নিউইয়র্কে কিশোরের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
Published: 27th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তর্কাতর্কির জেরে ১৬ বছরের কিশোরের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন ২৪ বছরের যুবক। এ ঘটনায় কুইন্সের গোয়েন্দারা অভিযুক্ত কিশোরকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। অভিযোগ অনুযায়ী তিনি রোববার সকালে উক্ত যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৬টার পর ১১৫তম প্রিসিঙ্কটের অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কোরোনার ৩৫তম অ্যাভিনিউ এবং ১০২তম স্ট্রিটের কোনে একটি বাড়িতে অভিযুক্তকে ডাকে নেন। এ সময় ২৪ বছর বয়সী বায়রন লেমা-নাউলাকে ৩৫তম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ির ভেতরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। তার গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
লেমা-নাউলাকে দ্রুত এলমহার্স্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে চিকিৎসকারা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ১৬ বছর বয়সী এক পুরুষ সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের পর অভিযোগ আনার প্রক্রিয়া চলছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লেমা-নাউলা ওই বাড়িতে সন্দেহভাজনের পরিবারের কাছ থেকে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। ঘটনার ঠিক আগে নিহত ব্যক্তি এবং সন্দেহভাজন ওই কিশোর একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
স্থানীয় লোকজন আমনিউইয়র্ক মেট্রোকে বলেন, তারা লেমা-নাউলাকে খুব একটা দেখতেন না। তবে যারা তাকে চিনতেন। তারা তাকে ভালো ছেলে বলে বর্ণনা করেছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা লুইস তিনি কাছাকাছি একটি স্থানে কাজ করেন। তিনি জানান, তাকে তিনি ভালোভাবে চিনতেন না। তবে প্রায়শই তাকে সকালে কাজে যেতে দেখতেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। লুইস বলেন, তিনি মনে করেন, নিহত ব্যক্তি ইকুয়েডর থেকে এসেছিলেন।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বাড়িটির নতুন মালিক সম্প্রতি বাসাটি কিনে তরুণ ভাড়াটেদের কাছে ঘর ভাড়া দিচ্ছিলেন। তবে বাড়িটি একটি ‘ঘূর্ণায়মান দরজার মতো’ হয়ে উঠেছিল যেখানে বারবার নতুন মুখ দেখা যেত।
গ্রীষ্মে ওই বাড়ি থেকে অনেক কার্যকলাপ দেখা যেত, যেমন বারবিকিউ পার্টি। তবে, সাধারণত বাসিন্দারা নিজেদের মতো থাকতেন।
২২ বছর বয়সী স্কারলেট অ্যাস্টুডিলো বলেন, আমরা বেরিয়ে এসে দেখলাম পুলিশ অফিসাররা রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং পাগলাটে মনে হয়েছে। আমরা ঠিক জানি না কী সমস্যার কারণে এই মৃত্যু হয়েছে। এটি পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘অবশেষে সফল হলো আমার ৮১তম চেষ্টা’
অভিনন্দন, আজ শুধু তোমাদের শিক্ষাজীবনের বিশেষ দিনটিরই উদ্যাপন হচ্ছে না, আজ শুরু হতে যাচ্ছে তোমাদের জীবনের নতুন এক অধ্যায়। চেনা এই প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যে অপার সম্ভাবনার জগতে তুমি পা রাখতে যাচ্ছ, মনে রেখো এটাই হবে তোমার জীবনের সব অধ্যায়ের মধ্য থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এই সফরের শক্তি হবে তোমার বলিষ্ঠ কণ্ঠ। যখন আওয়াজ তুলবে, সেটা যেন এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য হয়, যেখান সত্য ও সততা তোমাকে পথ দেখাবে। ভয়কে কখনো কণ্ঠরোধের সুযোগ দেবে না। সামনের পথ যত কঠিন আর অনিশ্চিতই হোক না কেন, নিজের প্রত্যয়কে দৃঢ় রেখো। তোমার কণ্ঠই তোমাকে ও অন্যদের অন্ধকার পেরিয়ে আলোর পথ দেখাবে।
একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমি সব সময় গল্প বলতে চেয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নারী, পুরুষ, শিশুর গল্প তুলে এনেছি। এই গল্পগুলো তুলে আনতে গিয়ে আমি তাদের জীবনকে কাছ থেকে দেখেছি। পেয়েছি কিছু সহজ-সরল শিক্ষা, আজ সেগুলোই তোমাদের বলব।
নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকোমাত্র ১৪ বছর বয়সে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। ১৭ বছর বয়সে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিই। ঠিক করি এমন এক বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করব, যে বিষয়টা কেউ ঘাঁটতে চায় না। স্পষ্ট মনে আছে, এক ঈদের দিনে আবিষ্কার করলাম বাড়ির আশপাশে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে কেউ আমার বিরুদ্ধে গ্রাফিতি এঁকেছে। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা, আমাকে চুপ করানো আর ভয় দেখানোই ছিল এই গ্রাফিতির উদ্দেশ্য। কারণ, আমি শহরের কিছু প্রভাবশালীর বিপক্ষে আওয়াজ তুলেছিলাম। আমার অনুসন্ধান তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। আমার বাবা, যাঁর প্রভাব আমার জীবনে অসামান্য, আমাকে সেদিন একটি কথাই শুধু বলেছিলেন, ‘তোমার কথাগুলো যদি সত্য হয়, আমি তোমার সঙ্গে আছি।’ এরপর নিজ হাতে সেদিন প্রতিটা দেয়াল পরিষ্কার করেছিলেন। সেদিন সেই মুহূর্তে শিখেছিলাম, পৃথিবী যতই তোমাকে ভয় দেখাক, ন্যায়ের জন্য সাহস করে দাঁড়িয়ে গেলে সেটাই হবে সবচেয়ে শক্ত হাতিয়ার। আজ যখন তুমি ভবিষ্যতের দোরগোড়ায়, মনে রেখো তোমার একেকটা সিদ্ধান্ত, একেকটা সৎ ও সাহসী পদক্ষেপ তোমাকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলবে। এবার তুমি তোমার স্বপ্নকে অনুসরণ করো, অথবা গতানুগতিক ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করো। যে পথই বেছে নাও না কেন, মাথায় রেখো—তোমার সিদ্ধান্ত শুধু তোমার একার নয়, পুরো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকেও বদলে দিতে পারে।
আরও পড়ুন৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে চাকরির সুযোগ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অদম্য আর জেদি স্বপ্নগুলো আগলে রাখো‘প্যাশন’ হলো সেই চালিকা শক্তি, যা তোমাকে জীবনের চড়াই–উতরাইগুলো পার হতে সাহায্য করবে। আমার জীবনে বরাবরই গল্প বলা আর সত্যকে তুলে ধরার অদম্য আকাঙ্ক্ষা ছিল। অনেক প্রত্যাখ্যানের পরও আমি সম্ভবের সীমানা পেরিয়ে অসম্ভবকে অর্জনের স্বপ্ন দেখতাম।
অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেও ২০০২ সালে সিদ্ধান্ত নিই—তথ্যচিত্র নির্মাতা হব। প্রথম চলচ্চিত্র বানানোর জন্য প্রস্তাবপত্র লিখে বিশ্বের নানা দেশের ৮০টি টেলিভিশন চ্যানেল ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে পাঠাই। এরপর তাদের জবাবের অপেক্ষা করতে থাকি। আসতে থাকে একের পর এক প্রত্যাখ্যান। আমি লড়তে থাকি নিজের সঙ্গে। নিজের অশ্রু, আক্ষেপ আর মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে।
বুঝতে পারছিলাম না, কেন কেউ ২১ বছর বয়সী একজন নবীন নারী নির্মাতা, যে ঠিকমতো ক্যামেরা ধরতে পারে না, যার সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা নেই, ডিগ্রি নেই, তাকে কাজ দিতে চাইছে না! স্পষ্টত, মানুষ আমার ধারণার চেয়েও বেশি বাস্তববাদী ছিল তখন, যার জন্য এত এত প্রত্যাখ্যান! কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। লেগেই থাকলাম। এরপর একদিন কোনো কারণ ছাড়াই নিউইয়র্ক টাইমস টেলিভিশনের প্রেসিডেন্ট বরাবর একটা অযাচিত ই–মেইল লিখে বসলাম। সঙ্গে দিলাম আমার প্রস্তাবপত্রটিও। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এল ফিরতি ই–মেইল। তাতে লেখা ছিল, আমার তথ্যচিত্রের প্রস্তাব সশরীর শোনানোর জন্য আমাকে নিউইয়র্কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কের ট্রেন ধরলাম, আর একদল অভিজ্ঞ সাংবাদিকের সামনে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। খুব জলদিই আমার তথ্যচিত্রের প্রস্তাব পাস হয়ে গেল। আমাকে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণও দেওয়া হলো। অবশেষে সফল হলো আমার ৮১তম চেষ্টা। সামনে খুব সহজ দুটি পথ ছিল—হাল ছেড়ে দাও, অথবা নিজের স্বপ্নের পেছনে লেগে থাকো। জীবনে এমন মুহূর্ত অনেক আসবে, যেখানে হতাশ হয়ে মনে হবে হাল ছেড়ে দিই। আমি অনুরোধ করব, তোমরা বড় স্বপ্ন দেখো। প্রতিদিন যেন ঘুম ভেঙে সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটার তাড়না তোমাদের সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুনব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ব্লকচেইন একাডেমি০৩ নভেম্বর ২০২৪এই পরিচালকের জন্ম পাকিস্তানে, তবে থিতু হয়েছেন কানাডায়