বিমানবন্দরে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুদকের সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তারা কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে আলাদাভাবে মামলাগুলো করেন। দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো.

আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

এজাহারে বলা হয়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগাযোগ, নেভিগেশন ও নজরদারি ব্যবস্থাপনা, রাডার স্থাপন প্রকল্পের আওতায় রাডার নির্মাণের সময় প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। একই বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ (তৃতীয় টার্মিনাল) প্রকল্প থেকে ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ২১২ কোটি টাকা এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ ও রানওয়ে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরও দুটি মামলা হয়েছে। 

চারটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে তারিক সিদ্দিককে। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মহিবুল হক ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান মহিবুলকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন– বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও বেবিচকের সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও আসামি হয়েছেন। 

প্রথম মামলায় বলা হয়, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (থার্ড টার্মিনাল) প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয় এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) নামে প্রতিষ্ঠানকে। ওই কাজের সঙ্গে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে সম্পৃক্ত করা হয়। অনুসন্ধানকালে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রকল্পে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এ প্রকল্প থেকে ক্রয় সংক্রান্ত বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজের কাজসহ বিভিন্ন কাজে পছন্দের ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়ে বেআইনিভাবে স্থানীয় এজেন্ট অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে ওই কাজে সম্পৃক্ত করে পরস্পর যোগসাজশে প্রকল্প থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মুহিবুল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান, সিএনএস মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক আফরোজা নাসরিন সুলতানা, পরিচালক (পরিকল্পনা) এ কে এম মনজুর আহমেদ, অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনালের মালিক লুৎফুল্লাহ মাজেদ ও এমডি মাহবুব আনামকে আসামি করা হয়েছে। 

তৃতীয় মামলায় কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও রানওয়ে নির্মাণকাজে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে আসামি করা হয়েছে ১০ জনকে। তারা হলেন– তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মুহিবুল হক, সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার, সাবেক বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান, অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনালের মালিক লুৎফুল্লাহ মাজেদ, এমডি মাহবুব আনাম, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব  শফিকুল ইসলাম এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়-৪র্থ সংশোধিত) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক ইউনুস ভূঁইয়া। 

চতুর্থ মামলায় বলা হয়, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই হাজার কোটি টাকার নতুন টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করে অগ্রিম বিল হিসেবে ২১২ কোটি টাকা ছাড় করার অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মামলায় তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুহিবুল হকসহ অন্যাদের আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া জনেন্দ্র নাথ সরকার, এম মফিদুর রহমান, বেবিচকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। 

অন্যদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আনাম, পরিচালক লুৎফুল্লাহ মাজেদ, প্রকল্প পরিচালক মইদুর রহমান মো. মওদুদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব শাহ জুলফিকার হায়দার (বর্তমানে উপসচিব, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়) এবং সাবেক যুগ্ম সচিব মো. আনিছুর রহমানকে (বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব) আসামি করা হয়েছে। 

এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রকল্পের কাজে প্রচলিত ক্রয় প্রক্রিয়ার বিদ্যমান বিধান লঙ্ঘন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়েছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক এখতিয়ার লঙ্ঘন করে ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যয় মঞ্জুরি, পরিদর্শন, অর্থ ছাড়করণ সংক্রান্ত বিধান ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অবৈধ সুবিধা দেওয়া ও নেওয়া হয়েছে। আইন, চুক্তি ও প্রচলিত বিধিবিধান লঙ্ঘন করে পরস্পর যোগসাজশে অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে সম্পৃক্ত করে প্রকল্প কাজে ২১২ কোটি টাকা অগ্রিম বিল নেওয়া হয়। বর্তমানে অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা আত্মগোপনে আছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক আহম দ স দ দ ক জন ন দ র ন থ সরক র হ ব ব র রহম ন প রকল প থ ক প রকল প র ন প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

আসক্তিহীন ব্যথানাশক নতুন ওষুধের অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র

আসক্তিমূলক নয় ( নন-ওপিওয়েড) এমন একটি ব্যথানাশক ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। প্রাপ্তবয়স্কদের স্বল্পমেয়াদি ব্যথার চিকিৎসায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়।

ব্র্যান্ড নাম জারনাভ্যাক্স হিসেবে পরিচিত সুজট্রিজিন নামে এই ওষুধটি মানুষের শরীরের ব্যথার সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছানোর আগেই কাজ করতে শুরু করে। খবর বিবিসির

প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস জানিয়েছে, এই ওষুধটিতে আসক্তি সৃষ্টিকারী উপাদান ওপিওয়েড নেই। এটি মাঝারি থেকে গুরুতর ব্যথার উপশম করতে পারে।

বছরের পর বছর ধরে ব্যথানাশক ওষুধের আসক্তিজনিত সমস্যা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে ‘জাতীয় লজ্জা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং জনস্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।

মানুষের শরীরে নতুন ব্যথানাশক ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই পরীক্ষায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এফডিএ বলেছে, অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে জারনাভ্যাক্স কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এই ওষুধের অনুমোদন দেওয়াকে জনস্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর আসক্তি উদ্রেগকারী ওপিওয়েড ব্যবহারের কারণে দেশটিতে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। ২০২২ সালে মাত্রাতিরিক্ত ওপিওয়েড ব্যবহারের কারণে ৮২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।


সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ সীমান্ত করারোপ করবেন। চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপেরও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। চীনের ফেন্টানিল রপ্তানিকে একটি কারণ উল্লেখ করে এই হুমকি দিয়েছেন তিনি।

ওপিওয়েড শরীরের ব্যথার সংকেতগুলোকে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে দেয় না। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন মস্তিষ্ক নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিনে ভরে যায়। এটি আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। আর এসবের মধ্য দিয়ে ওপিওয়েড অনেক বেশি আসক্তি তৈরি করে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা সারাতে প্রায় ৮ কোটি মানুষকে ওষুধ খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ভারটেক্সের প্রধান নির্বাহী রেশমা কেওয়ালরামানি এই অনুমোদনকে ঐতিহাসিক মাইলফলক বলেছেন।

কোম্পানিটি বলেছে, জারনাভ্যাক্সের প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম পড়বে সাড়ে ১৫ ডলার করে। তবে ওষুধটি শিশুদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর কি না, তা এখনো জানা যায়নি বলে উল্লেখ করেছে তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ