শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ালে কারো জন্যই শুভ হবে না: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান
Published: 27th, January 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, গতরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাটি উস্কানিমূলক ছিল কি না, তা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা খতিয়ে দেখছেন। এত বড় সহিংসতার প্রয়োজন ছিল কি না বা ঘটনাটি মীমাংসার সুযোগ ছিল কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারতে বলব। কারণ যখন আমাদের দেশ গড়ার সময়, তখন যদি এই রকম সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ি তাহলে সেটা কারো জন্যই শুভ হবে না।
সোমবার দুপুরে ফরিদপুরের নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫৫তম পরিচালনা বোর্ডের সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। পরে তিনি নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী সমাজের ওপর আমরা অনেক বড় একটা ভরসা রাখি। দেশে যে ফ্যাসিজম চলে গেল এবং গণতন্ত্রের পথের যাত্রার সুযোগ তৈরি হলো, এ জন্য শিক্ষার্থীদেরকে আমরা সব সময় অভিবাদন জানাই। তারা যেন এই জিনিসটাই তাদের মনোজগতে রাখেন। গণতন্ত্রে যাওয়ার পথে এমনতিইে খুব কঠিন। তারপর আমরা যখন যাত্রাটা শুরু করলাম, তখন কোনো আচরণের কারণে সেটা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।
ভারতের অরুণাচলের সিয়াং নদী ও চীনের তিব্বত সীমানার নদীর বাধ নির্মাণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চীনের যে পরিকল্পনা, সেটা আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এবং এটা হলো, বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। সে ব্যাপারে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবেই চীনকে জানিয়েছি ও প্রকল্প সম্পর্কে আমরা জানতে চেয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে চীন আমাদের জানিয়েছে, তাদের এই প্রকল্পের কারণে আমাদের দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। আর ভারতের যেখানে বাধ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, সেখানে তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে। অতএত দুটি বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে তারা যেন কাজ করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।
নদী গবেষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা নদ-নদীর কথা বলি। নদী রক্ষার কমিশনের কথা বলি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কথা বলি। কিন্তু এত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট আছে, সেটা সম্পর্কে কেউ কথা বলে না। অথচ তার যে কার্যপরিধি, সেখানে যদি তাকে ঠিকমতো এটা বরাদ্দ দেওয়া হয়, আর সেই বরাদ্দ সঠিকভাবে খরচ করা হয়, তাহলে অনেক ভাল ভাল কাজ আমরা নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে করতে পারি। তাই গবেষণার জন্য আগামী বাজেটে পর্যাপ্ত না হলেও বড় বড় কিছু বরাদ্দ আনতে আমরা চেষ্টা কবর।
বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, বালু উত্তোলন অনেক বড় একটা ব্যাপার এবং বিরোধেরও জায়গা। বালু উত্তোলনের ফলে নদ-নদীতে কি প্রভাব পড়ছে, সে বিষয়ে গবেষণা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পানি সম্পদ সচিব মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র জওয় ন উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
চীন, ভিয়েতনাম, ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মোট রপ্তানি আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি আসে ইইউতে পণ্য রপ্তানি থেকে। চলতি পঞ্জিকা বছরের প্রথম দুই মাস অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে প্রতিযোগী সব দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের পোশাক। এ সময় বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৭ শতাংশ। ভারতের ২৬, চীনের ২৫ ও ভিয়েতনামের ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশের স্বস্তিকর এ রপ্তানি প্রবাহ আগামীতে ধরে রাখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং রপ্তানিকারকদের অনেকে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি চীন-ভিয়েতামের পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশ দুটির পণ্য রপ্তানি কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে চীনা পণ্য রপ্তানি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এতে বাধ্য হয়ে অন্য বাজারে একটা চাপ তৈরি করবে চীনা পণ্য।
গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশহ ৬৫ দেশের পণ্যে অতিরিক্ত বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের নজিরবহীন ঘটনার পর বিভিন্ন আলোচনায় এ উদ্বেগের কথা বলে আসছেন অর্থনীতিবিদ, বাণিজ্য বিশ্লেষক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা। নতুন ঘোষণা বহাল থাকলে বাংলাদেশের পণ্যে মোট শুল্কভার দাঁড়াবে ৫২ শতাংশ। ভিয়েতনামের পণ্যে ৬১ শতাংশ। চীনের পণ্যে শুল্ক হার হবে ১৪৫ শতাংশ। যদিও গত ৯ এপ্রিল থেকে ৯০ দিনের জন্য বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ চীন বাদে অন্য সব দেশের পণ্যে বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখা হয়েছে।
ইইউতে রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়
ইইউর বাজারে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তালিকায় শীর্ষ স্থানে বরাবরের মতো চীন। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্যান্য বাজারের মতো ইইউর বাজারে রপ্তানিতে শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় নেই ভিয়েতনাম। দেশটির অবস্থান এখানে ষষ্ঠ। তুরস্ক সেখানে তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। চতুর্থ এবং পঞ্চম অবস্থানে যথাক্রমে ভারত ও কম্বোডিয়া। শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় পাকিস্তান সপ্তম, মরক্কো অষ্টম, শ্রীলঙ্কা নবম। আর দশম অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
ইইউর সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৫৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৩৬৯ কোটি ডলারের কিছু বেশি। তুরস্কের রপ্তানির পরিমাণ ১৬১ কোটি ডলার। ভারতের ৮৭ কোটি ডলারের কিছু কম। কম্বোডিয়ার ৭৮ কোটি ডলার এবং ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ৭৬ কোটি ডলার। ওই সময়ে মোট ১ হাজার ৬১০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইইউ দেশগুলো।
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, অনেকগুলো কারণে ইইউতে রপ্তানিতে এই ইতিবাচক প্রবণতা। ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পর চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানিতে মূল্য সংযোজিত পণ্যের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। নিরাপত্তা উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশের প্রতি ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। হাতে রপ্তানি আদেশের পরিমাণ বেশ ভালো।
হুমকি হয়েই থাকবে ভিয়েতনাম!
আগামী বছরের নভেম্বর মাসে এলডিসি থেকে চূড়ান্ত উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। পরবর্তী তিন বছরও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। এর পর আর এ সুবিধা থাকবে না। বাংলাদেশ যে ধরনের পণ্য রপ্তানি করে থাকে, সেগুলোর ওপর তখন গড়ে ৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। অন্যদিকে প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) পুরোপুরি কার্যকর হবে ২০২৭ সালে। অর্থাৎ ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের আজকের অবস্থান পুরোপুরি বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আশঙ্কা, ইইউ এবং অন্যান্য বাজার মিলে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি আয় হারাবে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে ইইউ-ভিয়েতনাম এফটিএ আংশিকভাবে কার্যকর হয়। এখন পর্যন্ত ভিয়েতনামের ৭১ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ভোগ করছে। এ তালিকায় তৈরি পোশাক নেই। গড়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ শুল্কারোপ রয়েছে পোশাক পণ্যে।