ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেলেই সমাধানে ছুটে যাওয়া এই ‘মাথা গরম’ ছেলেটার দোষ: সারজিস
Published: 27th, January 2025 GMT
রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা সামাল দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এমন পরিস্থিতিতে হাসনাতের পাশে দাঁড়ালেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সমালোচনাকারীদের জবাব দিতে তিনি হাসনাতের পাশে দাঁড়িয়ে সারজিস বলেন, এই মাথা গরম ক্ষ্যাপা ছেলেটার (হাসনাত আব্দুল্লাহ) দোষ হচ্ছে- যখনই কোথাও অস্থিতিশীল অবস্থা দেখা দেয়, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায় তখনই কোনোকিছু চিন্তা না করে সমাধানের জন্য ছুটে যায় হাসনাত। হোক সেটা ক্যাম্পাস, রাজপথ কিংবা অন্য কোথাও।
সোমবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব কথা বলেন সারজিস। সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি সমকালের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
সারজিস আলম বলেন, আশপাশে এমন বহু শত্রু আছে যারা সুযোগ পেলে খুন করে ফেলবে, এটা জানার পরও মবের মধ্যে ঢুকে মারামারি থামানোর কথা বলতে হেডম লাগে। অন্য কেউ এই সাহস করে নাই। সাহস করেছে হাসনাত আবদুল্লাহ। সাহসটা করার জন্যে হাসনাতকে মাথায় তুলে ফেলতে হবে সেটা বলছি না, তবে ন্যূনতম এপ্রিশিয়েটটা অন্তত করতে শিখেন। হয়ত ফলাফল প্রত্যাশিত হয়নি কিন্তু এর চেয়েও খারাপ কিছু হতে পারতো ৷ সবচেয়ে বড় কথা উদ্দেশ্য সৎ ছিল।
হাসনাতের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই ছেলেটার সমস্যা হলো এর মাথা গরম আর সবসময় গ্রেটার পার্সপেক্টিভ চিন্তা করে। কিন্তু সত্যি এটাই যে, মাথা গরম বলেই সেই জুলাইয়ে ভিসি চত্ত্বরে গায়েবানা জানাজা শেষে যখন সবাই পুলিশের টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড আর ছোররা বুলেট দিকবিদিক ছুটে যাচ্ছিল তখন এই ছেলেটা সর্বপ্রথম স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ওই পুলিশের দিকে দুই হাত প্রশস্ত করে এগিয়ে যায় আর বলে উই আর ওপেন টু কিলড। ঠিক যেমনিভাবে গতকাল গিয়েছিল।
সারজিস বলেন, এই ছেলেটাই সেই জুলাইয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে রাজাকার রাজাকার মিছিলের সামনের সারিতে মাঝখানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যখন অনেকেই নিজেকে সেফ জোনে রেখেছিল। এই ছেলেটাই সর্বপ্রথম এবং একা সচিবালয়ে আনসার লীগের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে এবং পরবর্তী সময়ে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় সচিবালয় অনেকটা সুরক্ষিত হয়ে ওঠে। এই ‘মাথা গরম’ ক্ষ্যাপা ছেলেটার দোষ হচ্ছে যখনই কোথাও অস্থিতিশীল অবস্থা দেখা দেয়, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায় তখনই কোনো কিছু চিন্তা না করে সমাধানের জন্য ছুটে যায়। হোক সেটা ক্যাম্পাস, রাজপথ কিংবা অন্য কোথাও।
আপনারা যারা শুধু ঘরে বসে স্যোশাল মিডিয়ার ঝড় তুলতে পারেন তাদের মতো সেইফ গেম প্লে না করতে পারাটা হাসনাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু তিক্ত সত্য এটাই যে, এই মাথা গরম স্বভাবওয়ালা ক্ষ্যাপা তরুণ প্রজন্মের কারণেই এই নতুন বাংলাদেশ।
সারজিস আলম স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করেন, কতজনের এখন কতরকম স্বার্থ আর ধান্ধা সেটা আমরা বুঝি, অপ্রত্যাশিত কিছু হলে এরা যে আবার গর্তে যাবে সেটাও জানি। কিন্তু দিনশেষে চোখের সামনে রক্ত আর হাজারো জীবনের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীনতা রক্ষা করতে হাসনাতরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপনাদের মতো গুটিকয়েক ভণ্ড, সুবিধাবাজ, কালপ্রিট কী বললো আর কী বিহেভ করলো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। হাসিনার পোষারা এর চেয়ে কম বলেনি বা করেনি। মিনিমাম কমনসেন্স থাকলে বোঝা উচিত কারা করসে, কেন করসে। রকেট সাইন্স না বোঝাটা।
শেষে সারজিস আরও বলেন, আমরা হাসনাত এবং হাসনাতের সহযোদ্ধা হতে পেরে গর্বিত।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিভেদে না জড়ানোর আহ্বান রাজশাহী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ থেকে বিভেদে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সংগঠনের জেলা ও মহানগরের কমিটি ঘোষণা করা হয়। আজ শুক্রবার সকালে কিছু শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তোলেন, চাঁদাবাজ, আওয়ামী দোসর ও হত্যা মামলার আসামি কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। প্রকৃত বিপ্লবীরা স্থান পাননি। টাকার বিনিময়ে জেলা ও মহানগরের কমিটি দেওয়া হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলা হয়।
আরো পড়ুন:
নৈতিক শিক্ষা দিলে শিক্ষার্থীরা দেশের সম্পদ হবে: আরএমপি কমিশনার
রাজশাহীতে ডা. সাদির মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
আরো পড়ুন: রাজশাহীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বাতিলে আলটিমেটাম
এরই প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে যৌথভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন সংগঠনের নবগঠিত জেলা কমিটির মুখপাত্র রোহানা হক সেতু ও মহানগরের মুখপাত্র আঞ্জুমান আরা হক আরশী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখার কমিটি আগামী ৬ মাসের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটিকে বিতর্কিত করতে চাওয়া একটি বিশেষ গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ষড়যন্ত্র করতে নানাবিধ চক্রান্তে ইতোমধ্যে লিপ্ত হয়েছে।”
কোনোভাবেই কোনোরকম ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না উল্লেখ করে বলা হয়, “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ইস্যুতে আমরা সকলকে পাশে চাই ও যৌক্তিক সকল আন্দোলন সংগ্রামে আমরাও পাশে সর্বদা অবস্থান করব।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আমাদের অনেক সহযোদ্ধা আছেন যাদের নাম এই দুই কমিটিতে আসেনি, তাদের সবার নাম দ্রুতই গঠিত হতে যাওয়া উপজেলা কমিটিগুলোতে ও বিশেষ সেলগুলোর এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বাছাইকৃত সহযোদ্ধাদের বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
“সুতরাং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলার আন্দোলনকারী সকল ভাই-বোনকে পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভেদে না জড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই মিলে আমরা একটি সুন্দর আগামীর প্রত্যয় নিয়ে সামনে অগ্রসর হব।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ