গত এক সপ্তাহ ধরে গাজাবাসী তাদের বাড়িতে ফিরছেন, যদিও বেশির ভাগ এখন ধ্বংসস্তূপ। এখনও বহু লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে। এখনই আমরা এ যুদ্ধের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পেতে শুরু করব। এখনই শুরু হতে পারে আসল শোক, যা প্রকাশেও ফিলিস্তিনিদের গত ১৫ মাস শারীরিক ও মানসিকভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। একবার চূড়ান্তভাবে পরিসংখ্যান স্পষ্ট হয়ে গেলে হয়তো শিশুর প্রকৃত মৃত্যুসংখ্যা বের হয়ে আসবে।
ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ক্ষয়ক্ষতির শিকার বেশির ভাগই শিশু। জাতিসংঘের বিশ্লেষণে গত পাঁচ মাসের মৃত্যুসংখ্যা উঠে এসেছে, যাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ শিশু। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেসব শিশুর বয়স ছিল ৫ থেকে ৯ বছর, যাদের ৪০ শতাংশকে নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়।
বিভীষিকা শুধু এ কারণে নয় যে, তারা মারা গেছে, বরং কীভাবে তারা মারা গেল, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোচ্চ মাত্রায় আতঙ্কগ্রস্ত করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাযজ্ঞ চলেছে অনেকের নিজ বাড়িতে, স্থল আক্রমণে কিংবা বোমার আওয়াজের মধ্যে চিৎকার করতে করতে তারা নিহত হয়েছে। এভাবে পুরোপুরি ধ্বংস করে তাদের মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া কিংবা ধ্বংসস্তূপে পুঁতে ফেলা হয়েছে, যাতে ধূসর রঙের ধূলিকণার সঙ্গে তাদেরও প্লাস্টিক ব্যাগে ভর্তি করা যায়। কেউ কেউ চেতনানাশক ও চিকিৎসার অভাবে সর্বোচ্চ ব্যথায় ভুগতে ভুগতে মারা যান। অনেকে ব্যথানাশক ওষুধের এক ডোজ ছাড়াই অঙ্গহানির পরে হারিয়ে যান।
আতঙ্ক ও যন্ত্রণার হাজারো মুহূর্ত তাদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে, যা প্রায় নিশ্চিত ছিল। এই চূড়ান্ত মুহূর্তগুলোর বেশির ভাগেরই কোনো সাক্ষী নেই, যারা গল্পগুলো বলা কিংবা পত্রপত্রিকায় তুলে ধরার সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু ৫ বছর বয়সী হিন্দ রজবের মতো কয়েকজনের কাছ থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতির আভাস পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করার জন্য জরুরি সেবায় ফোন করা হয়েছিল, কিন্তু গুলির শব্দে সে লাইন কেটে গিয়েছিল। আত্মীয়দের হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে তাকেও খুন করা হয়েছিল।
আমরা এসব ঘটনার হাতেগোনা কয়েকটির গল্প শুনেছি। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে পচনশীল শিশুদের দেখা গেছে, অনেকে হিমায়িত হয়ে মারা গেছে, স্টিলের ট্রেতে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। মৃতদেহে কালো কালিতে তাদের নাম লেখা রয়েছে, যাতে বাবা-মা সন্তানদের চিহ্নিত করতে পারেন। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি একেক ট্র্যাজেডি।
গাজার শিশুদের প্রতি যা করা হয়েছে তার মধ্যেই সবচেয়ে ভয়ংকর অমানবিকতা লুকিয়ে আছে, যে কারণে ফিলিস্তিনি সবাই ভুগছেন। শিশুর চেয়ে নিষ্পাপ আর কেউ নয়। তাদের মৃত্যু এই যুদ্ধের অন্যায়ের সবচেয়ে অকাট্য প্রমাণ; কীভাবে এমন কাণ্ড ঘটানো হলো এবং অনুমোদন ও সমর্থন দেওয়া হলো। একটি শিশুর চেয়ে বেশি আর কেউ সবার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয়। এ সম্পর্কে থাকে না কোনো রাজনীতি, দায়িত্ব; তাদের কাছে বিশ্ব কেবলই এক খেলার মাঠ।
তাদের প্রতি সহানুভূতির অভাব হলে তা হবে বিপজ্জনক, বেঁচে থাকা শিশুদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ৪০ হাজার এতিম, হাজার হাজার অঙ্গহানি; যে লাখ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত এবং যাদের স্কুল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেসব শিশু ‘মানসিকভাবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত’। এমনকি যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে যদি যুদ্ধ বন্ধও হয়, তবুও গাজার তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার, যদি তারা বিশ্ববাসীর কাছ থেকে সহানুভূতি না পায় এবং গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা ও সমর্থনের জন্য বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে না আসে।
যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের সে প্রাপ্তিটুকুও দেওয়া হয়নি। অনেককে সুষ্ঠুভাবে দাফন করতেও দেওয়া হয়নি। ২০ হাজার শিশু এখনও নিখোঁজ। তারা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে কিংবা গণকবরে পড়ে আছে। দেহগুলো স্তূপ করে বেনামে গণনার জন্য রাখা হয়েছে। তাদের জন্য বেশির ভাগই মৃত্যু-পরবর্তী কোনো আচার, প্রার্থনা পালিত হয়নি। নীরবতা পালনের কোনো মুহূর্ত ছিল না। জীবনের ছিল না কোনো উদযাপন।
নাসরিন মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
হঠাৎ চারজনকে উদ্ধারের আলোচনা, নিশ্চিত নয় পুলিশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনের খোঁজ মিলেছে– সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন আলোচনা থাকলেও এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তাদের ভাষ্য, আজকালের মধ্যে এমন তথ্যের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হতে পারে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল সমকালকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজনের খোঁজ মিলেছে– এমন প্রচার আছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা এখনও উদ্ধার বিষয়ে নিশ্চিত নই। আজকালের মধ্যে পরিষ্কার হতে পারব।
পাহাড়ের বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে ১৬ এপ্রিল সকালে পাঁচ শিক্ষার্থীকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রিশন চাকমা, দিব্যি চাকমা ও মৈত্রীময় চাকমা রাঙামাটি এবং অন্য দু’জন লংঙি ম্রো ও অলড্রিন ত্রিপুরা বান্দরবানের বাসিন্দা। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
সন্তু লারমা সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপণ ত্রিপুরা এ অপহরণের ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছেন। তবে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
একাধিক অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চাপের মুখে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনকে গত সোমবার রাতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সর্বোসিদ্ধিপাড়া এলাকা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।