ঢাবি প্রো-ভিসি মামুনের পদত্যাগসহ ছয় দাবিতে ৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
Published: 27th, January 2025 GMT
সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি ঘোষণা চার ঘণ্টার আলটিমেটাম বেঁধে দিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আজ সোমবার ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সজীব উদ্দীন কথা বলেন।
সজীব উদ্দীন বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিব না। আগামী চার ঘণ্টার মধ্যে আমাদের আহত ছাত্র রাকিবের হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখী করতে হবে। বিকেল ৪টার মধ্যে প্রো-ভিসি মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে, তা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।
তাদের সাত দাবির মধ্যে রয়েছে-
১.
২. ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশে হামলাসহ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় এসি, ওসিসহ জড়িত পুলিশ সদস্যের প্রত্যাহার করে তদন্তসাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীদের দ্বারা ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেচ্ছা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসি সদস্য এবং ঢাবি ভিসির সমন্বয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সঙ্গে তাৎক্ষণিক উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এ ঘটনার সমাধান করতে হবে।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এরিয়ায় সিটি করপোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা, পুলিশের একপেশে আচরণের প্রতিবাদে গতকাল রাত ৩টার দিকে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য নিজ নিজ কলেজের সামনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
আজ বেলা ১২টার দিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়ক অবরোধ করেননি। তবে এই সময়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হন।
ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হওয়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শহীদ মিনারের সামনে আজ দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন।
রোববার রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নীলক্ষেত মোড়-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনের এ ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকা। মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপে মধ্যরাতে কেঁপে ওঠে আশপাশ। সারা রাত উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। থেমে থেমে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রাতে ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোমবারের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সব চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ঢাবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাত কলেজের সোমবারের (২৭ জানুয়ারি) সব পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। এই পরীক্ষার তারিখ পরে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ত কল জ স ত কল জ র শ ক ষ র থ ন আহম দ পদত য গ র স মন পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট
আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।
পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।
এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে।
আরো পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা
এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও।
রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।
প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”
অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”
অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”
গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”
কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”
স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ