নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগের এক নেতার বোনের বাড়িতে গভীর রাতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে আড়াইহাজার মডেলপাড়া এলাকায় এ হামলা হয়। এ সময় ওই বাড়ির বেড়া, দরজা-জানালাসহ আসবাব ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা আগেই প্রাণভয়ে পালিয়ে যান। তাদের ভাষ্য, হামলাকারীরা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়েছে। 
ভুক্তভোগী ইমরানা আক্তার আড়াইহাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাঈম আহমেদ মোল্লার বোন। নাঈম উপজেলার সরকারি সফর আলী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি। তাঁর ভাষ্য, আড়াইহাজার মডেলপাড়ায় ছয় শতাংশ সরকারি জমি তাঁর বাবা তোফাজ্জল হোসেন বহু বছর আগে ইজারা নেন। তাঁর মৃত্যুর পর ২০ বছর আগে তারা দুই ভাই ও দুই বোনের নামে নতুন করে জমিটি ইজারা নেওয়া হয়। তিনি প্রতি বছর সরকারি খাজনা দিয়ে ইজারা নবায়ন করে আসছেন। সেখানে পাকাভিটার দুটি ঘর ও মুরগির ছোট একটি খামার নির্মাণ করে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন তাঁর বোন ইমরানা আক্তার।
নাঈমের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের এক শীর্ষ নেতা ওই জমি থেকে ইমরানাকে উৎখাতে হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করেন। এর জের ধরেই শনিবার রাত ২টার দিকে ৩০-৪০ জন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত অতর্কিতে ইমরানার বাড়িতে হামলা চালায়। তারা রামদা, ছোরা, শাবল, দাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘরের চারদিকের সব বেড়া, দরজা-জানালায় কোপাতে থাকে। এ সময় কৌশলে ৮ বছরের ছেলে তাসিমকে নিয়ে পালিয়ে যান ইমরানা। পরে বাড়ির ভেতর ঢুকে আসবাবপত্রসহ সব ভেঙে তছনছ করে দেয় হামলাকারীরা। 
তিনি বলেন, তাঁর বোনের ঘর থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করেছে ওই দুর্বৃত্তরা। এমনকি ঘরের বেড়া-দরজাগুলো পাশের খালে ফেলে দিয়েছে। এখন ইমারানার থাকার মতো কোনো জায়গাও নেই। 
ইমরানা আক্তারের ভাষ্য, দুর্বৃত্তরা তাঁর নগদ ৫০ হাজার টাকা, পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মূল্যবান 
আসবাব লুটে নিয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত দশ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে 
রোববার ইমারানা বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, রাত ২টার দিকে তারা হঠাৎ ইমরানার বাড়ি থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি ও ভাঙচুরের শব্দ শুনেছেন। তবে হামলাকারী কারা, সে সম্পর্কে ধারণা নেই। সকালে ঘরবাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্য দেখেছেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। 
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন 
জানান, পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইমর ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কালবৈশাখীতে ঘরবাড়ি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের প্রভাব পুরো দেশে। ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে কাঠফাটা রোদ। গরমে অস্বস্তিতে মানুষ। ঠিক উল্টো চিত্র উত্তরাঞ্চল ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায়। বৃষ্টি আর কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ভেঙে বন্ধ হয়েছে রাস্তাঘাট। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা। ঝড়বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে মারা গেছেন তিনজন।
আবহাওয়াবিদরা কোথাও বৃষ্টি, কোথাও গরমকে আবহাওয়ার ‘হেঁয়ালি আচরণ’ হিসেবে দেখেছেন। তারা বলছেন, কোথাও বৃষ্টি, কোথাও খরা। গরমের সময় হঠাৎ বৃষ্টি। আবার শীতকালে নামছেই না পারদ। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অশনিসংকেত।

কালবৈশাখীতে রংপুরের কয়েকটি উপজেলার বেশ কিছু এলাকার বাড়িঘর-ফসল তছনছ হয়ে গেছে। গাছ উপড়ে ও ডাল পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে এ ঝড় শুরু হয়। প্রায় ৩০ মিনিটের এই ঝড়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তারাগঞ্জ, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলায়। এ ছাড়া রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখীতে ৯টি ইউনিয়নের কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা। খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। নষ্ট হয়েছে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।

কালবৈশাখীতে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া এই ঝড় প্রায় আধা ঘণ্টা সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে তাণ্ডব চালায়। স্থানীয়রা জানান, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধান, ভুট্টা, আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের পর জেলার কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক এলাকায় সড়কের ওপর গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা গাছ সরিয়ে যান চলাচল সচল করেন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে কালবৈশাখীতে বড়ভিটা বাজারের ১৪ দোকানপাট লন্ডভন্ড হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের। 
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে বলা যাবে।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় শনিবার রাতে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আধা ঘণ্টা ধরে চলা শিলাবৃষ্টিতে টিনের চাল ফুটো হয়ে যায় এবং অসংখ্য কাঁচা ঘর ভেঙে পড়ে। ধানগাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঝড়ে বহু বাড়ির চাল উড়ে গেছে। অনেক ঘর সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। আশ্রয়ের অভাবে বহু পরিবার রাত কাটিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
রোববার সকালে বরগুনার আমতলীতে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে রিপন হাওলাদার নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এদিন দুপুরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরফলকন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে শাহানাজ বেগম কনা নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নোয়াখালী সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আবুল কালাম কালা নামে এক দিনমজুর প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার জালিয়াল গ্রামের দালাল বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার ঝড়ে ফসল, বিশেষ করে ভুট্টা, বোরো ধান এবং শাকসবজি তছনছ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এলাকার বেশ কিছু টিনের ঘর এবং কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে পড়ে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকালের সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধিরা]
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালবৈশাখীতে ঘরবাড়ি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
  • কুড়িগ্রামে কালবৈশাখীর তাণ্ডব