এক সময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন মোহাম্মদ নবী (৫৫)। নানা ধরনের আসবাব তৈরিতে দক্ষ হওয়ার পর দিন ঘোরে তাঁর। আসবাব তৈরির একটি দোকান দেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায়। ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে তাঁর দোকানের সব পুড়ে গেছে। রোববার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ওয়াজেদ মার্কেটে অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান থেকে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে ১৫টি দোকান। এতে সব হারিয়েছেন মোহাম্মদ নবীর মতো অন্য ব্যবসায়ীরাও।
অভিযোগ উঠেছে, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের প্রধান ফটকের উল্টো পাশে অবস্থিত ওয়াজেদ মার্কেটের ওই জ্বালানি তেলের দোকানে ট্যাঙ্কার থেকে চুরি করে তেল নামানোর সময় আগুনের সূত্রপাত হয়। সিসিটিভি ফুটেজেও বিষয়টি ধরা পড়েছে। এ ঘটনার পর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশেই এমন অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান রয়েছে ৩০টি। এসব দোকানে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডসহ সরকারি বিভিন্ন ট্যাঙ্কার থেকে চালকরা তেল চুরি করে বিক্রি করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে টিএনটি রোডের সামনে অবস্থিত ওয়াজেদ মার্কেটের অবৈধ ওই তেলের দোকানের সামনে ট্যাঙ্কার থেকে তেল চুরি করা হচ্ছিল। এ সময় আগুন ধরে যায়। এতে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওয়াজেদ মার্কেটের দক্ষিণ পাশের নামহীন জ্বালানি তেলের দোকানে রোববার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে এসে দাঁড়ায় যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের একটি ট্যাঙ্কার। দোকানের এক কর্মচারী ওই ট্যাঙ্কারে পাইপ যুক্ত করে ড্রামে তেল নিতে শুরু করেন। এ সময় হঠাৎই মাটিতে পড়া তেল থেকে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে ওই মার্কেটসহ আশপাশের দোকানে তা ছড়িয়ে পড়ে।
জ্বালানি তেলের দোকানটি সাকিল নামের এক ব্যক্তির নামে নেওয়া। কিন্তু গতকাল সোমবার তিনি জানিয়েছেন, অন্য একজনকে ওই দোকানটি ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু ভাড়াটিয়ার নাম-পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি তিনি।
আগুনের সংবাদ পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। তারা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে আরও চারটি ইউনিট যোগ দেয়। অবশেষে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এরই মধ্যে পুড়ে যায় ১৫টি দোকান। এর মধ্যে রয়েছে আসবাবের শোরুম, স্টেশনারি, গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসা, বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান, কুলিং কর্নার, আসবাব তৈরির দোকান, রড-সিমেন্ট ও মোবাইল ফোন রিচার্জের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ক্ষতিগ্রস্ত আসবাব তৈরির দোকানের মালিক মোহাম্মদ নবীর বাসাও বাংলাবাজার এলাকায়। তাঁর ভাষ্য, দোকানে বিপুল টাকার আসবাব তৈরির কাঁচামাল ছিল। বানানো আসবাবও ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে তাঁর অন্তত দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিল তিল পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করিয়েছেন। এখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন ভেবেই কূল পাচ্ছেন না। বলতে বলতেই মোহাম্মদ নবীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
একই এলাকার ফখরুল ইসলামের (৪৫) দোকান রয়েছে পুড়ে যাওয়া ওয়াজেদ মার্কেটে। সেখানে সিমেন্ট বিক্রির পাশাপাশি মোবাইল ফোন রিচার্জের ব্যবসাও করেন। ফখরুল ইসলাম বলেন, রোববার রাত ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন। মোবাইল রিচার্জের টাকাসহ সিমেন্ট বিক্রির ৮০ হাজার নগদ টাকা ছিল ক্যাশবাক্সে। রোববার সকালে বিক্রির জন্য ১০০ বস্তা সিমেন্ট আনেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ বস্তা সিমেন্ট ছিল তাঁর দোকানে। কিন্তু রাতের আগুনে সব হারিয়ে ফেলেছেন। একদিন চলার মতো টাকাও তাঁর
হাতে নেই।
ওয়াজেদ মার্কেটটি টিনের দোতলা মার্কেট। এটির মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দোকান থেকে আগুন শুরু হয়। প্রায় ১৫টি দোকান পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর ধারণা, প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, সংবাদ পেয়ে কুমিরা, বায়েজিদ ও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে পর্যায়ক্রমে কাজ করে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের সূত্রপাত তেলের দোকান থেকে হয়েছে বলে তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন।
অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকানগুলোকেই এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেন সীতাকুণ্ডের পেট্রোলপাম্প ব্যবসায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। তাদের ভাষ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে সীতাকুণ্ডের অংশে এমন অবৈধ তেলের দোকান রয়েছে ৩০টির বেশি। দ্রুত এসব দোকান বন্ধের দাবিও জানান তারা।
সলিমপুরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম ও জহিরুল ইসলামের ভাষ্য, বন্দর সংযোগ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন অংশে অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান গড়ে উঠেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ বিভিন্ন পেট্রোলপাম্প ও সরকারি কাজের ট্যাঙ্কার দিয়ে জ্বালানি তেল নেওয়া হয়। এসব যানবাহনের চালককে হাত করে অবৈধ ব্যবসায়ীরা কম দামে তেল কিনে নেয়। তারা পেট্রোলপাম্পের চেয়েও কম দামে তেল বিক্রি করতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে
এই চক্র সক্রিয় থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এসব তথ্য জানিয়ে জলিলগেটে অবস্থিত মা ফাতেমা সিএনজি ও পেট্রোলপাম্পের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রুবেল বলেন, কিছু পেট্রলপাম্পে ভাড়া করা ট্যাঙ্কলরি দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এসব লরির চালকরা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তেলের দোকানে চুরি করে তেল বিক্রি করেন। এতে করে বিপদের আশঙ্কা থাকে। রোববারের অগ্নিকাণ্ড এরই উদাহরণ। অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান বন্ধ না হলে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, তারা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা জ্বালানি তেলের দোকানগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছেন। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অব ধ জ ব ল ন আসব ব ত র র র ল ইসল ম ব যবস থ ব যবস য় অবস থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আরও বেশি জনশক্তি নেওয়ার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি নেওয়ার জন্য সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। উপদেষ্টার সঙ্গে বুধবার সকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিস কক্ষে সৌদি আরবের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন ঈসা আল দুহাইলান এর সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে সৌদি আরবে বসবাসরত বৈধ পাসপোর্টবিহীন ৬৯ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের অনুকূলে পাসপোর্ট ইস্যু/রি-ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়াদিসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার। একক দেশ হিসেবে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে। বর্তমানে সৌদি আরবে ৩.২ মিলিয়ন বাংলাদেশি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত। এটিকে ৪ মিলিয়নে উন্নীত করতে তিনি রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উন্নয়নে সৌদি আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে বলেন, জনশক্তি রপ্তানির পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত সহায়তা বিদ্যমান। তিনি বলেন, সৌদি আরব সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। করোনাকালীন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সৌদি আরবের ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তা সচল ছিল।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজকীয় সৌদি সরকারের গৃহীত নীতি অনুযায়ী সে দেশে বসবাস ও চাকরি করাসহ আইনগত সুযোগসুবিধা পাওয়ার জন্য বৈধ পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক। সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশিরা পাসপোর্ট/ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই, এমন লোকের সংখ্যা আনুমানিক ৬৯ হাজার।
তিনি বলেন, সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় ৬৯ হাজার ব্যক্তির পাসপোর্ট ইস্যু/নবায়নের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তদনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।