জুলাই আগস্টে আহতদের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে: চীনা রাষ্ট্রদূত
Published: 27th, January 2025 GMT
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এইচ. ই ইয়াও ওয়েন বলেছেন, গত বছর জুলাই আগস্টের আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চীন ঢাকায় একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা ও আশপাশের শহরের বর্জ্য প্রকল্প স্থাপন করছে। আগামীতে বাংলাদেশের জনগণ আরও সস্তায় বিদ্যৎ ব্যবহার করতে পারবে।
রোববার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুরে ওয়ামি স্ট্রাস্ট মাঠে চীন ও জামায়াত ইসলামির উদ্যোগে আয়োজিত খাদ্যসামগ্রী ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তবে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামির আমির ড শফিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত এইচ ই ইয়াও ওয়েন বলেছেন, চীন সরকারের পক্ষ থেকে গাজীপুরের জনগণের জন্য কিছু শীতের কম্বল ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছি। শীতকালীন তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় অনেকের জীবন মাত্রা দুরুহ হয়ে পড়েছে। এই কম্বল শীত নিবারণে সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতের আমিরকে ধন্যবাদ জানাই, বাংলাদেশের মানুষকে সহায়তা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি এই ওয়ামি স্কুল পরির্দশন করে খুশি হয়েছি। এই স্কুলে অনেক এতিম শিক্ষাথী জামায়াত ইসলামির মাধ্যমে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই এতিম শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানে চীনের পক্ষ থেকে সহায়তা দিবো। আমরা চীন রাষ্ট্রে ভবিষতে এতিম ও শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাব আমাদের চীনের জীবনযাত্রা দেখার জন্য। চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে চীনে কোটির উপরে মুসলমান রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ জামায়াতের আমির পরিদর্শন করে তাদের জীবনমান পরিদর্শন করেছেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন বাংলাদেশ কুটনীতিক সম্পর্ক ভাল রয়েছে। দুই দেশে আরও বন্ধন মজবুত করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। যার বার্তা বাংলাদেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দিবো। তিনি আগামীতে চীনের বর্ষপূতিতে বাংলাদেশের জনগণকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কম্বলসহ খাদ্যসামগ্রী সহায়তা করতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য জামায়াতের ইসলামির আমির ড শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশের যতগুলো বড় প্রকল্প রয়েছে, তার অধিকাংশগুলোতে চীনের সহায়তা রয়েছে। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুতে চীনের আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা পার্টনারশিপ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যা বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে।
জামায়াতের আমির ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসল ম র
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রনাথ-নজরুল কেউই ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না!
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশমালা পেশ করেছে। এতে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে তুলতে বেশ কিছু চমৎকার প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতি সচেতন মানুষ মাত্রই স্বীকার করবেন সুশাসনের জন্য শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বিকল্প নেই। তবে সংস্কার কমিশনের দুটি প্রস্তাব নিয়ে আমার বড় আকারে আপত্তি আছে। তার একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত; অপরটি পরোক্ষ ভোট প্রসঙ্গে।
স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন অপ্রত্যক্ষ ভোটে করার সুপারিশ করেছে। তারা প্রস্তাবনায় বলেছে, এসব ক্ষেত্রে মেম্বার বা কাউন্সিলর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। এরপর তাঁরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে ভোট দিয়ে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
এই নির্বাচনপদ্ধতির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, এতে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচনে নির্বাচক সংখ্যা কম হওয়ায় টাকার বিপুল ব্যবহারের সম্ভাবনা। এতে ভোট কেনাবেচার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হবে। একজন শ্রমিক, মজুর, কৃষক, মালি, মুচি, দলিত সবাইকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। পৃথিবীতে নির্বাচনমাত্রই অর্থের ব্যাপার জড়িত থাকে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তা আরও ব্যাপক।
জামানত ফি ও অন্যান্য ব্যয়ের কারণে গরিব মানুষ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ারই সুযোগ পান না। নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে সেখানে কোনো সিস্টেমিক বৈষম্য তৈরি করার মানে হয় না। এই পদ্ধতি অভিজাততন্ত্রকেই আরও শক্তিশালী করবে। ব্যবসায়ী ও ধনিক শ্রেণির হাতে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে ফেলবে।
তা ছাড়া নির্বাচকমণ্ডলী নির্দিষ্ট হওয়ায় যে সরকার ক্ষমতায়, সে সরকারের মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হয়ে আসবে। ইতিমধ্যে পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তাই বলে। স্কুলগুলোতে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচনে যেমন স্থানীয় সংসদ সদস্যের একচেটিয়া প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সেই একই রকম প্রভাব দেখা যাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে।
সরকার ও সরকারি দলের আকাঙ্ক্ষাই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সরকারদলীয় প্রার্থীর নির্বাচিত হয়ে আসাটা অনিবার্য হয়ে পড়বে। নির্বাচিত ব্যক্তিরা তাঁদের নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিই বেশি মনোযোগী হন। এতে চেয়ারম্যান, মেয়ররা তাঁদের নির্বাচক মেম্বার, কমিশনারদের মনঃতুষ্টির দিকেই মনোযোগী হবেন বেশি। তাঁরা নিজেরাও যেহেতু মেম্বার বা কমিশনারদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবেন, তাতে নিজের নির্বাচনী এলাকার প্রতিও পক্ষপাতমূলক হয়ে ওঠার সমূহ আশঙ্কা আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া শিক্ষিতদের হাতে সব তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত আমরা চাই না। প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হওয়া উচিত। দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী, স্বীকৃত ঋণখেলাপি, অপ্রকৃতিস্থ ছাড়া নাগরিক মাত্রই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, লিঙ্গ বিচারে কোনো বৈষম্য থাকা চলবে না। জনগণের ভোটের অধিকার হবে অবাধ, তাঁরাই নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। পরোক্ষ নির্বাচনের নামে ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।২.
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে চেয়ারম্যান ও মেয়রের ক্ষেত্রে স্নাতক এবং নির্বাহী সদস্যদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পাস অগ্রাধিকার পাবে বলে বলা হয়েছে। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই কারোর দক্ষতা, যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। সুশিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই স্বশিক্ষিত। যত দিন পর্যন্ত সর্বস্তরে শিক্ষাকে বিনা মূল্যে নিশ্চিত করা না যাচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্থির করে দেওয়া বৈষম্যমূলক প্রস্তাবনা।
বহু শিক্ষার্থী এখনো অর্থের অভাবে ঝরে যায়। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনাই যেখানে কঠিন, সেখানে স্নাতক পর্যন্ত টাকা দিয়ে পড়ার সামর্থ্য কি সবার আছে? দেশের সব উচ্চমাধ্যমিক পাস ছাত্রের জন্য কি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে পর্যাপ্ত সিট আছে? যদি না থাকে, সে ক্ষেত্রে নাগরিককে গণপ্রতিনিধিত্ব থেকে বিরত রাখার অধিকার রাষ্ট্রের নেই।
এ দেশে বহু নারীর বিয়ের পর উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাঁর জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার কেন দেওয়া হবে না? সব স্নাতক পাস ব্যক্তিই কি সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হন! পৃথিবীতে বহু রাষ্ট্রনায়কই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত না হয়েও রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন সফলভাবেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন, জেমস মনরো, এন্ড্রু জ্যাকসন, উইলিয়াম হ্যানরি হ্যারিসন, জ্যাকারি টেইলর, মিলার্ড ফিলমোর, এন্ড্রু জনসন, গ্রুভার ক্লিভল্যান্ড, উইলিয়াম ম্যাকেনলি, হ্যারি এস ট্রুম্যান—এঁদের কেউই কলেজ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। কেবল মাধ্যমিক পাস করা স্যার জন মেজর, উইনস্টন চার্চিলসহ কমপক্ষে আটজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দাতেও পা রাখেননি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের জনপ্রিয় নেত্রী জয়ললিতাও ছিলেন কেবল মাধ্যমিক পাস। তামিলনাড়ুর আরেক মুখ্যমন্ত্রী করুণা নিধিও ছিলেন দশম শ্রেণি পাস।
জীবনে স্কুলে না যাওয়া জ্যাকব জুমা দক্ষিণ আফ্রিকার দীর্ঘকাল ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ওমর আল বশির সুদানের সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার এবং সেখান থেকে দীর্ঘকাল ছিলেন সুদানের প্রেসিডেন্ট। আফ্রিকান আমেরিকানদের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠা ফ্রেডরিক ডাগলাসেরও ছিল না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। পৃথিবীর নানা দেশে এ রকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। যাঁরা কোনো রূপ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই সফল রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। কারও কারও শাসনকালের ক্ষেত্রে সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু সেই সমালোচনা কারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি নয়, বরং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব।
আমাদের সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনা রেখেছে, আমাদের বাঙালি সত্তার প্রবাদপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম কেউই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। নজরুলের নির্বাচনের প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে আমাদের সংস্কার কমিশন তাঁকেও উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অযোগ্য ঘোষণা করত! সফল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল থেকে আমাদের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মতে তাঁরা কেউই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা পৌরসভার মেয়র হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
৩.
এখন পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার সুযোগ ধনিক শ্রেণির হাতে অনেকটাই সীমাবদ্ধ। সাধারণ গরিব মানুষের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়াটা এমনিই কঠিন। সেখানে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগকেই নাই করে দিলে তা দেশে চূড়ান্তভাবে একটা অভিজাততন্ত্রের সৃষ্টি করবে। এই জুলাই আন্দোলনেও শত শত শ্রমিক, দোকানদার, মজুর, রিকশাচালক প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, অংশ নিয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধিত্ব পরিবর্তিত রাষ্ট্রে থাকতে হবে। এই আন্দোলন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একার ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া শিক্ষিতদের হাতে সব তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত আমরা চাই না। প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হওয়া উচিত। দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী, স্বীকৃত ঋণখেলাপি, অপ্রকৃতিস্থ ছাড়া নাগরিক মাত্রই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, লিঙ্গ বিচারে কোনো বৈষম্য থাকা চলবে না। জনগণের ভোটের অধিকার হবে অবাধ, তাঁরাই নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। পরোক্ষ নির্বাচনের নামে ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।
আরজু আহমাদ লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট। কেন্দ্রীয় সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি