এক টুকরি মাটিও পড়েনি পাঁচ ক্লোজারের সংস্কারকাজে
Published: 27th, January 2025 GMT
তাহিরপুর উপজেলাসংলগ্ন মাটিয়ান হাওরের পাঁচটি ক্লোজারের কাজ শুরু করা হয়নি এখনও। এর কোনোটিতে ফেলা হয়নি এক টুকরি মাটিও। এসব ক্লোজারের কাজ বিলম্বিত হওয়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। অথচ ফসল রক্ষা বাঁধের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে পরিষ্কার কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।
হাওরাঞ্চলে ক্লোজার বলতে বোঝায় নদীর মাঝখানে আড়াআড়িভাবে বা খালের মুখে মাটির অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে বন্ধ করা। বাঁধের কোনো অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ভাঙনের কারণে এসব ক্লোজার সৃষ্টি হয়। এসব ক্লোজারকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে করা হয় বাঁধের কাজ।
মাটিয়ান হাওরের ওই পাঁচটি ক্লোজার হলো, ধরুন্দ’র ক্লোজার, জামলাবাজ নদীর বাঁধ, বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খাল, চতুর্ভুজ ক্লোজার ও পুটিমারা ক্লোজার। হাওরের এসব খালে অবস্থিত ক্লোজারগুলোর কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেগুলো যথাযথভাবে শেষ করা হবে, সেসব প্রশ্নের পরিষ্কার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে। ক্লোজারের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরালো আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মাটিয়ান হাওরের এসব ক্লোজারের মধ্যে কয়েকটির কাজ কীভাবে আর কার মাধ্যমে করানো হবে, এখনও সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। ক্লোজারের কাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে করাবে। নাকি ঠিকাদার দিয়ে নির্ধারিত কাজ করানো হবে, পাউবো নিজেই যেন নিশ্চিত নয়! তাই বারবার সিদ্ধান্ত বদলের ফেরে পড়ে বিলম্বিত হচ্ছে একাধিক ক্লোজারের কাজ।
এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খাল ও পুটিমারা খালের ক্লোজারের ক্ষেত্রে। পাউবো কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার দিয়ে এ দুটি ক্লোজারে কাজ করাবে, নাকি নির্ধারিত অংশের বাঁধের কাজের জন্য গঠিত পিআইসি দিয়ে সেটা করাবে, দ্বিধায় রয়েছে পাউবো। বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খালটি প্রথমে পাউবো দায়িত্ব দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতি জুয়েল মিয়াকে। পরে আবার পাউবো জুয়েল মিয়াকে জানায়, বাঁধটি ঠিকাদার দিয়ে করানো হবে। এখন আবার জানানো হয়, এই ক্লোজারের কাজ প্রকল্প পিআইসি চেয়ারম্যানের মাধ্যমেই করানো হবে। স্থানীয় কৃষক নেতাদের অভিযোগ, পাউবোর এমন সিদ্ধান্ত বদলের কারণেই বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খালের কাজ দেরি হচ্ছে।
মাটিয়ান হাওর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বড়দল গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা। পাউবো তাহিরপুর উপজেলার ৭৪টি প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও উপজেলার বৃহৎ বোরো ফসলি এলাকা মাটিয়ান হাওরের ৫টি ক্লোজারের কাজ শুরু না করায় তারা হতাশা ও উদ্বিগ্ন। একইভাবে পুটিমারা ক্লোজারের কাজ পাউবো ঠিকাদার দিয়ে করাবে না প্রকল্প কমিটি দিয়ে– এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। বাঁধের কাজ করার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। পাউবো কবে সিদ্ধান্ত নেবে আর কাজ শুরু করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকদের।
এর আগে ২০১৭ সালে ঠিকাদাররা বাঁধের কাজের টেন্ডার পেলেও কাজ না করায় ধান পাকার আগেই মেঘালয় থেকে আসা পানি যাদুকাটা পাটলাই ও বৌলাই হয়ে কোনো বাধা ছাড়াই হাওরে ঢুকে পড়ে। এতে কপাল পুড়েছে ২৫ গ্রামের ৫০ হাজার কৃষকের।
জামলাবাজ গ্রামের কৃষক আক্তার মিয়া জানান, জামলাবাজ নদীর বাঁধটি বিগত বছরগুলোতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই বাঁধে মাটি ফেলানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাঁধের উভয় পাশে বাঁশ ও চাটাই দিয়ে সেটিং-এর কাজ করা হয়েছে। এ বছর বাঁধে কাজ শুরু না করায় তারা হাওরের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
জামলাবাজ নদীর বাঁধের প্রকল্প সভাপতি শামছুজ্জামান জানান, বাঁধ নির্মাণের জন্য এক্সক্যাভেটর মেশিন প্রকল্প এলাকাতে আনা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করবেন। এতদিন পরে কেন কাজের সরঞ্জাম জোগাড়ের ব্যস্ততা, তা জানা যায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন জানান, বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খালের শুধু ক্লোজারের অংশটি প্রকল্প সভাপতি করবে। বাকি জায়গাটির উভয় দিকে ব্লক সেটিং করবে ঠিকাদার। পুটিমারা ক্লোজারের কাজ করবে শুধু ঠিকাদার। ধরুন্দ ক্লোজার, চতুর্ভুজ ক্লোজার এবং জামলাবাজ নদীর বাঁধের কাজও দু-এক দিনের মধ্যে শুরু করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এসব ক ল জ র প রকল প ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িত সবার ফাঁসির দাবিতে অনশন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ অনশন শুরু করেন তারা। পরে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন চলছিল। এর আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিপ্লবের ছয়মাস পূরণ হতে যাচ্ছে। আমরা এখনও এ সরকারের কাছে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমাদের ভাইদের রক্ত এখনও রাজপথে লেগে আছে। আমি এখানে বসলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে না আমরা এখান থেকে উঠব না। আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। আমরা আমাদের আমরণ অনশন চালিয়ে যাব। আমরা বিচার চাই। বিচার ছাড়া কোনো কথা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছে। ইউনূস সরকার কি করে। খুনি বাইরের দেশে বসে আছে। তাদের ধরে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।’
রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ফ্যাসিবাদী কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটাকে ভেঙে দিয়ে খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে নেমে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা ন্যূনতম সংস্কার ও বিচার পাইনি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দুই হাজারের অধিক ভাই জীবন দিয়েছে। তারা রাজপথে সাহসিকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।’
রাসেল আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এখনও আমাদের খুনি হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে রাজপথে নামতে হয়। আমাদের এ মুক্ত বাতাসে এখনও লাশের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। বারবার আমাদের তাদের বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। এ অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব খুনিদের বিচার করার জন্যই ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আজও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডাবাহিনী বীর চট্টলার বুকে মিছিল করেছে। খুনি হাসিনাসহ আমাদের ভাইদের যারা খুন করেছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে এখন থেকেই আমরণ অনশন পালন করব।’
আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘এখনো তারা সড়কে আছেন। তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।’
অনশনকারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত বিচার আইনে বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তার-বিচার করা, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচার করা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা, সব হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, অপরাধ ও নির্যাতনের বিচার করা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত সব অর্থ ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জীবনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করাসহ রাষ্ট্রের যাবতীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করতে হবে।