না’গঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতিতে অর্থ লোপাটের অভিযোগ আওয়ামী দোসর চুন্নুর বিরুদ্ধে
Published: 27th, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতিতে অর্থ লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের ভাই, শামীম ওসমানের বেয়াই লাভলুর সহযোগী ও আওয়ামীলীগের অন্যতম দোসর দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর বিরুদ্ধে।
তার অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ফুসে উঠেছে ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সদস্যরা। এছাড়া, তার অর্থ চুরির ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ সাধারণ সদস্যদের।
আওয়ামীলীগের ১৬ বছরের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ছাড়াও ৫ বছর আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদের চেয়াম্যান থাকায় সুযোগটি কাজে লাগায় ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। আনোয়ার হোসেনের কারণে তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেনি।
জানা গেছে, বিগত তিন বছর ধরে নানা কায়দায় সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ আকড়ে আছে দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন তার আপন ভাই হওয়ায়, আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে প্রথমে কমিটিতে স্থান করে নেয় চুন্নু। কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েই নানা অর্থ কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়ে সে।
তার এই সব অপকর্মের বিরোধীতা করেন ডা.
সেই কমিটির প্রধান এড. শওকত হোসেন ও চুন্নুর যোগসাজশে অবৈধভাবে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয় বলে জানায় ওই কমিটির সদস্য, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সমিতির আজীবন সদস্য আজিজুল্লাহ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী সঠিক ছিলেন। তার সদস্যপদও সঠিক ছিলো। অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। সদস্য পদের বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রধান ছিলেন এড. শওকত হোসেন। সেই কমিটিতে আমিও ছিলাম। তবে, আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে পুরো তদন্ত প্রতিবেদন পড়তে না দিয়েই স্বাক্ষর নেয়া হয়।
ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল করার পর আমি এই সিদ্ধান্তের রিভিও আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু আমাকে সেই রিভিওর বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। তাই আমি জোর গলায় বলছি, অবৈধভাবে ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্য পদ বাতিল করার কারণে আর কোনো বাধাই ছিলোনা চুন্নুর সামনে। ফলে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠন থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করে চুন্নু, অভিযোগ সাধারণ সদস্যদের। এমনকি গত নির্বাচনের আগে নিজের সকল অপকর্ম জায়েজ করতে শামীম ওসমানের বেয়াই লাভলুকে তার সাথে যুক্ত করে।
লাভলুকে যুক্ত করে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকে চুন্নু। সর্বশেষ নির্বাচনের আগে জেলার অন্যতম সজ্জ্বন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাশেম জামালকে সভাপতি পদে আসীন করেন।
তিনি ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে ব্যস্ত থাকায় খুব একটা সময় দিতে পারেন না এই সংগঠনে, এই সুযোগে আবারও প্রতিষ্ঠানের অর্থ নিজের পকেটে ভরতে থাকে চুন্নু। এমনকি, গত ৩ বছরে একটিও এজিএম বা বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করেনি চুন্নু গং।
যেখানে প্রতিবছর এজিএম করে সকল আয়-ব্যয় ও অর্থের হিসেব সকল সদস্যকে বুঝিয়ে দিতে হয় সেখানে একটি টাকারও হিসেব দেয়নি এই চুন্নু। এজিএম ছাড়াই তার অপকর্ম ঢাকতে এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি সাধারণ সদস্যদের।
তারা একটি প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব ছাড়া কিভাবে নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এখানে চুন্নুর চালাকি রয়েছে বলেও মনে করেন তারা। তাদের মতে, নিজের অর্থ কেলেংকারীর বিষয়টি ঢাকতেই তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিয়ে এখান থেকে সটকে পড়ার ফন্দি আঁটে চুন্নু।
এসকল বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সমিতির আজীবন সদস্য এ ওয়াই এম হাসমত উল্লাহ বলেন, ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর আশেপাশে যারা ছিলো তারা তার সাথে বেঈমানী করেছে। গত তিন বছরে একবারও এজিএম হয়নি, গত তিন বছরের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসেব দেয়নি চুন্নু। কেন দেয়নি তা আপনারা জিজ্ঞাসা করেন।
একই বিষয়ে আজিজুল্লাহ বলেন, ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল অবৈধ, তিনি সঠিক ছিলেন, ষড়যন্ত্র করে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কথিত যেই ঠুনকো অভিযোগের ভিত্তিতে ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে সেখানে বাকী তিন সদস্যের বিষয়ে চুন্নু গংরা চুপ।
আরও যে তিনজনের নাম কাটাকাটি ছিল তারা হলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় নাজিম উদ্দিন মাহমুদ, আব্দুস সাত্তার চেয়ারম্যান এবং অহিদ ভুইয়া। তাদের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যদিও নামের কাটাকাটিতে হাতের লেখা স্বয়ং প্রয়াত সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের।
নির্বাচনের বিষয়ে আজিজুল্লাহ বলেন, গত তিন বছরে কোনো আয়-ব্যয়ের হিসেব দেয়নি চুন্নু। হিসেব ছাড়া কিভাবে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। চুন্নু বলেন, গত ৩ বছর এজিএম দেইনি তো কি হয়েছে, এবার দিবো, নির্বাচনে আগে কিংবা পরে। ডা. শাহনেওয়াজের সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে কমিটি হয়েছিলো, সেই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার সদস্যপদ বাতিল হয়েছে। এছাড়া, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগকে তার বিরুদ্ধে প্রোপাগ্রান্ডা বলে দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত: প্রয়াত সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের উদ্যোগে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, এরপর দীর্ঘ ১৫ বছর সহ-সভাপতি ও দীর্ঘ ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র সদস য পদ ব ত ল আওয় ম ল গ র ন র য়ণগঞ জ ত র সদস য ই কম ট কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে কিশোর, ৬ দিন পর ঢাকা থেকে উদ্ধার
ইন্দুরকানীর নিখোঁজ কিশোর সাব্বির হোসেনকে ছয় দিন পর ঢাকার নারায়ণগঞ্জের এক রিকশাচালকের বাসায় পাওয়া গেছে। তিন দিন আগে রাস্তায় অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন ওই রিকশাচালক।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইন্দুরকানী গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল শেখের ছেলে সাব্বির হোসেন কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে নেমে সেখান থেকে আটো গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিল। এ সময় অটোতে থাকা অজ্ঞান পার্টির লোকজন তাকে অজ্ঞান করে টাকা, মোবাইল ফোনসহ সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে যায়। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়। গভীর রাতে সাব্বিরকে পরে থাকতে দেখে রিকশাচালক আব্দুর জব্বার তাঁকে তাঁর বাসায় নিয়ে যায়। তিন দিন পর তার জ্ঞান ফেরে। শনিবার বিকেলে সাব্বির ফোন করে তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়।
সাব্বিরের বাবা জলিল শেখ বলেন, ছেলের খোঁজ না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। খুব চিন্তায় ছিলাম। তাকে অজ্ঞান পার্টি ধরেছিল। এক রিকশাচালক ভাই তাকে উদ্ধার করেছে। তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মারুফ হোসেন জানান, নিখোঁজ সাব্বিরকে ঢাকায় পাওয়া গেছে বলে তার পরিবার জানিয়েছে।