ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনে একমত বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন
Published: 27th, January 2025 GMT
ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ ১০ দফায় একমত হয়েছে বিএনপি ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের বৈঠকে এ ঐক্যমত হয়।
সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বেলা সোয়া ১২টার দিকে কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। বৈঠকে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমাদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামী এবং চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনের দীর্ঘ আদর্শিক বিরোধ থাকলেও ২১ জানুয়ারি দু’দলের প্রধানের দেখা হয়। রেজাউল করীমের সঙ্গে বরিশালের চরমোনাই গিয়ে জামায়াত আমির ডা.
বিএনপির একাধিক নেতা একে ‘স্বাধীনতাবিরোধী এবং ফ্যাসিবাদের সহযোগীর মিলন’ আখ্যা দিয়ে কটাক্ষও করেন। এর ছয়দিনের মধ্যে চরমোনাই পীরের সঙ্গে সাক্ষাত করলেন মির্জা ফখরুল ।
তাঁদের বৈঠক এমন সময়ে হলো, যখন চরমোনাই পীর জামায়াতসহ অন্য ধর্মভিত্তিক দল নিয়ে ইসলামী জোট গঠনে সক্রিয় হয়েছেন। চাঁদাবাজি, দখলের জন্য বিএনপি নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করছেন। বিএনপি শাসনামলের ব্যর্থতার ফিরিস্তি দিয়ে দলটি ক্ষমতায় যেতে মরিয়া বলে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন। সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা বলছেন। একই কথা বলছে জামায়াত। তবে দ্রুত নির্বাচনে গুরত্ব দিচ্ছে বিএনপি।
আজকের বৈঠকে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে তা হলো-
১. আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম টেকসই গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।
২. দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।
৩. ভোটাধিকারসহ সকল মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা।
৪. ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৫. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করা।
৬. আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শক্তির দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।
৭. ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিগুলো একে অপরকে আঘাত করে কথা বলবে না।
৮. আর যাতে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐক্য।
৯. ইসলামী শরিয়াহ বিরোধী এবং ইসলাম বিরোধী কথা না বলা।
১০. প্রশাসনে বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ চরম ন ই ব এনপ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘এক বাক্সে ভোট পাঠাতে’ সমমনা ৫ ইসলামি দলের ঐকমত্য
‘একটি বাক্সে ভোট পাঠাতে’ সমমনা পাঁচ ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতারা একমত হয়েছেন। আজ বুধবার সমমনা দলের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংলাপে এ বিষয়ে নেতারা একমত হন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার, নির্বাচন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এই সংলাপ করে ইসলামী আন্দোলন।
বেলা সোয়া একটায় সংলাপ বৈঠক শেষ করে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, ‘আমরা সমমনা পাঁচটি ইসলামী রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছি। সামনে জাতীয় নির্বাচন, আমরা যেন ইসলামি দলগুলো একটি বাক্সে ভোট পাঠাতে পারি, বিষয়টি নিয়ে কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। অনেকের আন্তরিকতা প্রকাশ পেয়েছে। আলোচনায় আমরা সন্তুষ্ট।’
প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো শেষ হওয়ার পরই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘বিদেশিরা যাতে বাংলাদেশকে নিয়ে টালবাহানা না করতে পারে, এর প্রতিবাদ করার বিষয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। ইসলামি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়ও আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’
নারী সংস্কারবিষয়ক কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়ে রেজাউল করীম বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি। তা না করলে প্রতিবাদে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের বিচার ও টাকা ফেরত আনার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন করতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটি শেষ সংলাপ নয়, জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, এই আনুষ্ঠানিকতা আজই শেষ নয়। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ধারাবাহিকভাবে এই কার্যক্রম (সংলাপ) চলবে।
সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় কত দিন, এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে নির্ধারিত সময় বলা যায় না। তবে সংস্কার যাতে দ্রুত হয় এটাই আমাদের চাওয়া।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপ ধারাবাহিকভাবে চলবে বলে জানান উপস্থিত রাজনৈতিক দলের নেতারা।
ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আজকের সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস অংশ নেয়।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী আন্দোলন সংস্কারকে মুখ্য বিবেচনা করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে। নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেয়া এবং নারী কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশ নিয়ে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, সহসভাপতি মাওলানা আবদুল কুদ্দুস কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ।
আরও উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, সহসভাপতি মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারি, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করীম আবরার প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে দলটির মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মুসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।