টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মাইনুল হাসান বলেছেন, দেশের বিভিন্ন পর্যটক স্পটে নানা সুযোগের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে হতাশ হচ্ছেন পর্যটকরা। বলার মতো কাউকে না পেয়ে আস্থার জায়গা থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে পর্যটকরা তাদের হতাশার কথাগুলো বলেন। 

সোমবার এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

মাইনুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে যখন ট্যুরিস্ট পুলিশ যাত্রা শুরু করে তখন এর জনবল ছিল মাত্র ৬০০ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ১৪০০ জন। সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে ট্যুরিস্ট স্পটের সংখ্যা ১৬০০ এর মতো। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ ৩২টি জেলার মোট ১৩০টি স্পটে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কোনো বিদেশি পর্যটক বা পর্যটকদের গ্রুপ যদি বাংলাদেশে ঘুরাঘুরির জন্য এসে নিরাপত্তা চায় সেক্ষেত্রে তাদেরকেও সাপোর্ট দেওয়া হয়। আমরা চাই ট্যুরিস্ট পুলিশের মাধ্যমে দেশের পর্যটন ব্যবস্থাপনা আরও নিরাপদ হোক।
 
ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ করার চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্যুরিস্ট স্পট কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। অথচ এই সমুদ্রের পাশে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই, গোসলের পর জামাকাপড় পরিবর্তনের জায়গা নেই, মোবাইল বা ব্যাগ রাখার নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। তারপরও বিপুল সংখ্যক পর্যটক নিয়মিত কক্সবাজার যাচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে প্রায়ই পর্যটকরা ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে নিজেদের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন।

এসময় ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) নাদিয়া ফারজানা। তিনি জানান, নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটক অধ্যুষিত এলাকায় প্যাট্রোলিং, মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহযোগিতা, হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট মালিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ প্রদান, গুরুত্বপূর্ণ ট্যুরিস্ট স্পটে হাই-রেজুলেশনের ক্যামেরা স্থাপন করে রিয়েল টাইম মনিটরিং করে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও নির্বিঘ্ন করতে পাহাড়ি রাস্তায় চলাচলের উপযোগী গাড়ি ও সারভিলেন্স বা রেসকিউ ড্রোন কেনা প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি বুথ করা হবে। সেই বুথ থেকে দেশে নেমেই বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে ধারণা পাবে। পাশাপাশি দেশে ঘুরাঘুরির সময় তাদের পুলিশি নিরাপত্তার প্রয়োজন হতে পারে। সেসব বিষয়েও পর্যটককে এই বুথ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ঢাকা-সিলেট-ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইন, খুলনা-বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো.

ইকবাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি বিধান ত্রিপুরা, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শাহ জালাল, পুলিশ সুপার (লজিস্টিকস্ এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এস. এম. জাহাঙ্গীর আলম সরকার উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশকে নিরবিঘ্নভাবে কাজ করতে দিতে হলে কিছু আইনগত প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে, জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। ইউনিটটি বর্তমানে তোপখানা রোড এর একটি ভবনে তিনটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে সদরদপ্তর পরিচালনা করছে। এখনই ইউনিটটির জন্য ভূমি ও অবকাঠামো নির্মাণ দরকার। এছাড়াও তারা ট্যুরিস্ট পুলিশের জন্য বিদেশে বিশেষায়িত আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।

এসময় এটিজেএফবির পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি তানজিম আনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক বাতেন বিপ্লব, যুগ্ম মো. শফিউল্লাহ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলহাস কবীর ও আদনান রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য মাসুদ রুমি, খালিদ আহসান, গোলাম মর্তুজা অন্তু এবং সাধারণ সদস্য সরোয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কীভাবে দরুদ পড়বেন

আবু হোরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় একটি হাদিস আছে, যাতে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘর গুলিকে কবরস্থান বানিয়ো না। আমার কবরকে বানিয়ো না উৎসব-স্থান। আমার ওপর দরুদ পড়ো। তোমরা যেখানেই থাকো, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,০৪২)

দরুদ পাঠের এই নির্দেশের পর পর সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসুলকে জিজ্ঞেস করেছেন, কীভাবে তারা দরুদ পড়বেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) একেক সময় একেক জনকে ভিন্ন ভিন্ন রকমের দরুদ শিখিয়েছেন। কাউকে সংক্ষেপে, কাউকে বা একটু বিস্তারিত। আমরা এখানে কয়েকটি দরুদ উল্লেখ করছি।

আবদুর রহমান ইবনে আবু লাইলা (রা.) বলেন, একবার আমার সঙ্গে কা’ব ইবনে উজরার (রা.) সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাকে একটি উপহার দেব না, যা রাসুল (সা.) থেকে আমি পেয়েছি?’ আমি বললাম, ‘অবশ্যই দিন।’ তিনি বললেন, ‘আমরা রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আল্লাহর রাসুল, আপনার, আপনার পরিবারবর্গের প্রতি দরুদ কীভাবে পড়ব? আল্লাহ তো শুধু আমাদের সালাম পাঠানোর ধরন শিখিয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন্, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইব্‌রা-হীম, ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন্, কামা বারাক্‌তা ‘আলা আ-লি ইব্‌রা-হীম, ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। (অর্থ: ‘আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিমের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান। আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ(সা.) এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান।) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৩৮০)

আরও পড়ুনকেন দরুদ পাঠ করব১৫ মার্চ ২০২৫

আবু হামিদ সায়িদি (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, লোকেরা বলল, আল্লাহর রাসুল(সা.), আপনার প্রতি কীভাবে দরুদ পড়ব? রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া জুররিয়্যাতিহী, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইব্‌রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া জুররিয়্যাতিহী, কামা বারাক্‌তা ‘আলা আ-লি ইব্‌রাহীম। ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। (অর্থ: আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ এবং তাঁর সন্তানসন্ততির ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ এবং সন্তানসন্ততির ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান।) (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০৭)

আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহর রাসুল(সা.), আপনাকে সালাম দেওয়ার পদ্ধতি তো আমরা জেনেছি। আপনার প্রতি দরুদ কীভাবে পড়ব? তিনি বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিকা, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইব্‌রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাক্‌তা ‘আলা ইব্‌রাহীম। (অর্থ: আল্লাহ, আপনি আপনার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের ওপর বরকত দান করেছেন।) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৫৮)

আরও পড়ুননামাজের ভেতরে দরুদ পড়ার নিয়ম০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাক্‌তা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম ফিল ‘আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম্ মজীদ। (অর্থ: আল্লাহ, মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবারবর্গের ওপর দুনিয়ার সকল জাতির মধ্যে বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহিমান্বিত। আর সালাম তেমনই, যেমন তোমাদের জানা আছে।) (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০৫)

নবীজির (সা.) এই শেষবাক্য ‘সালাম তেমনই, যেমন তোমাদের জানা আছে’, এর মানে হলো, ‘আত্তাহিয়্যাতু’র মধ্যে যে-সালামের কথা আছে। অর্থাৎ, ‘আস্‌সালামু ‘আলাইকা আইয়ুহান্ নবীয়্যু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা তুহু (আপনার প্রতি সালাম, হে নবী, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত আপনার প্রতি বর্ষিত হোক)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৩৫; মুসলিম, হাদিস: ৪০২)

জায়েদ ইবনে খারেজা (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার ওপর দরুদ পড়ো, বেশি বেশি দোয়া করো এবং বলো: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ (আল্লাহ, মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন)।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১,২৯১)

নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা ব্যাপক। বিভিন্ন গ্রন্থে বহু দুরুদের বর্ণনা আছে। তবে বিশুদ্ধ হাদিসে যেসব শব্দে দরুদ বর্ণিত রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে দরুদ পড়াই উত্তম।

আরও পড়ুনদরুদ শরিফ পড়ার ফজিলত২৩ নভেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ