হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা
Published: 27th, January 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ গতকাল রোববার শুনানি শেষে এ পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ২৩ মার্চ মামলাটির পরবর্তী দিন ধার্য রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে যখনই হারুনকে গ্রেপ্তার করা হবে, তাৎক্ষণিক তাঁকে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি, গণহত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন হারুন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল ‘হারুন কোথায়’ জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে তদন্ত সংস্থা।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার থেকে যে গুলি করা হয়েছে, তার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পেয়েছে। র্যাবের যিনি মহাপরিচালক ছিলেন হারুন অর রশিদ, তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ছিলেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার যে নির্দেশ বা পরিকল্পনা ছিল, তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, হারুনের বিরুদ্ধে ‘কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’র অভিযোগ আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার ব্যবহারের যে নির্দেশনা ছিল, সেটি তাঁর দেওয়া। এ ছাড়া র্যাবের মাধ্যমে যেসব অপরাধ হয়েছিল, তা সবই তাঁর নির্দেশনায় করা।
জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের কম আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, শুরুর দিকে দুর্বলতা থাকলেও এখন গ্রেপ্তারে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে সাভারের আশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় গতকাল দুই পুলিশ সদস্য এস আই আবদুল মালেক ও কনস্টেবল মুকুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের এক দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সাবেক এমপি নদভী ছয় দিনের রিমান্ডে
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে তিন মামলায় ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত আরেকটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় নদভীকে আদালতে আনা হয়।
মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া জানান, চান্দগাঁও থানায় করা তিন মামলায় নদভীকে দুই দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। আদালত সেটা মঞ্জুর করেছেন।
গত ২২ জানুয়ারি পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক দুই মামলায় নদভীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী খালিদ হাসান হত্যা মামলায় তাঁকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। তখন থেকে তিনি কারাগারে।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই আগস ট তদন ত স স থ ল ইসল ম কর ছ ন অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
আ. লীগের হরতাল-অবরোধ ঘিরে কঠোর হবে সরকার: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চায়, যতক্ষণ না তাদের দোষী নেতাকর্মীদের বিচারের মুখোমুখি না হয় এবং যতদিন পর্যন্ত দলটির বর্তমান নেতৃত্ব ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে বের হয়ে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া সম্ভব না।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, মিত্রবাহিনী কি নাৎসিদের প্রতিবাদ করতে দিয়েছিল?
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে হরতাল, অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার পরদিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানান প্রেস সচিব।
পোস্টে তিনি লিখেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ বন্ধ করেনি। গত সাড়ে পাঁচ মাসে শুধুমাত্র ঢাকাতেই অন্তত ১৩৬টি প্রতিবাদ হয়েছে। এর কিছু প্রতিবাদ ব্যাপক যানজটের কারণ হয়েছে। তবুও, অন্তর্বর্তী সরকার কখনো প্রতিবাদে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।
জুলাই অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, জুলাই ও আগস্ট মাসের ভিডিও ফুটেজ স্পষ্টভাবে দেখায় যে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার জন্য দায়ী। তিনি প্রশ্ন রাখেন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ দলকে কি প্রতিবাদের সুযোগ দেওয়া উচিত?
প্রেস সচিব লিখেন, বিশ্বের কোনো দেশই খুনি ও দুর্নীতিবাজদের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ দেয় না। অন্তর্বর্তী সরকারও দেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে এবং হত্যাকারীদের নেতৃত্বে যে কোনো প্রতিবাদকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে পারি না। আওয়ামী লীগ ও তাদের ব্যানারে অন্য কেউ অবৈধ প্রতিবাদ করতে চাইলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: বিসিসি