Samakal:
2025-01-31@10:49:28 GMT

চুরি করে তেল নামানোর সময় আগুন

Published: 27th, January 2025 GMT

চুরি করে তেল নামানোর সময় আগুন

এক সময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন মোহাম্মদ নবী (৫৫)। নানা ধরনের আসবাব তৈরিতে দক্ষ হওয়ার পর দিন ঘোরে তাঁর। আসবাব তৈরির একটি দোকান দেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায়। ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে তাঁর দোকানের সব পুড়ে গেছে। রোববার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ওয়াজেদ মার্কেটে অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান থেকে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে ১৫টি দোকান। এতে সব হারিয়েছেন মোহাম্মদ নবীর মতো অন্য ব্যবসায়ীরাও। 
অভিযোগ উঠেছে, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের প্রধান ফটকের উল্টো পাশে অবস্থিত ওয়াজেদ মার্কেটের ওই জ্বালানি তেলের দোকানে ট্যাঙ্কার থেকে চুরি করে তেল নামানোর সময় আগুনের সূত্রপাত হয়। সিসিটিভি ফুটেজেও বিষয়টি ধরা পড়েছে। এ ঘটনার পর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশেই এমন অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান রয়েছে ৩০টি। এসব দোকানে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডসহ সরকারি বিভিন্ন ট্যাঙ্কার থেকে চালকরা তেল চুরি করে বিক্রি করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে টিএনটি রোডের সামনে অবস্থিত ওয়াজেদ মার্কেটের অবৈধ ওই তেলের দোকানের সামনে ট্যাঙ্কার থেকে তেল চুরি করা হচ্ছিল। এ সময় আগুন ধরে যায়। এতে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওয়াজেদ মার্কেটের দক্ষিণ পাশের নামহীন জ্বালানি তেলের দোকানে রোববার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে এসে দাঁড়ায় যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের একটি ট্যাঙ্কার। দোকানের এক কর্মচারী ওই ট্যাঙ্কারে পাইপ যুক্ত করে ড্রামে তেল নিতে শুরু করেন। এ সময় হঠাৎই মাটিতে পড়া তেল থেকে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে ওই মার্কেটসহ আশপাশের দোকানে তা ছড়িয়ে পড়ে। 
জ্বালানি তেলের দোকানটি সাকিল নামের এক ব্যক্তির নামে নেওয়া। কিন্তু গতকাল সোমবার তিনি জানিয়েছেন, অন্য একজনকে ওই দোকানটি ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু ভাড়াটিয়ার নাম-পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি তিনি। 
আগুনের সংবাদ পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। তারা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে আরও চারটি ইউনিট যোগ দেয়। অবশেষে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এরই মধ্যে পুড়ে যায় ১৫টি দোকান। এর মধ্যে রয়েছে আসবাবের শোরুম, স্টেশনারি, গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসা, বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান, কুলিং কর্নার, আসবাব তৈরির দোকান, রড-সিমেন্ট ও মোবাইল ফোন রিচার্জের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ক্ষতিগ্রস্ত আসবাব তৈরির দোকানের মালিক মোহাম্মদ নবীর বাসাও বাংলাবাজার এলাকায়। তাঁর ভাষ্য, দোকানে বিপুল টাকার আসবাব তৈরির কাঁচামাল ছিল। বানানো আসবাবও ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে তাঁর অন্তত দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিল তিল পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করিয়েছেন। এখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন ভেবেই কূল পাচ্ছেন না। বলতে বলতেই মোহাম্মদ নবীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। 
একই এলাকার ফখরুল ইসলামের (৪৫) দোকান রয়েছে পুড়ে যাওয়া ওয়াজেদ মার্কেটে। সেখানে সিমেন্ট বিক্রির পাশাপাশি মোবাইল ফোন রিচার্জের ব্যবসাও করেন। ফখরুল ইসলাম বলেন, রোববার রাত ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন। মোবাইল রিচার্জের টাকাসহ সিমেন্ট বিক্রির ৮০ হাজার নগদ টাকা ছিল ক্যাশবাক্সে। রোববার সকালে বিক্রির জন্য ১০০ বস্তা সিমেন্ট আনেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ বস্তা সিমেন্ট ছিল তাঁর দোকানে। কিন্তু রাতের আগুনে সব হারিয়ে ফেলেছেন। একদিন চলার মতো টাকাও তাঁর 
হাতে নেই। 
ওয়াজেদ মার্কেটটি টিনের দোতলা মার্কেট। এটির মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দোকান থেকে আগুন শুরু হয়। প্রায় ১৫টি দোকান পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর ধারণা, প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 
কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, সংবাদ পেয়ে কুমিরা, বায়েজিদ ও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে পর্যায়ক্রমে কাজ করে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের সূত্রপাত তেলের দোকান থেকে হয়েছে বলে তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। 
অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকানগুলোকেই এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেন সীতাকুণ্ডের পেট্রোলপাম্প ব্যবসায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। তাদের ভাষ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে সীতাকুণ্ডের অংশে এমন অবৈধ তেলের দোকান রয়েছে ৩০টির বেশি। দ্রুত এসব দোকান বন্ধের দাবিও জানান তারা।
সলিমপুরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম ও জহিরুল ইসলামের ভাষ্য, বন্দর সংযোগ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন অংশে অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান গড়ে উঠেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ বিভিন্ন পেট্রোলপাম্প ও সরকারি কাজের ট্যাঙ্কার দিয়ে জ্বালানি তেল নেওয়া হয়। এসব যানবাহনের চালককে হাত করে অবৈধ ব্যবসায়ীরা কম দামে তেল কিনে নেয়। তারা পেট্রোলপাম্পের চেয়েও কম দামে তেল বিক্রি করতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে 
এই চক্র সক্রিয় থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। 
এসব তথ্য জানিয়ে জলিলগেটে অবস্থিত মা ফাতেমা সিএনজি ও পেট্রোলপাম্পের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রুবেল বলেন, কিছু পেট্রলপাম্পে ভাড়া করা ট্যাঙ্কলরি দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এসব লরির চালকরা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তেলের দোকানে চুরি করে তেল বিক্রি করেন। এতে করে বিপদের আশঙ্কা থাকে। রোববারের অগ্নিকাণ্ড এরই উদাহরণ। অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান বন্ধ না হলে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, তারা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা জ্বালানি তেলের দোকানগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছেন। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অব ধ জ ব ল ন আসব ব ত র র র ল ইসল ম ব যবস থ ব যবস য় অবস থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ল

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ালো ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। সামরিক অভ্যুত্থানের চার বছর পূর্তির একদিন আগে এ ঘোষণা এলো। আজ শুক্রবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতাসীন হয়। এরপর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের জয় পাচ্ছে। দেশের অনেক এলাকা এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে জান্তা বাহিনী এ বছর নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। সমালোচকরা বলছেন, প্রক্সির মাধ্যমে জেনারেলদের ক্ষমতায় রাখার জন্য একটি প্রহসন হতে পারে এ নির্বাচন। কারণ, সেনাবাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখতে বহুবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আবারও মেয়াদ বাড়ানো পরিস্থিতির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

রাষ্ট্র পরিচালিত এমআরটিভি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে জরুরি অবস্থা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রচার করে বলেছে, সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এখনো আরও অনেক কাজ বাকি আছে। বিশেষ করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রয়োজন।

নির্বাচনের জন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে জান্তা সরকার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। যদিও তারা দেশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার লড়াইয়ে ক্লান্ত। কারণ, তারা একাধিক ফ্রন্টে সশস্ত্র বিদ্রোহকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মিয়ানমারের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাজারে একটি প্রতিশ্রুতিশীল শক্তি হিসেবে দেখা হলেও এখন তা ব্যাপক চাপে রয়েছে। সামরিক বাহিনী একাধিক ফ্রন্টে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছে এবং দেশটির জনগণের ওপর চাপ দিন দিন বাড়ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ