২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কুষ্ঠমুক্ত করার লক্ষ্য থাকলেও যশোরে বেড়েছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। চলতি বছরের জানুয়ারির ২৬ তারিখ পর্যন্ত জেলায় চিকিৎসাধীন কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন। যা গত বছরের (২০২৪ সাল) জানুয়ারিতে ছিল ৩৫ জন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ছিল ১৬ জন। চলতি বছরের ২৬ দিনে নতুন শনাক্ত হয়েছেন দুই জন।
বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) এ তথ্য জানানো হয়। দিনটি উপলক্ষে বাঁচতে শেখার উদ্যোগে এইপি প্রকল্পের আওতায় যশোর সিভিল সার্জনের কার্যালয়সহ জেলার আট উপজেলায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘ঐক্যবদ্ধ কাজ করি, কুষ্ঠমুক্ত দেশ গড়ি’ প্রতিপাদ্যে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে এ দিবস উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা, র্যালি ও রোগীদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আক্রান্ত ও সুস্থ হওয়া কুষ্ঠ রোগী, যশোরে কুষ্ঠ নিরাময়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা বাঁচতে শেখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠান হয়।
আলোচনায় রোগীদের দিক নির্দেশনা দেন সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুদ রানা। পরে তিনি কুষ্ঠ রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার নাজমুস সাদিক, এইপি প্রজেক্টের প্রোগ্রাম ফোকাল হিমেল সঞ্জীব কিসকু, প্রজেক্ট ফ্যাসিলেটর অপূর্ব মন্ডল, জ্যোৎস্না খাতুন, শরিফুল ইমলাম, ভলেন্টিয়ার শাহাজাহান আলম ও শিউলী মির্জা।
এইপি প্রজেক্টের প্রোগ্রাম ফোকাল হিমেল সঞ্জীব কিসকু বলেন, “কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো, এটি অত্যন্ত সংক্রামক। এই রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য হলেও অজ্ঞতার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই সামাজিক বর্জনের সম্মুখীন হন। যার কারণে মানসিকভাবেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন রোগীরা। অনেকে রোগটি লুকান, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার আওতায় আসেন না। ফলে চিকিৎসার বদলে অসুখ আরো দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশকে কুষ্ঠমুক্ত করতে হলে এ রোগ প্রথম পর্যায়ে শনাক্ত ও সুচিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। তবে রোগ নির্মূলে সরকারি-বেসরকারি খাতে অর্থায়নের সঙ্গে কমেছে বিভিন্ন কর্মসূচি। এতে রোগটির ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি ও রোগ নির্মূল করার পথ প্রশস্ত হচ্ছে না।
এইপি প্রজেক্টের ফ্যাসিলিটেটর অপূর্ব মন্ডল বলেন, “বাঁচতে শেখা এইপি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে কুষ্ঠরোগ নিরাময়ে কাজ করছে। এ সময়ের মধ্যে মোট রেজিস্ট্রেশনকৃত রোগীর মধ্যে ২২৯ জন সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন মোট রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন।”
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার নাজমুস সাদিক জানান, রোগটি প্রতিরোধে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে।
প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় তিন হাজার মানুষ নতুন করে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ২০২৪ সালে দেশে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৫১৯ জন। এদের প্রায় অর্ধেকই নারী। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ কুষ্ঠ রোগ নির্মূলের পথে হাঁটলেও কিছু এলাকায় বেশি ছড়াচ্ছে।
২০২৩ সালে ৯টি জেলা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বাড়ায় ২০২৪ সালে উত্তরবঙ্গের সাতটিসহ মোট ১২টি জেলা কুষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ প্রাদুর্ভাব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে। জেলাগুলো হলো- রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, মেহেরপুর, মৌলভীবাজার, বাগেরহাট এবং পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি।
২০২৩ সালে নতুন কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৩টি বৈশ্বিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
ঢাকা/রিটন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ভ ল স র জন ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
৯৯ দোররার ভয়, না নিরাপত্তাশঙ্কা—রোনালদো কেন ইরানে যাননি
আজ রাতে তেহরানে ইরানি ক্লাব ইসতেগলালের মুখোমুখি হবে সৌদি আরবের আল নাসর। এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর প্রথম লেগের এই ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খেলছেন না। গতকাল আল নাসর ইরানে পৌঁছালেও রোনালদো যাননি।
কেন যাননি, এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোনো গণমাধ্যম বলছে, ইরানে গেলে ৯৯ দোররা ভোগ করতে হতে পারে, কেউ বলছে তেহরানে রোনালদোর নিরাপত্তার শঙ্কা আছে। আবার চোটের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
রোনালদো সর্বশেষ মাঠে নেমেছেন শনিবার সৌদি প্রো লিগে আল-ওরোবাহর বিপক্ষে। সাধারণত, রোনালদোর মতো তারকারা বিভিন্ন কারণে লিগের ম্যাচ মিস করলেও মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা মিস করতে চান না। আর এবারের প্রো লিগে অবস্থান ভালো না থাকায় (চতুর্থ) এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগেই বেশি মনোযোগ আল নাসরের। তার ওপর প্রতিপক্ষের মাঠে খেলা বলে রোনালদোর মতো তারকাকে দলে পেতে চাইবেন যেকোনো কোচই।
এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচের জন্য আল নাসর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে স্কোয়াড প্রকাশ করেছে, সেখানে রোনালদোর নাম নেই। কেন নেই—এ বিষয়ে মার্কাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে ৯৯ দোররার কথা বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পারসেপোলিসের বিপক্ষে আল নাসরের হয়ে খেলতে তেহরানে গিয়েছিলেন রোনালদো। ওই সময় সেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার এক নারী চিত্রশিল্পীকে জড়িয়ে ধরতে ও চুমু খেতে দেখা গেছে রোনালদোকে। এ ঘটনার ভিডিও-ও ছড়িয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুনরোনালদো ভুল সময়ে জন্ম নিয়েছে—বললেন দি মারিয়া১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মাদ্রিদভিত্তিক ক্রীড়া দৈনিক মার্কার খবরে বলা হয়, ইরানের আইন অনুসারে রোনালদোর ওই ঘটনা ‘ব্যভিচার’ হিসেবে পরিগণিত। যার শাস্তি ৯৯টি বেত্রাঘাত বা দোররা। ২০২৩ সালের ওই ঘটনার শাস্তি হতে পারে বলে রোনালদো সেখানে যাননি। তবে এ বিষয়ে কোনো সূত্রের উল্লেখ করেনি মার্কা।
আল নাসর এবারের ম্যাচটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের অনুরোধ করেছিল এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) কাছে, তবে সংস্থাটি তাতে রাজি হয়নি বলেও খবরে বলা হয়েছে।
দলের অন্যদের সঙ্গে তেহরানে যাননি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।