতের। আর ৩৬ শতাংশ মনে করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে টেলিকম খাতের। আর ২৭ শতাংশ মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ভালো অবদান রাখবে।
শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন চলতি বছরও বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬৪ শতাংশই এই ধারণা পোষণ করেন। আর ১৫ শতাংশ মনে করেন লেনদেন ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কেউই মনে করেন না এ বছর শেয়ারবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি থাকবে।