আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার আদলে ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস কমিশন করতে পারি
Published: 27th, January 2025 GMT
কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ফরহাদ মজহার দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক তাত্ত্বিক। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা-উবিনীগ এবং নয়াকৃষি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সম্পাদনা করছেন ‘চিন্তা’। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঔষধশাস্ত্রে স্নাতক এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউ স্কুল ফর সোশ্যাল রিসার্চ থেকে অর্থশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘গণঅভ্যুত্থান ও গঠন’, ‘মোকাবিলা’, ‘এবাদতনামা’, ‘সাম্রাজ্যবাদ’, ‘মার্কস, ফুকো ও রুহানিয়াত’, ‘ক্ষমতার বিকার’ ইত্যাদি। ফরহাদ মজহারের জন্ম ১৯৪৭ সালে নোয়াখালীতে। সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলির হাজারীপাড়ায় উবিনীগের আরশিনগর বিদ্যাঘরে ফরহাদ মজহারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন সমকালের প্রতিনিধি সেলিম সরদার।
সমকাল: ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশ কোন পথে এগোচ্ছে?
ফরহাদ মজহার: আমি ভালোই দেখছি। আমরা যদি জনগণের ইমোশন, তারা কী চায় তা প্রপারলি অনুধাবন করতে পারি তাহলে ইতিবাচকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনেক সম্ভাবনা আছে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার আন্তরিকতা এবং তা সমাধানের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ওপর থেকে অগণতান্ত্রিকভাবে চাপিয়ে দিলে হিতে বিপরীত হবে। গণঅভ্যুত্থানের মৌলিক অভিপ্রায় হচ্ছে, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করতে হবে। কাটাছেঁড়া করা বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট সংবিধান অবশ্যই বাতিল করতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্রের জন্য গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বাতিলের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। বাহাত্তরের সংবিধান মানা হলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী সংবিধানকে সমর্থন দেওয়া হবে। ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বাহাত্তরের সংবিধান কার্যত পাকিস্তানি আমলের জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা তৈরি। কারণ সত্তরের নির্বাচনে যারা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের মাধ্যমেই গণপরিষদ গঠন করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া সেই পাকিস্তান আমলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। স্বাধীন দেশে নতুনভাবে গণপরিষদ গঠন না করে সংবিধান তৈরি করা যায় না।
সমকাল: আপনি যে গঠনতন্ত্রের কথা বলছেন, সেখানে আপনি কী কী দেখতে চান?
ফরহাদ মজহার: প্রথমত, ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ বা আইন প্রণয়নের অধিকার রাষ্ট্রের থাকবে না। ব্যক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, মানুষের জানমাল-জীবিকা বিনষ্ট করে এমন কোনো আইন বা নীতি রাষ্ট্র প্রণয়ন করতে পারবে না। তৃতীয়ত, আমাদের প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রাণ , প্রাণবৈচিত্র্যসহ প্রাকৃতিক যত সম্পদ আছে, সামষ্টিকভাবে জনগণ সেসব সম্পদের মালিক। প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রাণ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিনষ্ট ও বিষাক্ত করার কোনো আইন বা নীতি রাষ্ট্র গ্রহণ করতে পারবে না। আমাদের আবাস এবং সম্পদ যেন কোনোভাবে বিষাক্ত না হয়, নষ্ট না হয়, বিদেশি শক্তি লুট করতে না পারে– তা নিশ্চিত করতে হবে। এই সম্পদকে পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়ন এবং অবাধ বাজার ব্যবস্থার বিপরীতে শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে রূপান্তর করাই এখনকার কাজ। আইন, আদালত, প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জনগণের আর্থসামাজিক, আত্মিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে শক্ত গণতান্ত্রিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে। এই দেখুন, কত অল্প কথায় আমরা নতুন বাংলাদেশের গঠনতান্ত্রিক রূপকল্প নির্ণয় করতে পারি। আগামীর বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, সেটা এভাবেই ঠিক করতে হবে।
সমকাল: জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনীতি নিয়ে আপনার অভিমত কী?
ফরহাদ মজহার: জনগণ ও রাজনৈতিক দল এক না। নতুন গঠনতন্ত্রে জনগণই নির্ণয় করে দেবে কারা আসলে রাজনৈতিক দল, কারা মাফিয়া আর লুটেরা শ্রেণির লুটপাটের জবাব। গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সব ক্ষেত্রেই নতুন করে শুরু করতে হবে। বিশেষত তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কথা শুনতে হবে– তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। এই ঈশ্বরদীর জনগণকেও বলতে দিতে হবে– দেশের আইনকানুন কীভাবে থাকলে তারা বাঁচতে পারবে। জনগণের কথা শুনতে হবে। কমিশন বানিয়ে ওপর থেকে এলিট বা অভিজাত শ্রেণির কথাবার্তার তামাশা করে লাভ নেই। জনগণের মনের ভাষা বুঝতে হবে।
সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় ছয় মাস পূরণ করেছে। এদের নিয়ে কিছু বলবেন?
ফরহাদ মজহার: আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই সরকার সাংবিধানিক সরকার নয়। বর্তমান সংবিধানে এ রকম কোনো সরকার গঠনের নিয়ম নেই। এ সরকার অসাংবিধানিক। তা ছাড়া বিদ্যমান সংবিধান রক্ষায় শপথ নিয়ে গঠিত সরকার সংবিধান বাতিল বা সংস্কার করতে পারে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মূলত সেনাবাহিনীর সমর্থনের ভিত্তিতে কাজ করছে। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোকেও শুরু থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে যুক্ত করা যেত। তারা ন্যাশনাল গার্ডিয়ান কাউন্সিলের ভূমিকা রাখতে পারত। সেটা হলে এখন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসা সহজ হতো। মনে রাখতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সময়ের জন্য এ দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু শুধু সেনাবাহিনীর সমর্থনে কোনো সরকার ব্যবস্থাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সোসাইটিতে পাওয়ারফুল অ্যাক্টিভিস্ট না থাকলে দেশ এগোবে না।
সমকাল: এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর কী করার আছে?
ফরহাদ মজহার: গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সেই সামষ্টিক অভিপ্রায়কে মান্য করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। কিন্তু বিএনপি এখন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় প্রসঙ্গে বিএনপির কথা যদি বলি, তাহলে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপি এখন যা করছে তা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হওয়া জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিএনপি সতর্ক না হলে এ দেশ ক্রমেই গৃহযুদ্ধের দিকে এগোবে।
সমকাল: আপনি নয়াকৃষি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে কৃষকদের পরিস্থিতি কী?
ফরহাদ মজহার: আমরা প্রায় তিন লাখ কৃষক পরিবার নিয়ে কাজ করি। দীর্ঘকাল ধরে বিপুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা অগ্রসর হয়েছি। একেকটা পর্যায়ে আমাদের কাজ বেড়ে গেছে। যদি আমরা জনগণের সরকার গঠন করতে সক্ষম হই তাহলে এই কৃষকদের নিয়ে অনেক বড় কাজ করার ইচ্ছা আছে। সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে। কারণ ড.
সমকাল: দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে এই সরকারকে কতদিন সময় দেওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?
ফরহাদ মজহার: এটা আগে থেকে বলা মুশকিল। আমি যতটুকু জানি, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীতে চিন্তাশীল নেতা আছেন, যারা জনগণ নিয়ে ভাবেন। অনেকে বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি, তাদের ভালোর জন্য কাজ করি। ফলে এ সরকার যতদিন ভালো কাজ করবে, আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাইনি। হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, এই সরকারকে তারা সমর্থন, সহযোগিতা করবেন। এটা বিচক্ষণ নীতি। আমরা ইসলামী সরকার চাইছি বলে ভারত যে ক্যাম্পেইন করছে, এটা ভুল ধারণা। যতটকু বুঝি, চরমোনাই পীরের যে দল, তারাও চাইছে এই সরকার দীর্ঘকাল থাকুক।
সমকাল: নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কী বলবেন?
ফরহাদ মজহার: নির্বাচনের জন্য যখনই কোনো দল অযথা চাপ দেবে তখন আপনি বুঝবেন, সেই দলের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমরা কেমন দেশ চাই– জনগণের কাছ থেকে তার রায় নিতে হবে। গঠনতন্ত্র জনগণের ইচ্ছাকে ধারণ করে, আর আইন জনগণের ইচ্ছাকে আইনি ভাষায় ব্যক্ত করে।
সমকাল: আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মূল্যায়ন করুন। ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দল এভাবে ধসে পড়ল কেন?
ফরহাদ মজহার: পপুলারিজমে ভর করে যে ফ্যাসিজম গড়ে উঠেছিল, এটা যে দুর্বল এবং ঠুনকো, তা শেখ হাসিনার মাথায় ছিল না। ছাত্রদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, তাদের যে রাজনৈতিক কৌশল, এর শক্তি সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে ছাত্রদের এই প্রজ্ঞা ও কৌশলের হাতে; পরাস্ত হয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে। বাকশাল থেকে হাসিনা সরকার পর্যন্ত আমরা দীর্ঘকাল থেকে এই ফ্যাসিজমের সমালোচনা করছি। ছাত্র-তরুণদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। পলিটিক্যাল এডুকেশন যে এ রকম একটি পরিস্থিতিতে যেতে পারে– এটা শেখ হাসিনা অনুমানই করতে পারেননি।
সমকাল: শেখ হাসিনাকে অনেক ঝানু রাজনীতিবিদ বলা হতো। তিনি বুঝতে পারলেন না কেন?
ফরহাদ মহজার: শেখ হাসিনা যখন ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্যক্তিগত ইগোতে গেছেন, যখন ড. ইউনূস নোবেল পেয়েছেন বলে তাঁকেও নোবেল পেতে হবে, এমন হাস্যকর বিষয় সামনে আসে; তখন তাঁর প্রজ্ঞা সম্পর্কে সাধারণ মানুষও বুঝতে পেরেছে। তিনি রাজনৈতিক দল, ব্যবস্থা, ক্ষমতা প্রভৃতি সামষ্টিক বিষয়কে ব্যক্তিগত বিষয়ে পরিণত করেছিলেন। এর পরিণতি এখন তিনি ভোগ করছেন।
সমকাল: আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবার ফিরে আসা সম্পর্কে কিছু বলুন। আমরা কি সংশোধিত আওয়ামী লীগ দেখতে পাব?
ফরহাদ মজহার: আমি মানুষে বিশ্বাস করি। এটা সংশোধনের ব্যাপার না। যখনই সিস্টেমটা আমরা শক্ত করব, তখন এই শক্ত ব্যবস্থার সুফল আওয়ামী লীগ নিজেও দেখবে। আওয়ামী লীগেরও অনেকের মধ্যে পরিবর্তন হবে।
সমকাল: আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিও উঠছে।
ফরহাদ মজহার: আওয়ামী লীগ দল ও দলটির নেতৃত্বাধীন সরকারের মধ্যে অপরাধীদের অবশ্যই শনাক্ত করতে হবে ও শাস্তি দিতে হবে। গত দেড় দশকে যেসব অপরাধ হয়েছে, তার ন্যায়বিচার হতে হবে। তবে আমি একতরফা বিচারের পক্ষপাতী নই। তারা যেন মনে বল পায়, ন্যায়বিচারে আস্থা রাখে, সেই পরিবেশ তৈরি করা দরকার। তাদের মব ট্রায়ালের কাছে ছেড়ে দেওয়া ভুল হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিগত শাসনামলে অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা নেই।
সমকাল: একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের অপরাধীদের শাস্তি হবে এবং দলটির মধ্যে অনুশোচনাও আসবে– এমন বিচার কি সম্ভব?
ফরহাদ মজহার: বিচারের আগে আমরা নেলসন ম্যান্ডেলার স্ট্র্যাটেজি একটু ভাবতে পারি। আমি বিনয়ের সঙ্গে চিন্তা করতে বলব, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের আদলে একটি ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস কমিশন করতে পারি কিনা। আওয়ামী লীগের নেতা যারা ভুল করেছেন, তাদের বলব– আসেন, আমরা ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস কমিশনে যাই। আমি একতরফা বিচারের পক্ষে না। সত্য যখন আমরা জানি, তখনই কিন্তু ন্যায়বিচার হয়। আর যখন আমরা সত্য জানি না, তখন আপনাকে আমি যতই শাস্তি দিলাম, মনে হয় শাস্তিটা ঠিক হয়নি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সমকাল: তরুণদের কি এ ব্যাপারে ধারণা রয়েছে?
ফরহাদ মজহার: বাংলাদেশের তরুণরা একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। তার মানে সমাজ, ইতিহাস ও বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি ও জানাশোনা অনেক গভীর। তা ছাড়া বাংলাদেশের তরুণরা তো একটি অ্যান্টি কলোনিয়াল, অ্যান্টি ইম্পেরিয়ালিস্ট মুভমেন্টের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘকাল তারা ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
সমকাল: আপনি এখন সারাদেশে ঘুরছেন। সাধারণ মানুষ আগের চেয়েও বেশি আগ্রহ নিয়ে আপনার কথা শুনছে। তার আগে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় নিয়মিত বিরতিতে আপনি ঈশ্বরদী এসেছেন। এখানকার মানুষ, এখানকার পরিবেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ফরহাদ মজহার: দেখুন, ঈশ্বরদীতে আমরা বহু বছর ধরে উবিনীগের মাধ্যমে চলাফেরা, বসবাস করি। আমরা তো এখন এই সমাজেরই একজন। এখানকার ভূমি খুবই উর্বর। এই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের জন্য যথাসম্ভব ভালো কিছু করার প্রচেষ্টা আগেও যেমন ছিল, এখনও রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা যদি গণমুখী হয়, তাহলে ঈশ্বরদীর মাটি ও মানুষের জন্য আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
সমকাল: অনেক ব্যস্ততার মাঝেও এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ফরহাদ মজহার: আমার মতো নগণ্য মানুষের সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাপ করার জন্য আপনাকে ও সমকালকে ধন্যবাদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন গঠনতন ত র ব যবস থ জনগণ র র র জন ক ত কর পর ব শ র জন য ক জ কর ন র জন আওয় ম অপর ধ ব এনপ আগস ট ক ষমত সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
১২নং ওয়ার্ড কমিটিতে ফ্যাসিবাদী দোসরের জায়গা হবে না : সজল
বিগত সাড়ে ১৫টি বছর আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি কোনদিন চিন্তা করতে পারিনি যে এই ১২ বার একাডেমী স্কুলে আমরা যুবদলের কর্মী সভা করবো। আল্লাহ আমাদের রহমত করেছে এদেশের ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ১২নং ওয়ার্ড যুবদলে আমাদের সাংগঠনিকভাবে দুর্বলতা আছে।
আমাদের সাংগঠনিকভাবে যুবদলকে শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু অতীতে এখানে যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসররা ছিল তারা কিন্তু জনগণের মেন্ডেট নিয়ে ছিল না। বার একাডেমিতে খানপুরবাসী বারবার ভোট দিয়ে বিএনপিকে বিজয়ী করেছিল। ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এই স্কুল থেকে কোনদিনই জয়লাভ করতে পারেনি।
একক প্রার্থী হিসেবে সিল মেরে তারা একাডেমি স্কুলের তারা যে বিগত সাড়ে ১৫ বছর জয়লাভ করেছে। এর আগে কখনও এই স্কুলে বিএনপির ভোট সব সময় বেশি ছিল। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির কোন ভোট ছিল না খুবই নগণ্য ছিল। খানপুরবাসী বিএনপি'র পক্ষে আছে। খানপুরের মুষ্টিময় কিছু লোকজন ব্যবহৃত হয়ে মানুষকে জুলুম নির্যাতনের নির্যাতন করেছে । আমরা সেই নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাঁখার আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর থানা ১২নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন। শনিবার (১ মার্চ) বিকেল তিনটায় শহরের খানপুর বার একাডেমী স্কুল মাঠে এই কর্মীসভার আয়োজন করা হয়।
এ সময় সজল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আজকে যে কথা বলতেছি আপনাদের সাথে কথা বলতেছি কারণ আমরা আপনাদেরকে উজ্জীবিত করতে চাই। আমরা জানতে চাই আপনাদের মাঝে কারা পরীক্ষিত লোক, কারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে । এই ১২নাম্বার ওয়ার্ডে জানতে চাই কারা বিগত সময়ে জাতীয়তাবাদী যুবদলে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিল।
১২নং ওয়ার্ড কমিটিতে ফ্যাসিবাদী দোসরের কেউ জায়গা পাবে না। যদি কেউ ঢুকতে চায় কেউ আমাদের কর্মীদের মাঝে মিশতে চায় আপনারা বলবেন এই কর্মী ফ্যাসিবাদী শক্তির সাথে ছিল আমাদের যুবদল করতে চায় আমরা তাকে যেনো কোনো সুযোগ না পায় সেই ব্যবস্থা করব। যারা রাজপথে আমাদের কষ্ট করেছেন তাদের অবশ্যই আমরা মূল্যায়ন করতে চাই।
কিন্তু বর্তমান যে পরিবর্তন ভাষা বুঝে কিন্তু আপনাকে রাজনীতি করতে হবে। জনগণের সাথে মিলিয়ে কিন্তু আপনার রাজনীতি করতে হবে । কারণ জনগণের চাওয়া পাওয়ার উপরে কিন্তু আপনার রাজনীতি আপনারা যেই ধরনের রাজনীতি করেছে বাংলাদেশ। কোন চাঁদাবাজ মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী জাতীয়তাবাদী যুবদলের জায়গা হবে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে আমাদের একজন কর্মী বলেছেন বিগত সাড়ে ১৫ বছর আমরা ভোট দিতে পারেনি। কিভাবে আপনারা ভোট দিবেন আমরা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমরা সাড়ে ১৫বছর আন্দোলন করেছি ভোটের অধিকারের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
মানুষের ন্যায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বিষয়ে উনি ইসলাম সজল বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে।
আন্দোলনে বিভিন্ন নেতা কর্মীদের মুখে শুনেছি আমরা যখন আন্দোলন করেছি তখন কিন্তু কোন দল গঠন হবে সেই চিন্তা করে আন্দোলন করি নাই। লোভ লালসার পিছনে পড়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি নাই।
কারণ সরকার বিরোধী আন্দোলন সব শ্রেণীর মানুষের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল। সব শ্রেণীর মানুষ যখন সম্পৃক্ততা হয় না তখন কোনদিন কোন অভ্যুত্থান হয় না। কারো একক দাবি, চিন্তা ও শক্তির বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয় নাই।
এদেশের স্বাধীনতার পিছনে যেমন মায়েদের ভূমিকা আছে, তেমনি তার সন্তানের ভূমিকা আছে, ছাত্রদের ভূমিকা আছে একজন পিতার ভূমিকা আছে একজন সামরিক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা রিটার তাদের ভূমিকা ও আছে।
তখন এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা পালিয়ে গিয়েছে । কারণ শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সাড়ে ১৫বছর হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে এই দেশের অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। অনেক ভাইয়ের বোনকে হারিয়েছে, অনেক স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে। শেখ হাসিনা বিনা ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যারাই প্রতিবাদ করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই যে শক্তি নতুন দল গঠন করা হলো এই দলের পিছনে কারা পৃষ্ঠপোষকতা আছে এদেশের জনগণ জানতে চায়। এদেশের জনগণ জানতে চায় কিভাবে মানিক মিয়া এভিনিউর মতো জায়গায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে সারা বাংলাদেশ থেকে লোক জমায়েত করেছে এই লোক জমায়েতের অর্থের উৎসব এদেশের জনগণ জানতে চায় তাদের। তাদের উদ্দেশ্য কি তা তাদেরকে প্রকাশ করতে হবে।
আমি বলতে চাই আপনারা ভালো চিন্তা করে রাজনীতি করেন অবশ্যই আমাদের দলের নেতা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেব যেভাবে আপনাদেরকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরা আপনাদেরকে স্বাগত জানাতে চাই কিন্তু।
আপনারা এই ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন সেই শহীদের রক্তের উপর ভর করে আপনারা কোন রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপকর্ম ও ক্ষমতার চিন্তাভাবনা আমাদের পক্ষ থেকে বারণ করা হচ্ছে।
কারণ আমরা বলতে চাই কালকে শহীদ সাঈদের ভাই কালকে কিন্তু প্রত্যেকে টিভিতে বলেছে আমাদের ভাইদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীনতার যুদ্ধের সৃষ্টি হয়েছিল যে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছিল সেই দল গঠন কিন্তু আমি এবং আমার পরিবারের কাউকে দাওয়াত করা হয়নি।
আমরা কি বলতে পারি যারা শহীদের যে রক্তের বিনিময় যেই দল সেই স্বাধীনতা হয়েছে সেই স্বাধীনতার অপব্যখ্যা আপনারা দিচ্ছেন অপচিন্তা করছেন অপরিকল্পনা করছেন। মানুষের হৃদয়ের কথা শুনতে এবং মানুষ যদি আপনাদের আগামী নির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে ইনশল্লাহ আমরা নেব কিন্তু মানুষ ভোট না দিয়ে জোর করে কোন অপর চিন্তা করলে সেটা আমরা কিন্তু ক্ষমা করব না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেভাবে চিন্তা করবেন আপনাদের কিন্তু সেই ভাবেই রাজনীতি করতে হবে। আপনারা আমি কেউ কিন্তু এই দলের বাইরে না। এই দলের প্রধান তারেক রহমান সাহেব এদেশের মানুষের ধারণ করে মানুষের হৃদয়ের কথা বোঝার চেষ্টা করছেন। আপনাদেরকে বিপদ আপদ সুখ-দুঃখ মানুষের কাছে যেতে হবে।
আপনি খবর নেবেন আপনার পাশের বাড়ির ভাইটি ঠিকমতো আছে কিনা সে ভালোভাবে চলতে পারছে কিনা। এইসব খোঁজখবরও আপনি নিবেন আপনি যদি তাকে টাকা দিয়েন না উপকারও করতে পারেন কথা দিয়ে অন্তত থাকে আপনি কনটেস্ট করার চেষ্টা করবেন।
ভোটের মাধ্যমে কিন্তু জয়লাভ করতে হবে জনগণের ভোটের বাইরে আমাদের নেতা তারেক রহমান অন্য কোন চিন্তা কোনদিন করে নাই ।
জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যাকেই নেতৃত্ব যাকে নির্বাচিত করবে সেই আপনাদের আগামী দিনের নেতা হবেন আমি। জনগণ এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন আমাদের সহযোদ্ধা ভাইরা যদি কষ্ট পায় তাদের বলতে চাই আপনারা নিজেদের পরিবর্তন করেন আপনারা মানুষের চাওয়া পাওয়ার নির্ভর রাজনীতি হবে।
সমস্ত কর্মকাণ্ড এই জনগণের কাছে যাওয়ার জন্য তারেক রহমান সাহেব ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে আমরা মানুষের কাছে দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিব ।