জনবল কাঠামোয় পদ নেই তবুও নিয়োগের ছড়াছড়ি
Published: 27th, January 2025 GMT
ঢাকা ওয়াসার জনবল কাঠামোয় পরিচালক বলে কোনো পদ নেই। অথচ সংস্থাটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দু’জনকে পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে দু’জন পরিচালকও রয়েছেন। তাদের একজন সংস্থাটিতে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে কর্মরত। শুধু এ দু’জনই নয়, তাকসিম আমলে এ রকম ডজনখানেক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। তাদের প্রায় সবাই আছেন বহাল তবিয়তে। এদের বেতন-ভাতা গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
সমকালের অনুসন্ধানে জনবল কাঠামোর বাইরে ১০ জনের সন্ধান মিলেছে। এদের প্রত্যেকেই উচ্চ বেতনে ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত। এ ঘটনায় ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে আসামি শুধু দু’জন কেন?
এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান সমকালকে বলেন, অর্গানোগ্রাম-বহির্ভূতভাবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের খোঁজা হচ্ছে। এ জন্য জনবল কাঠামো সংস্কারের জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ২৫২তম বোর্ড সভায় আট সদস্যের উপস্থিতিতে ঢাকা ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো.
পরবর্তী সময়ে সহিদ উদ্দিনকে ডিএমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবুল কাশেমও ডিএমডি পদে আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে করা হয়নি। ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সহিদ উদ্দিনকে ডিএমডি (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। আর ৮ সেপ্টেম্বর আবুল কাশেমকে এমডির উপদেষ্টা হিসেবে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। উপদেষ্টার কোনো পদ নেই।
এ ছাড়া একইভাবে তাকসিম আমলে অর্গানোগ্রাম-বহির্ভূতভাবে মেজবাহ উদ্দিনকে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা, ইকবাল রাকিবকে সহকারী আইন কর্মকর্তা ও মাকসুদুল হাসানকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেন সাবেক এমডি। তাদের প্রত্যেকেরই বেতন-ভাতা অনেক বেশি। এর বাইরে তাদের গাড়ি, চালক ও জ্বালানিও সরবরাহ করে ঢাকা ওয়াসা। একইভাবে হিসাব বিভাগে ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্মকর্তা হিসেবে লিটন রায়, মেঘনাথ কুমার ও রবি সিংকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান ফয়সাল আহমেদ ও সায়ন্ত পপি। তারাও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন।
এদিকে ঢাকা ওয়াসার অর্গানোগ্রাম সংস্কারের জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। এরপর জনবল কাঠামোবহির্ভূত নিয়োগের প্রসঙ্গটি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আলোচনায় ঘুরেফিরে আসে। তারা বলছেন, তাকসিম আমলে যাদের এভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, প্রত্যেকে তাঁর নিজের লোক। ঢাকা ওয়াসার নিয়মিত জনবলের ওপর তারা সব সময় ছড়ি ঘুরিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাকসিম এ খান পালিয়ে গেলেও তাঁর সিন্ডিকেট ‘রাজত্ব’ করছে।
অবশ্য অর্গানোগ্রাম সংস্কার কমিটির সদস্য সচিব ও ঢাকা ওয়াসার সচিব মসিউর রহমান খান সমকালকে বলেন, কমিটি ইতোমধ্যে দুটি বৈঠক করেছে। অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত হলে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে যাবেন। এদিকে গত ৮ জানুয়ারি অর্গানোগ্রাম-বহির্ভূতভাবে সহিদ উদ্দিন ও আবুল কাশেমকে নিয়োগ দেওয়ায় এ দু’জন ছাড়াও সাবেক এমডি তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, ওয়াসা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান এবং পাঁচ বোর্ডের সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনবল ক ঠ ম র র জন য ড এমড সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইনজেকশন পুশ করেন আয়া
আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের আসমা বেগম ঠান্ডায় আক্রান্ত এক দিন বয়সী শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নার্সের সন্ধানে গেলে জোসনা বেগম নামে এক নারী তাঁর সন্তানকে ইনজেকশন পুশ করেন। বিনিময়ে ২০০ টাকা দাবি করলে তাঁকে ১০০ টাকা দেওয়া হয়। পরে আসমা জানতে পারেন, নার্স পরিচয় দেওয়া জোসনা হাসপাতালের আয়া।
জাহানপুর ইউনিয়নের আবুল কাশেম ফরাজী এসেছিলেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে। তাঁর সন্তানকেও জোসনা বেগম স্যালাইন পুশ করেছেন।
শুধু আসমা বেগম বা কাশেম ফরাজীর ক্ষেত্রে নয়, চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা এমন অনেক রোগীকেই স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগমের মতো আয়া-ঝাড়ুদার। বিষয়টি কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে এ ধরনের কাজ চলছে।
আয়া জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগম জানান, নার্সদের কাছ থেকে ক্যানোলা ও স্যালাইন পুশ করা শিখেছি। রোগীর চাপ থাকলে তারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তখন রোগীর স্বজনরাই ডেকে সাহায্য করতে বলেন। এতে তাদের উপকার হয়। তাই বিনিময়ে খুশি হয়ে টাকাও দেন।
উপজেলার সাত লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বাড়ানো হয়নি জনবল ও অবকাঠামো। এ সুযোগে হাসপাতালে কর্মরত আয়া ও আউটসোর্সিং কর্মীরা অপকর্ম করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ১৭ জন নার্স রয়েছেন। এর পরও আয়া ও ঝাড়ুদার দিয়ে চলছে শিশু, কিশোর ও বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা। কর্তব্যরত নার্সদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই রোগীরা না জেনে বা বাধ্য হয়ে আয়া ও ঝাড়ুদারের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। নার্সদের দাবি, রোগীর তুলনায় নার্স কম। এ কারণে রোগীর স্বজনরা না বুঝে আয়াদের শরণাপন্ন হন। আয়ারা তাদের না জানিয়ে গোপনে এসব অপকর্ম করছেন। কর্মতর্কাদের বিষয়টি জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হানিফের অভিযোগ, রোগী এলে নার্সদর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেলেও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ছাড়া সেবা দেন না। এ সুযোগে আয়া ও ঝাড়ুদাররা গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ১০০ টাকা নিয়ে স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন।
চরফ্যাসন হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স অপরাজিতা রানী জানান, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় আয়াদের সহায়তা নিতে হয়। তবে তারা নিজেরা একা এ কাজ করতে পারেন না। টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে সেবা পেয়ে নার্সদের খুশি হয়ে টাকা দিয়ে থাকেন। টাকা দিয়ে পরে কেউ অভিযোগ করলে কিছু করার নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, আয়া বা ঝাড়ুদার এসব কাজ করতে পারেন না। বিষয়টি জানতে পেরে রোকেয়া বেগম নামে আউটসোর্সিংয়ের এক আয়াকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর জবাব পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।