কুয়াশায় ঘেরা ধবধবে সাদাটে প্রকৃতি, সামনে যতটুকু দেখা যায় সবই এতটা শুভ্র, যেন অন্ধকারের মতোই গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে সূর্য। আলোকিত দিন আদৌ আসবে এমনটা ভাবাও দুষ্কর। তীব্র হিম বাতাসে উড়িয়ে নিচ্ছে চাদরের আঁচল। হুহু করে ঢুকে যাচ্ছে শীতল পরশ, কাঁপছে শরীর, কাঁপছে হৃদয়।
তবুও কোনো হেলদোল নেই রুপার। দু’চোখ বেয়ে তুষারপাতের মতো ঝরছে অশ্রুকণা। নীরব নিথর কুয়াশাঘেরা ভোরে একাকী একটা অটোরিকশার যাত্রী হয়ে ছুটছে গাঁয়ের পথে। যেখানে কেটেছে তাঁর শৈশব-কৈশোর, সেই মধুময় মিষ্টি সময়; কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না, এত বেশি দায়িত্ব ছিল না।
কত আশা আর কতই না স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল এই শহরে। একজন খাঁটি গিন্নি হবে। মায়ের মতো খুব অধিকার থাকবে সংসারে। স্বামী, ছেলেমেয়ে সবাই হবে তাঁর বন্ধু। খোলা আকাশের মতো সম্পর্কে আবদ্ধ থাকবে। যেখানে কেউ কারও কাছে অচেনা হবে না। ছোট ছোট সব দুঃখ পাড়ি দেবে অনায়াসে সবাই একসঙ্গে। অবশেষে দেখা গেল, খোলা আকাশে রুপা হলেও বাকি সবাই ছিল একেকটা বদ্ধ খাঁচায় আবদ্ধ পাখি। দিন শেষে যে যার নিজস্ব জগতে বিচরণ করছে। আকাশের অসীমের ঠিকানা যে কারও নিজের মনে হয় না। ক্ষণিকের উড়িবার আনন্দ মাত্র। যখন রুপা আবিষ্কার করল এমন নিগূঢ় সত্য, তখন অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে।
স্বামী নিলয়ের সব অজানা জেনেও মানিয়ে নিয়েছিল সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে। যা-ই হোক, ওদের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে হবে। প্রত্যেক মায়েরই দুটি সত্তা। এক.
বিয়ে করেছি। না চাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে না।
থিতু হয়ে বসেছিল রুপা। নিরুত্তর থেকে শুধু একটা কথাই ভেবেছে, আসলেই কি আমাদের যা ভালো লাগে, তা-ই করা উচিত? আমার সব ভালো লাগা তো কবেই বিসর্জন দিলাম! আসলে মায়েদের স্পষ্ট উত্তর থাকে না। মায়ের যা ইচ্ছে তা করার যোগ্যতা থাকে না। মায়েরা চাইলেও নিজের সুখের জন্য স্বার্থপর হতে পারে না। বাড়ি ফেরার পর নিলয় যখন অভিযোগ তুলল– তোমার আশকারা পেয়ে মেয়ে এমনটি করেছে। তুমি সঠিকভাবে শিক্ষা দিতে পারনি। মেয়ে মানুষ হয় মায়ের গুণে। রুপা তখনও নিরুত্তর। আসলে সবাই হয়তো ঠিক বলছে, সবটা রুপার ভুল।
শোঁ শোঁ শব্দ করে বইছে হিমেল হাওয়া। এগিয়ে চলছে রুপার দীর্ঘ পথ। ঘন কুয়াশায় জড়ানো ভোরে মায়ের আঁচলের নিচে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে হবে। মায়ের শরীরের ঘ্রাণ আর উষ্ণতা অনেক বছর নেওয়া হয় না। আজ মা বেঁচে থাকলে হয়তো রুপা অনেক প্রশ্ন করত। দম বন্ধ হওয়া এমন জীবননির্ভর কঠিন প্রশ্নের উত্তর মায়েরাই জানে। আর কেউ দিতে পারবে না।
সুহৃদ গোপালগঞ্জ
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৫ যাত্রী নিহত
জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিতে থাকা পাঁচ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের কড়োগ্রাম এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- এনাম ফকির, সিএনজি চালক আব্দুর রাজ্জাক, আরিফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল করিম আলাল।
জামালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান জানান, মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী একটি সিএনজি অটোরিকশাকে মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সিনএজি অটো রিকশায় থাকা ঘটনাস্থলেই চার জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
উদ্ধারকৃতদের মধ্য এনাম ফকির স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায়। এনামের বাবা আমজাদ ফকির গুরুতর আহত অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে এখান থেকে চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।”
ঢাকা/শোভন/এস