‘ছোট ছেলে এখনও বলে মা, গুলি আসে গুলি’
Published: 27th, January 2025 GMT
জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজনের হৃদয়ের ক্ষত এখনও দগদগে। প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় কেউ কেউ আজও ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। তাদের একজন খায়রুন নাহার। গত ১৯ জুলাই ঢাকার উত্তরার ভাড়া বাসার চারতলার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় তাঁর মেয়ে নাইমা সুলতানা (১৬)। সে মাইলস্টোন স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। তার শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি মা-বাবা-ভাই-বোন। খায়রুন নাহার বলেন, ‘নাইমাকে হারিয়ে ওর বড় বোন আর ছোট ভাই এখনও ট্রমাতে আছে। ছোট ছেলে মাঝেমধ্যে বলে ওঠে– মা, গুলি আসে, গুলি। আমরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করেছে প্রথম আলো। ‘জুলাই-জাগরণ প্রদর্শনী’ শীর্ষক এ আয়োজনে গতকাল সোমবার আলোচনা সভা ছিল। সভায় সন্তানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কথাগুলো বলেন খায়রুন নাহার।
৫ আগস্ট শহীদ ছয় বছরের জাবির ইব্রাহিমের মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘তিন ভাইবোনের মধ্যে ছোট ছিল আমার জাবির। তাকে ছাড়া আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি। পরিবারের ১২ জন ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে যোগ দিই। কিন্তু মিছিলের সেই আনন্দ শোকে পরিণত হয়। জাবির তার বাবার হাত ধরে হাঁটছিল। বাবার কোলেই সে গুলিবিদ্ধ হয়।’
শহীদ শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফের মা জারতাজ পারভিন বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স ছিল ১৭ বছর। দুই মাস পর ও আঠারোতে পা দিত। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আমার ভোটার আইডি কার্ড চাইত। না দেওয়ায় রাগ করে বলত, দুই মাস পর আমার ১৮ হবে। আমিও ভোটার আইডি পাব। কিন্তু তার আগেই ওর ডেথ সার্টিফিকেট এসে গেল!’
সভায় আরও কথা বলেন, শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত, জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবীর হোসেন, মাহমুদুর রহমান সৈকতের বড় বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। তারা নতুন বাংলাদেশে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। সভা সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সুমনা শারমীন।
গত ২৪ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শহীদদের ব্যবহৃত সামগ্রী– কারও রক্তমাখা পরিচয়পত্র, কারও গিটার, কারও আঁকা ছবি। আরও রয়েছে পত্রিকা ও অনলাইন থেকে আলোচিত সংবাদ এবং অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই গণহত য
এছাড়াও পড়ুন:
রোজা শুরুর আগেই লেবু শসা ও বেগুনে উত্তাপ
অন্য বছরের তুলনায় এবার রোজার আগে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বলা চলে এক প্রকার স্বাভাবিক। তবে কয়েকটি পণ্যে রোজার আঁচ লেগেছে। বিশেষ করে এ তালিকায় রয়েছে লেবু, বেগুন, শসাসহ ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন পণ্য। চাহিদা বাড়ার সুযোগে পণ্যগুলোর দর কিছুটা বেড়েছে।
শুক্রবার ছুটির দিনে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার চাঁদ দেখা গেলে রোববার থেকে শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। এর আগে সবাই অগ্রিম বাজার করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এর কিছুটা প্রভাবও পড়েছে বাজারে।
খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন লেবুর মৌসুম নয়। ফলে প্রায় এক মাস ধরে দর বাড়তি। এ ছাড়া বেগুন, শসাসহ যেগুলোর দাম বেড়েছে তার মূল কারণ ক্রেতাদের বেশি পরিমাণে কেনা। রোজার আগমুহূর্তে প্রতিবছরই এসব পণ্যের দর বাড়ে। তবে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনের দিনগুলোতে দর বাড়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তারা।
শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবু। রমজানে ইফতারে কমবেশি সবাই শরবত খাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ সুযোগে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে প্রতি হালি শরবতি বা সুগন্ধি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং আকারভেদে অন্য লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাসখানেক আগে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে কেনা গেছে লেবুর হালি। তবে এখনও বাড়লেও গত বছরের এ সময়ের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে দাম।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি লেবু ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ সমকালকে বলেন, লেবুর উৎপাদন কম। কারণ, এখন লেবুর মৌসুম নয়। তাছাড়া অনেক দিন ধরে বৃষ্টিপাত নেই। এ জন্য ফলন ভালো হচ্ছে না। সেজন্য বাজারে লেবু কম আসছে। কিন্তু রোজার কারণে মানুষ আগেভাগে লেবু কিনছেন। মূলত এ জন্য দর বাড়তি।
বাজারে এখন ভরপুর শসা রয়েছে। হাইব্রিড ও দেশি শসার পাশাপাশি ছোট আকারের খিরাও পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসা ও খিরার কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেনা গেলেও দেশি জাতের শসা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এসব শসা অন্তত ১০ থেকে ৩০ টাকা কমে কেনা গেছে। অবশ্য, এ দর গেল রমজানের চেয়ে বেশ কম। গত বছর এ সময় শসার কেজি সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ছুঁয়েছিল।
এখনও টমেটোর ভর মৌসুম চলছে। ফলে বাজারে দেশি টমেটোর পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। সেজন্য দাম এখনও নাগালে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়।
বেগুনি তৈরি করতে লম্বা বেগুনের দরকার হয়। সেজন্য রোজার সময় লম্বা বেগুনের চাহিদা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়েছে দামে। পাঁচ-ছয় দিন আগেও প্রতি কেজি লম্বা বেগুন কেনা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রায় দ্বিগুণের মতো দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লায় ভ্যান থেকে কিনতে গেলে ক্রেতাকে কেজিতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে অন্তত আরও ১০ টাকা। বছরের অন্য সময়ে গোল বেগুনের দর বেশি থাকলেও এখন স্বাভাবিক। প্রতি কেজি কেনা যাবে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, এখনও শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর। লম্বা বেগুনের চাহিদা বেশি। এ কারণে কেউ কেউ দর বেশি নিচ্ছে। তবে অন্য জায়গায় দর বাড়লেও কারওয়ান বাজারে বাড়েনি বলে দাবি করেন এই বিক্রেতা।
গাজরের সরবরাহ রয়েছে বেশ ভালো। ফলে দর বাড়ার তালিকায় উঠতে পারেনি মিষ্টি জাতীয় সবজিটি। প্রতি কেজি গাজর কেনা যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম দরে মিলছে পেঁয়াজ। মানভেদে দেশি প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
রমজানে কাঁচামরিচের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এবার ঝালজাতীয় পণ্যটির দর নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাস দুই-তিনেক ধরে এ দরের আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে মরিচ।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান বিকাশ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, রোজা উপলক্ষে রোববার থেকে ঢাকা মহানগরে ১০টি বিশেষ তদারকি দল মাঠে নামবে। তারা বিভিন্ন বাজারে তদারকি করবে। রমজানজুড়ে চলবে এ তদারকি কার্যক্রম। রোববার সকালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কারওয়ান বাজারে এ তদারকি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।