সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল বাস্তবায়ন যে প্রক্রিয়ায়
Published: 27th, January 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকছে না সাত কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজকে ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি আলোচনা সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে তাদের সব কার্যক্রম শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে করা হবে। তবে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন, তাদের সব কার্যক্রমে ঢাবি প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
২০১৭ সালে সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তৎকালীন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছিলেন- কলেজের সিলেবাস প্রণয়ন, ভর্তি কার্যক্রম, পরীক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ, সনদ প্রদানসহ যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবে। এরপর থেকে নানা সময়ে জটিলতার কারণে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।
রোববার দিবাগত রাতে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদের বিরূপ আচরণকে কেন্দ্র করে ঢাবি ও ৭ কলেজের সংঘাতের পর সোমবার অধিভুক্তি বাতিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এলো।
সোমবার লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে-
১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজকে সম্মানজনক পৃথকীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২) অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে এবছর থেকেই অর্থাৎ ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি না নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৩) শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সভায় জোর সুপারিশ করা হয়।
৪) ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
৫) যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং ধৈর্যধারণ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় তবে উপাচার্য কোনো উত্তর দেননি। লিখিত বক্তব্যের বাইরে আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি সম্মেলনে।
যে প্রক্রিয়ায় অধিভুক্তি বাতিল বাস্তবায়ন
সিদ্ধান্ত কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দীন লিটন সমকালকে বলেন, নিয়মানুযায়ী এ সিদ্ধান্তটি আমাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটে যাবে। সেখানে চূড়ান্তভাবে গৃহীত হবে।
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের যেসব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেছে অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হিসেবে ভর্তি করেছে সেসব শিক্ষার্থীর কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-বিধিমোতাবেক পরিচালিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে দেবে।
‘তবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আর সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা হবে না। ওই সময় সাত কলেজে শিক্ষার্থী কীভাবে ভর্তি করা হবে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি দেখবে। তারা সিদ্ধান্ত নেবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করবে’ যোগ করেন তিনি।
সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ ঢাবি শিক্ষার্থীদের
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র আবদুল কাদের বলেন, বিগত সময়ে সাত কলেজকে অধিভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের সময়ে। এটা আসলে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, নানা ভোগান্তি এবং জটিলতা তৈরি হয়। বিগত সাত, আট বছরে দাপ্তরিক কাজ থেকে প্রত্যেক কাজে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন সংঘর্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অতীতে দেখেছি সিদ্ধান্ত নিলেও এটি কার্যকর করা হয় না। অবশ্যই এটিকে সাধুবাদ জানাই। তবে এটি যেন কার্যকর করা হয়। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকতে চাই।
এদিকে সাত কলেজের আন্দোলনের প্রতিনিধি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন রাকিব সমকালকে বলেন, অধিভুক্তি বাতিলের দাবি আমরা করেছিলাম। এটি আদায় হওয়া আনন্দের। তবে রানিং শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম কীভাবে কোথায় হবে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে হবে।
এর আগে উপাচার্যের কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ছিদ্দিকুর রহমান খান, বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন আব্দুস সালাম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন রাশেদা ইরশাদ নাসির, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুলাহ আল মামুন, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দীন আহমেদ, হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম, কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) আমজাদ হোসেন শিশির উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ত কল জ সব শ ক ষ র থ ন য় জ আহম দ ৭ কল জ র ন আহম দ পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সুপার ক্লাসিকোতে কি নেইমার খেলবেন
লম্বা সময়ের বিরতির পর এই মাসে ফের মাঠে গড়াবে ফুটবলের আন্তর্জাতিক লড়াই। সেই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবে দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো। যেখানে সবচেয়ে বেশি চোখ থাকবে ২৬ মার্চ বুধবার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচের দিকে। সুপার ক্লাসিকোর এই ম্যাচ ঘিরে উত্তাপ এরই মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রথম লেগের ম্যাচে মারাকানায় আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল ব্রাজিল। সেই হারের কারণে এই ম্যাচ নিয়ে নিশ্চিতভাবেই চাপে থাকবে ব্রাজিল। এটি তাদের জন্য প্রতিশোধের ম্যাচও বটে। এই ম্যাচের আগে আরও একটি বিষয় জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। এই ম্যাচে ব্রাজিলের সেরা তারকা নেইমারকে দেখা যাবে তো?
২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর উরুগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে চোটে পড়েন নেইমার। এরপর জাতীয় দলে আর ফেরা হয়নি তাঁর। এবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দলে ডাক পেলে সেটি হবে প্রায় দেড় বছর পর তাঁর দলে ফেরা। শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হয়ে উঠবেন নেইমারই।
আরও পড়ুনমেসিকে পেনাল্টি নেওয়া শিখিয়েছিলেন নেইমার২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫চোট কিংবা অন্য কোনো নাটকীয়তা না হলে নেইমারের ফেরা অনেকটাই নিশ্চিত। এর মধ্যে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) দেওয়া ৫২ জনের প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়েছে তাঁকে। তবে চূড়ান্ত ঘোষণার সময় এই দল নামিয়ে আনা হবে ২৩ জনে, আর এই দলটি ঘোষণা করা হবে ৮ মার্চ।
লিওনেল মেসি ও নেইমার