ফাইন ফুডসের শেয়ার কারসাজি: জড়িতদের ১.৯৬ কোটি টাকা জারিমানা
Published: 27th, January 2025 GMT
পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফাইন ফুডস লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর অভিযোগে ৪ জন বিনিয়োগকারী ও দুই প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অপরাধ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সে নতুন চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় ‘ফোকাস গ্রুপ’ গঠন
জানা গেছে, ফাইন ফুডস লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে মোহাম্মদ শামসুল আলমকে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া তার সহযোগী হিসেবে সাজিয়া জেসমিনকে ৪৯ লাখ টাকা, সুলতানা পারভিনকে ১১ লাখ টাকা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ১ লাখ টাকা, এএএ এগ্রো এন্টারপ্রাইজকে ৭৫ লাখ টাকা এবং আরবিম টেকহো লিমিটেডকে ২৩ লাখ টাকা জারিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করা আরবিম টেকহো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকেও জরিমানা করা হয়েছে।
তথ্য বলছে, পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল ফাইন ফুডসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
গত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজির আলোচিত কোম্পানি ফাইন ফুডস। ব্যবসায়িক পারফরমেন্স ভালো না হলেও শেয়ার দর আকাশ চুম্বি। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ার দর নিয়ে কারসাজির জন্য কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বেশি ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে, যা কোম্পানির নিরীক্ষকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্প মূলধনী কোম্পানি ফাইন ফুডসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শেয়ারটিকে ২০০ টাকার উপরে তুলে আনা হয়েছে। যার সঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সরাসরি যোগসাজোশ রয়েছে। তারা শেয়ারটি নিয়ে কারসাজিতে সহযোগিতা করতে কৃত্রিম আর্থিক হিসাবসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরবিম টেকহো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। এখন পর্যন্ত আমি বিএসইসি থেকে এ বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি। আমি বিষয়টি জেনে নেই, পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।”
শেয়ার কারসাজির সময়কাল
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়িয়ে তোলা হয়। পরে সুবিধামতো সময়ে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা হাতিয়ে নেয় কারসাজি চক্র। ২০২৩ সালের ১ মার্চ ফাইন ফুডসের শেয়ারের দাম ছিল ৬০.
বিএসইসির জরিমানার সিদ্ধান্ত
২০২৩ সালের ২ মার্চ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ফাইন ফুডের শেয়ার কারসাজি করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) ও সেকশন ১৭(ই)(৫) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) ভঙের দায়ে মোহাম্মদ শামসুল আলমকে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং তার সহযোগী সাজিয়া জেসমিনকে ৪৯ লাখ টাকা, সুলতানা পারভিনকে ১১ লাখ টাকা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ১ লাখ টাকা, এএএ এগ্রো এন্টারপ্রাইজকে ৭৫ লাখ টাকা এবং আরবিম টেকহো লিমিটেডকে ২৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
ফাইন ফুডস লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০২ সালে। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৮টি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ১৫.২৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৫.২৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৯.৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
গত ১৫ জানুয়ারি উচ্চ মূল্যের শেয়ারটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের গছিয়ে দেওয়ার অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২৪) ও অর্ধবার্ষিক (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক মুনাফা দেখিয়েছে কোম্পানিটি। তবে বিনিয়োগকারীরা এ ফাঁদ বুঝতে পারায় কোম্পানির মুনাফা ৩৭৬ শতাংশ উত্থান দেখানোর পরও গত কয়েকদিনে শেয়ারটির দর ২১৯ টাকা থেকে ২০০ টাকায় নেমে এসেছে। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ফাইন ফুডসের শেয়ার সর্বশেষ ১৯৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস থ ব এসইস ন র পর আর থ ক সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রিসে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দুই বছর পূর্তিতে বিক্ষোভ, ধরপাকড়
গ্রিসে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার এথেন্সে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। রাজধানী এথেন্স ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকিসহ দেশজুড়ে হাজারো বিক্ষোভকারী সড়কে নেমে আসেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, এথেন্স থেকে ৮০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচজন।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে ৫৭ জন নিহত হন। বেশির ভাগই ছিলেন শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনা কয়েক দশক আগে দেশটিতে বিদ্যমান যে অব্যবস্থাপনা ছিল, তার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে গ্রিসের বিভিন্ন শহরে গতকাল হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। গত কয়েক বছরে দেশটিতে এত বেশি মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। এত বেশি মানুষ রাস্তায় নামায় সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা সরকারকে উদ্দেশ্য করে ‘খুনি’ বলে স্লোগান দেন। এথেন্সে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ৫৭ বছর বয়সী ক্রিস্টোস মেইন বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার কিছুই করেনি। এটা কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, এটা ছিল হত্যাকাণ্ড।’
গতকাল এথেন্সের পার্লামেন্টের সামনের সিনট্যাগমা চত্বরে মানুষের ঢল নেমেছিল। স্প্রে দিয়ে চত্বরের মাঠে তাঁরা নিহত ব্যক্তিদের নাম লাল রং দিয়ে লিখে দেন। বিক্ষোভকারীদের ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’ বলেও স্লোগান দিতে দেখা যায়। ২০২৩ সালের ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার এক নারী জরুরি বিভাগকে কল দিয়ে এই কথা বলেছিলেন। এটাই ছিল তাঁর শেষ বাক্য।
এথেন্সের বিক্ষোভ একটা সময় পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু হুড পরা তরুণদের একটি দল পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছুড়তে শুরু করলে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে সামনের ব্যারিকেড ভাঙতে চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। তখন বিক্ষোভকারীরা আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে যান। বিক্ষোভকারী ও দাঙ্গা পুলিশের মধ্যে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলতে থাকে।
এথেন্সের পাশাপাশি দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকিতেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত হয়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আকাশে কালো বেলুন ওড়ান।