তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে কাজ করছে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ। এর ধারাবাহিকতায় ২২ জানুয়ারি রাজবাড়ী শেরেবাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে উদ্বোধন হয় বই পড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫। স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মসূচির বিস্তারিত...
একটি ভালো বই সব সময়ের উৎকৃষ্ট বন্ধু। জ্ঞান ও চিন্তার দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি সমৃদ্ধ জীবনের জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। বই পড়ার অভ্যাস কল্পনাশক্তি বাড়ায়, মানুষকে চৌকস করে তোলে; যা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। একজন ভালো পাঠক সহজেই লেখক হয়ে উঠতে পারেন। যত বেশি বই পড়া হবে, লেখার দক্ষতা ততই উন্নত হবে। বইয়ের ইতিবাচক প্রভাবে বদলে যেতে পারে জীবন। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে শিশু ও তরুণদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে কাজ করছে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ। এরই ধারাবাহিকতায় রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশ হাতে নিয়েছে বই পড়া প্রতিযোগিতা কর্মসূচি ২০২৫।
‘স্কুল পরিভ্রমণ’ শিরোনামে এ কর্মসূচির প্রথম অভিযান ছিল রাজবাড়ী শহরের ঐতিহ্যবাহী শেরেবাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ গল্প নিয়ে শুরু হয়েছে এই যাত্রা। প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। বই পড়া নিয়ে তাদের অনুভূতিও ছিল অনন্য। তারা বলছে, আমরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে ভালো বইও পড়তে চাই। বই পড়ার চর্চা অব্যাহত রাখতে চাই। এমন প্রতিযোগিতা আমাদের বই পড়তে আরও বেশি উৎসাহিত করে। আমরা চাই মাঝেমধ্যে যেন এমন আয়োজন করা হয়।
আলোচনা পর্বে রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের সভাপতি কমল কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের উপদেষ্টা সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, উপদেষ্টা রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবীব, রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের পাঠচক্র সম্পাদক কলেজশিক্ষক আব্দুর রব সুমন, শেরেবাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম, সহকারী প্রধান শিক্ষক অরুণ প্রামাণিক, সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান, তপন কুমার পাল, আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রবিউল রবি প্রমুখ। আলোচনা শেষে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সেরা আটজনকে পুরস্কৃত করা হয়। সেরা আট শিক্ষার্থী হলো– সিনহা আক্তার, আয়শা আক্তার, লাবণ্য আক্তার, সুমাইয়া আক্তার, রাখী রানী কুণ্ডু, জিমিয়া, রাইশা ও ওয়াসফিয়া খানম।
রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশের উপদেষ্টা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বই পড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য রাজবাড়ী সুহৃদ সমাবেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। ছাত্ররা এখন বই পড়ার পরিবর্তে ইন্টারনেট, ফেসবুকিং-এ বেশি আসক্ত। সুহৃদ সমাবেশ, রাজবাড়ীর এ উদ্যোগ ছাত্র-ছাত্রীদের বইমুখী হতে সাহায্য করবে। বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করবে। জ্ঞান অর্জনের একমাত্র সর্বজনীন মাধ্যম বই। বই পড়া ছাড়া কোনোভাবেই জ্ঞান সম্পন্ন হতে পারে না। বইয়ের বিকল্প বই। বই আমাদের আলোকিত করে। বই আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে। বই আমাদের ভাষাকে পরিশীলিত করে, ভাষাকে শাণিত করে। বই পড়লে আমরা শব্দ জগতের এক মূল্যবান খনির সন্ধান পাই। বই না পড়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, এমন মানুষ খুব হাতে গোনা। বই পড়লে মন ভালো হয়ে যায়। মন ভালো থাকলে আরও ভালো হয়ে যায়। বই আনন্দের অপার উৎস। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বইয়ের নেশা ধরিয়ে দিতে হবে। একবার যদি বইয়ের অপার সৌন্দর্যের সন্ধান কেউ পায়, তাহলে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। তার জীবন হবে সাফল্যমণ্ডিত। তিনি আরও বলেন, স্কুলে পাঠাগার থাকা খুব দরকার। পাঠাগারের বদৌলতে ছাত্রছাত্রীরা আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের বই কেনার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
অন্য বক্তারাও এমন আয়োজনের জন্য সুহৃদ সমাবেশকে সাধুবাদ জানান। তারা জানান, বই পড়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। বই পড়লে মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হয় এবং ব্রেন সচল থাকে। একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে শরীরের প্রতিটি অংশের ব্যায়াম প্রয়োজন। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয় এবং মস্তিষ্ককে স্বাস্থ্যকর ও সুস্থ রাখে। স্বাস্থ্যগত সুবিধা থেকে শুরু করে স্মার্টনেস বই পড়ার এমন অসংখ্য সুবিধা আছে; যেগুলো আমাদের নিয়মিত বই পড়তে উৎসাহিত করে। এ ছাড়া নিয়মিত বই পড়লে বিভিন্ন বিষয়ে জানার পরিধি বাড়ে। বই পড়া শুরু না করলে বিষয়টি কারও কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। একবার শুরু করলে এটি অভ্যাসে পরিণত হবে। আয়োজন সফল করতে সহযোগিতা করেন রাজবাড়ীর সুহৃদ মানিক হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মিলন, সোহাগ প্রমুখ। পুরো আয়োজন সমন্বয় করেন সমকালের জেলা প্রতিনিধি সৌমিত্র শীল চন্দন।
প্রাথমিকভাবে একটি স্কুলে প্রতিযোগিতার আয়োজন শুরু হলো। ‘স্কুল পরিভ্রমণ’ নামে এ কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে। এর সার্বিক সহযোগিতায় থাকবেন রাজবাড়ীর সুহৃদরা।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেবীগঞ্জে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লেখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এই লেখা সাধারণ মানুষের নজরে আসে। তবে, কারা এই স্লোগান লিখেছেন, তা কেউ দেখেননি।
পৌরসভার শহীদ আব্দুল মান্নান সড়ক সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ চত্বর, নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের দেয়ালে লাল, কালো ও নীল রঙের কালি দিয়ে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় শেখ হাসিনা’ এবং ‘শেখ হাসিনা তুমি আস্থা’- এমন স্লোগান লেখা হয়েছে।
এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে আজ দুপুর ১টায় দেবীগঞ্জের বিভিন্ন দেয়ালে লেখা স্লোগানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয়। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাতের আঁধারে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লিখছে তারা। উপজেলা ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সজাগ রয়েছে।"
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর শুধু দেবীগঞ্জ নয়, পুরো পঞ্চগড়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এসব দেওয়াল লিখন লক্ষ্য করা গেলেও প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এসব লেখা ’২৪ বিপ্লবের চেতনাকে ম্লান করার চেষ্টা করছে। যা রুখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান- তাদের (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের অপতৎপরতা রুখে দিতে পঞ্চগড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”
দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোয়েল রানা মোবাইলে বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। এখনি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। বিষয়টি দেখছি আমরা।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ