একত্রে থাকতে হবে গণঅভ্যুত্থানের সব শক্তিকে
Published: 27th, January 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব শক্তিকে একসঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ন, গণপূর্ত ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
রোববার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে গণঅভ্যুথানে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ১৬ শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হয়।
আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদ বারবার আসার চেষ্টা করবে, আমাদের প্রধান কাজ তাদের প্রতিহত করা। ফ্যাসিবাদ যেন কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে চিরস্থায়ীভাবে মাটিচাপা দেওয়া হবে। কিন্তু সেই চিরস্থায়ীভাবে মাটিচাপা দেওয়ার পরও তারা আবার বের হওয়ার চেষ্টা করে; তাই প্রতিহত করার জন্য ভিজিলেন্স থাকতে হয়।’
৫ আগস্টের শক্তির মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা হতে দেওয়া যাবে না। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুথানের সব শক্তিকে একসঙ্গে থাকতে হবে; যেন ফ্যাসিবাদ কখনও ফিরে আসতে না পারে; যেন অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশে আগ্রাসন চালানোর সুযোগ না পায়। যেন সাহস না পায়।’
বাংলাদেশের গড়ে তোলা প্রতিরোধ সারা পৃথিবীর কাছে একটা শিক্ষণীয় ব্যাপার হয়ে আছে বলেও উল্লেখ করেন আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর তরুণেরা যখন সংগ্রাম করবে, তখন বাংলাদেশের তরুণদের মতো করবে।
জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসিরউদ্দিন এলান, ছাত্র প্রতিনিধি আদৃতা ইবনাদ নাবিলা, আজিম আহমেদ সিফাত, আরাফাত রায়হান সাকিব, শহীদ সজল মোল্লার ভাই সাইফুল ইসলাম, শহীদ আশরাফুল ইসলাম অন্তরের মা হামিদা ভানু প্রমুখ।
সংস্কার ও নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচনের উত্তর হঠাৎ করে দিতে পারব না। কেন দিতে পারব না; সেটাও জানেন। এ ব্যাপারে আমি এককভাবে একটা কথা বলে গেলে কাজ হবে না। কারণ, এখানে আমাদের অবস্থানটা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপরে। এর অন্যথা (হলে) কী হতে পারত সেটাও আপনারা জানেন।’
গণঅভ্যুথানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি এ সময় বলেন, অভ্যুত্থানের প্রায় ছয় মাস হয়ে গেছে। হতাহতের পরিবারের অসংখ্য প্রশ্ন, তাদের যেসব আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা অবাস্তবায়িত অবস্থায় আছে। তাদের সন্তানদের আত্মত্যাগ এখনও জ্বলন্ত।
এ সরকারের অনেক চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। কীভাবে চেষ্টা করছি? মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে দায়িত্ব নিয়েছে; এই জুলাইয়ের যোদ্ধারা একইভাবে দায়িত্ব নেবেন। সেটার অধিদপ্তরও প্রায় তৈরি হয়ে গেছে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সেই মাহুত বললেন, ‘হাতির কাছে গেলে আমার কইলজা ফাইটা যায়’
গত বছর ঈদুল ফিতরে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার মাহুত আজাদ আলী ও তাঁর ছেলে জাহিদ হাসান একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। পরে একসঙ্গে ভাত খান। খাওয়া শেষে নিজেই ছেলেকে নিয়ে হাতির খাঁচায় যান আজাদ। সেখানে রাজা বাহাদুর নামের হাতির আক্রমণে ছেলের মৃত্যু হয়।
আজ জাহিদ হাসানের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গ্রামের বাড়িতে মৃত্যুবার্ষিকীতে ছোট পরিসরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মাহুত আজাদ আলীর সঙ্গে আজ মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে জানান, ছেলের মৃত্যুর পর থেকে চিড়িয়াখানার হাতি শাখায় কাজ করতে ইচ্ছে করে না তাঁর। তাই অন্য শাখায় স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন। তবে কাজ হচ্ছে না।
আজাদ আলী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালবেলা আমি হাতির কাছে গেলে আমার কইলজা (কলিজা) ফাইটা টুকরা টুকরা হই যায় ভাই। যে হাতিডা আমার ছেলেরে আছাড়িয়া মারছে, এই জিনিসটা ব্যবহার করিয়া, এই জিনিস পালিয়া আমি ভাত খাইমু ভাই। আল্লায় কি মানুষরে দুনিয়ায় একটাই কর্ম দিছে, আর কোনো কর্ম দেয় নাই?’
অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে আজাদ আলী চিড়িয়াখানায় কর্মরত আছেন। তাঁর দুই-আড়াই লাখ টাকা ঋণ আছে বলে জানান। হাতি শাখায় কাজ করতে ইচ্ছে না করলেও ঋণের কারণে চাকরিও ছাড়তে পারছেন না বলে জানান তিনি।
চিড়িয়াখানায় আগে তিনটি হাতি ছিল। চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে রাজধানীর হাতিরঝিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দুটি হাতি জব্দ করে র্যাব। সেই হাতি দুটি দিয়ে চাঁদাবাজি করা হতো। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জব্দের পর সেই হাতি দুটি চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসেন আজাদ।
সেই হাতি দুটির নাম রাজা বাহাদুর ও পান্না বাহাদুর। এর মধ্যে গত বছর ঈদুল ফিতরের দিন রাজা বাহাদুরের আক্রমণে জাহিদ হাসানের মৃত্যু হয়।
আজাদ আলীর অভিযোগ, অতিরিক্ত দুটি হাতি চিড়িয়াখানায় আনা হলেও তার জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। ফলে ছেলের মৃত্যুর পর থেকে হাতি দুটি সরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, মাহুতের ছেলের মৃত্যুর পর হাতি দুটি মূল মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া যায় কি না, সেই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চেয়েছিল তারা। মন্ত্রণালয় বলেছিল, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় রায়ের আগে হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।
আজাদ আলীকে অন্য শাখায় স্থানান্তর প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আজাদ অন্য শাখায় যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তবে তিনি প্রশিক্ষিত মাহুত। তাঁর কাজ অন্য কেউ করতে পারে না। তাই তাঁকে অন্য শাখায় দিলে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেই জায়গা পূরণ করা যাচ্ছে না।
তবে আজাদ আলীর দায়িত্বের জায়গায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজাদের ছেলেকে যে হাতি মেরেছে, সেটির কাছে না গিয়ে অন্য হাতির পরিচর্যা করতে বলা হয়েছে তাঁকে।
যে দুটি হাতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চিড়িয়াখানার কাছে এসেছে, সেগুলো হস্তান্তর করা গেলেও চাপ কমে যাবে। তখন আজাদ আলীকে অন্য জায়গায় দেওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান জাতীয় চিড়িয়াখানার এই পরিচালক।
দুর্ঘটনা হলে ক্ষতিপূরণ দেয় না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষজাতীয় চিড়িয়াখানায় এর আগেও এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালের ৮ জুন হায়েনার কামড়ে মো. সাইফ আহমেদ নামে এক শিশুর ডান হাতের কনুই পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাইফ যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল দুই বছর তিন মাস। এখন তার বয়স চারের কোঠায়। আজ সে তার বাবা সুমন মিয়ার সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছে।
সুমন মিয়া আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তিনি ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ছেলে যখন আক্রান্ত হয়, তখন তিনি পরিবার নিয়ে গাজীপুর থাকতেন। সেখানকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সংসার ভালোভাবে না চলায় মাসখানেক আগে রংপুরের পীরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে এসে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন।
আরও পড়ুনজাতীয় চিড়িয়াখানায় হাতির আক্রমণে মাহুতের ছেলের মৃত্যু১১ এপ্রিল ২০২৪সুমন মিয়া বলেন, একদিকে তাঁর সংসার ঠিকমতো চলে না, অন্যদিকে ছেলে প্রতিবন্ধী হয়ে আছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েও পাননি।
মাহুত আজাদ আলী জানান, তিনিও চিড়িয়াখানার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে পাননি। জাহিদ তাঁর একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল। এখন তাঁর দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের সুরক্ষার স্বার্থে তাঁর চাকরি রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি। তা-ও পূরণ হয়নি।
এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, চিড়িয়াখানায় কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো বিধান বা তহবিল নেই। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার বিধানও নেই। সে কারণেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকে না।
আরও পড়ুনচিড়িয়াখানায় হাতির আক্রমণে মাহুতের ছেলের মৃত্যু, কী ঘটেছিল তখন১২ এপ্রিল ২০২৪