ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন বাতিলের দাবিতে একাংশের ঝাড়ু মিছিল
Published: 27th, January 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বাতিলের দাবিতে ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটির একাংশের নেতাকর্মীরা।
সোমবার (২৬ জানুয়ারি) রাত ৭টার দিকে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা মিছিলটি বের করেন। মিছিল থেকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন নেতারা।
এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৮ জানুয়ারি জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক পক্ষ সম্মেলন সব প্রস্তুতি নিলেও অপর পক্ষের বিরোধিতার কারণে দুটি তারিখই পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। গত ২২ জানুয়ারি সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আইনজীবী আ জ ম মোরশেদ আল মামুন স্বাক্ষরিত জেলা বিএনপির দলীয় প্যাডে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরায় বিএনপির ২ পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ১৪৪ ধারা জারি
‘অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা রয়েছে’
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটিসহ নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি পক্ষ এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি এবং সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনের নেতৃত্বে আরেকটি বড় অংশ রয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরেই উভয় পক্ষ পৃথকভাবে দলীয় সব কর্মসূচি পালন করে আসছে।
বিএনপির নেতারা জানান, আগের পাঁচ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগের কমিটির ২ ও ৩ নম্বর সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও জহিরুল হক খোকন নতুন কমিটিতে ৩ ও ৪ নম্বর এবং কবির আহমেদ ভূইয়াকে ৩২ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে বিএনপির আরেকটি পক্ষ কবিরের অনুসারী। হাফিজুর ও জহিরুলের নেতৃত্বে শহরে সম্মেলন বিরোধী একাধিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, আজ রাত ৭টার দিকে জেলা শহরের পাওয়ার হাউজ রোড এলাকা থেকে জেলা বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা হাতে ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে টেংকের পাড় এলাকায় গিয়ে সমাবেশ করে। ঝাড়ু মিছিলে নেতাকর্মীরা ১ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সদস্য কবির আহমেদ ভূইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লােগান দেন।
সমাবেশে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মইনুল হোসেন চপল, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপিত গোলাম সরোয়ার খোকন, সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মইনুল হোসেন চপল বলেন, “কবির আহমেদ ভূঁইয়া ও তার অনুসারীরা মিলে ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির মূল শক্তি ও মূল ধারাকে পাশ কাটিয়ে এই সম্মেলন দেওয়া হয়েছে। আমরা এই সম্মেলন প্রতিরোধ করব। যাকে নিয়ে আজকে এই সম্মেলনের আয়োজন চলছে, সেই কথিত কবির আহমেদ ভূঁইয়া ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন (আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক)। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিএনপির নেতৃত্ব দেবে এটা তৃণমূল বিএনপি কখনই মেনে নিতে পারে না। এটা মানা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের এই আন্দোলনটা বিএনপির ত্যাগী নেতাদের পক্ষে। এই আন্দোলনটা আমরা চালিয়ে যাবে। আমরা জেলার ত্যাগী নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু জেলা সম্মেলন চাই। আমাদের ১৭ বছরের লক্ষ্য ছিল অবৈধ হাসিনা সরকারকে হটানো। এখন লক্ষ্য দালাল মুক্ত বিএনপি প্রতিষ্ঠা করা।”
গোলাম সারুয়ার খোকন বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটিতে সম্মেলন করতে দেওয়া হবে না। এই অপশক্তিকে রুখে দেওয়া হবে। বুকের রক্ত দিয়ে এই সম্মেলন প্রতিহত করব।”
এ বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও সদস্য সচিব সিরাজুল ইসমামের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। যে কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঢাকা/মাইনুদ্দীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব র হ মণব ড ন ত কর ম র ব এনপ র স ব এনপ র দ কম ট র স ও সদস য র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা
সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।
বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭
রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু
হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।
সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।
মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।