নাটোরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই স্কুলশিক্ষার্থী নিহত, আহত ১
Published: 27th, January 2025 GMT
নাটোরের নলডাঙ্গায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই স্কুলশিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার কাঠুয়াগাড়ি চৌধুরীপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, উপজেলার দিয়ার কাজিপুর এলাকার ঠান্ডু তালুকদারের ছেলে ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শান (১৬) এবং একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেল সাফা (১৪), সে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় সিয়াম (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সে একই এলাকার সেলিম হোসেনের ছেলে। এছাড়া তারা তিনজনই বাসুদেবপুর শ্রী চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
নলডাঙ্গা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিন কিশোর মোটরসাইকেল যোগে উপজেলার কাঠুয়াগাড়ি থেকে তাদের বাড়ি দিয়ার কাজিপুর এলাকায় ফিরছিল। পথে রাত সাড়ে সাতটার দিকে চৌধুরীপাড়া এলাকায় পৌঁছালে তাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে নলডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শানকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহত সিয়াম এবং সাফাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। রাজশাহী নেওয়ার সময় সাফা নামে অপর শিক্ষার্থী মারা যায়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়া তিনজনই সুবিধাবঞ্চিত কিশোর-তরুণ, ছিলেন স্টেশনের টোকাই: রেলওয়ে পুলিশ
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিন কিশোর-তরুণ সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির বলে জানা গেছে। রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য, তাঁরা সবাই ‘টোকাই’ ছিলেন। স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে বোতলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়াতেন।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা জানান, আজ বুধবার ভোরের কোনো এক সময় বুড়িচং উপজেলার মাধবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুনকুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ কিশোর-তরুণের মৃত্যু৫ ঘণ্টা আগেতিনজনের মধ্যে একজনের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। তাঁর নাম সাইফুল ইসলাম (১৮)। তিনি কুমিল্লা রেলস্টেশনে বোতল কুড়ানোর কাজ করতেন। তাঁর মা-বাবা সেখানে রেলস্টেশন পরিচ্ছন্নতা কাজের পাশাপাশি বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিহত অন্য দুজনের মধ্যে একজনের নাম তুহিন বলে জানা গেলেও আরেকজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তুহিনও কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে বোতল কুড়াতেন। তবে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা রেলস্টেশনে সাইফুলের মরদেহের পাশে মোখলেছুর নামের এক ব্যক্তিকে আহাজারি করতে দেখা যায়। তিনি নিজেকে সাইফুলের বাবা দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার তিনটা পুত (ছেলে)। এর মইধ্যে সাইফুলডা বড়। গতকালকা দুপুরে আমি সাত প্লেট ভাত আনছি হোটেল থাইক্কা। পুতে কইলো, “আব্বা, কসবা স্টেশনে যাইয়াম; বোতল টোকানোর লাইগ্যা।” আমি কইছি, “পুত, তুই ভাত খাইয়া যা; এহন বোতল টোকান লাগতো না।” পুতে আমার কথা না হুইন্যা চইল্যা গেল। রাইত ৩টা পর্যন্ত পুতের লাইগ্যা অপেক্ষা করছি। আজকা সহালে স্টেশনের এক লোক আমারে ভিডিওতে দেহাইলো, আমার পোলাডা ট্রেনে কাটা পইড়া মইরা গেছো।’
মোখলেছুর জানান, সাইফুলের সঙ্গে নিহত অন্য কিশোর-তরুণও টোকাই। তাঁদের মধ্যে একজনকে তুহিন নামে চেনেন তিনি। মোখলেছুরের গ্রামের বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলায়। সেখানে তাঁর ভিটেমাটি না থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকেন। ছেলের লাশ দাফন করার মতো জায়গা নেই। তাই রেলওয়ে পুলিশকে বলেছেন, লাশটি যেন সরকারিভাবে দাফন করা হয়।
সাইফুলসহ ওই তিনজন গতকাল দুপুরে কুমিল্লা স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন বলে জানান রাজীব হোসেন নামের আরেক সুবিধাবঞ্চিত তরুণ। সাইফুলের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল বেলা দেড়টার দিকে ওই তিনজন আমাকে ও ইউসুফকে (আরেক পথশিশু) যেতে বলছিল। আমরা যাইনি। আমাকে জানাইছিল, হেরা আখাউড়া যাইব। বিকালে ফিরে আওনের কথা থাকলেও রাইতে আর তাগো দেহি নাই। সাইফুল কুমিল্লা স্টেশনে থাকত। তয় ওই দুজন চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্টেশনে বোতল টোকাইতো।’
তবে ওই তিনজন কোন ট্রেনের নিচে এবং কীভাবে কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা। তিনি ধারণা করছেন, গতকাল শেষ রাতের দিকে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন তাঁরা।
সোহেল মোল্লা আরও বলেন, নিহত তিনজনই টোকাই ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন স্টেশনে বোতলসহ ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র কুড়াতেন। তবে যেখানে তাঁরা কাটা পড়েছেন, সেটি নির্জন এলাকা। হয়তো মাদক সেবন করে অসাবধানতার কারণে তাঁরা ট্রেনে কাটা পড়েছেন। কারণ, যেভাবে কাটা পড়েছেন, সেটি দেখে মনে হচ্ছে না তাঁরা ট্রেনের ছাদ থেকে লাফ দিয়েছেন। আবার চলন্ত ট্রেন থেকে নামার সময়ও এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তাঁদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে।
পুলিশ জানায়, লাশগুলোর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্তের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হবে। অন্য দুজনের পরিচয় পাওয়া না গেলে দাফনের জন্য সাইফুলের লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে পাঠানো হবে।