উড়োজাহাজের ইঞ্জিনিয়ার মানে এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার (এএমই)। এএমই লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি উড়োজাহাজের যাবতীয় এবং আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে। বিশেষ করে অ্যারোপ্লেন উড্ডয়নের আগে এর সব সিস্টেম ঠিক আছে কিনা তা সম্পর্কে পাইলটরা সব ধরনের তথ্য নিয়ে থাকে তার কাছ থেকেই। উড়োজাহাজের যাত্রী এবং পাইলটদের জীবন ও তাদের নিরাপদে পৌঁছানোর অনেক কিছুই নির্ভর করে এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারের ওপর। কেননা সে যদি কোনো ভুল তথ্য দিয়ে থাকে, তবে উড়োজাহাজ নিয়ে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানো দুরূহ বিষয় হয়ে পড়ে। প্রথম যেদিন থেকে উড়োজাহাজ চলা শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই প্রয়োজন হয়েছে অ্যারোনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারদের। সময়ের সঙ্গে ঘটছে এই শিল্পের বিকাশ। আর সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বজুড়ে ব্যাপকসংখ্যক ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন পড়ছে প্রতিনিয়ত। আমাদের দেশে অবশ্য এই বিষয়টি অনেকের কাছেই নতুন মনে হতে পারে। কিন্তু উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এই বিষয়টি অনেক আগে থেকেই  পরিচিত। আমাদের দেশে বিষয়টি নিয়ে পড়ানোর সুযোগও তৈরি হয়েছে মাত্র কয়েক বছর হলো। এই বিষয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এখন সহজে এবং অল্প খরচেই বিষয়টি নিয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আমরা যদি গতানুগতিক বিষয়ে না পড়ে একটু যুগের চাহিদার দিকে লক্ষ্য করে নতুন বিষয়ে পড়া যেতে পারে। এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং তেমনি একটি বিষয়। এসএসসি, এইচএসসি অথবা ও-লেভেল বা এ-লেভেল পাস করেই যে কোনো ছাত্রছাত্রী দেশে শুরু করতে পারেন এয়ারক্রাফট মেইনটেইন্যান্স বিষয়ে পড়াশোনা। এয়ারক্রাফট মেইনটেইন্যান্স (অ্যারোস্পেস/এভিওনিক্স) হচ্ছে কোনো আকাশযানের উড্ডয়নের আগে সব ধরনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, মেরামত সম্পর্কিত বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান।
বিমান তৈরি, মেরামত, পর্যবেক্ষণ এবং এ-সম্পর্কীয় যাবতীয় ডিজাইন এ বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে এই বিষয়ে পড়াশোনা করাচ্ছে ইউনাইটেড কলেজ অব এভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বজুড়ে সব দেশেই কাজের সুযোগ রয়েছে, এমন পেশার সংখ্যা খুব বেশি নয়। যে কয়েকটি পেশায় এই সুযোগ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম এয়ারক্রাফট মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং। এয়ারলাইন্স খাতে এ ধরনের ইঞ্জিনিয়ারের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বজুড়ে এয়ারলাইন্স শিল্পের প্রসারের সঙ্গে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা উড়োজাহাজের সব ধরনের মান নিশ্চিত করেন। বিশেষ করে অ্যারোপ্লেন উড্ডয়নের আগে এর সব সিস্টেম ঠিক আছে কিনা– সে সম্পর্কে পাইলটরা সব ধরনের তথ্য নিয়ে থাকেন তাঁর কাছ থেকে। এ বিষয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করে চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে।
ভর্তির যোগ্যতা : এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৩.

০০ পেয়ে উত্তীর্ণ। যে কোনো সালের পাসকৃত ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারবে।
বিস্তারিত–  
ফোন : ০১৭৪৯৩০৬০৯০। v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার মতো দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে চাই’

বাবা ইজিবাইকচালক, মা গৃহিণী। এক টুকরো ভিটে ও টিনের ঘর ছাড়া কিছুই নেই। এই দারিদ্র্যও দমাতে পারেনি মেধাবী মেয়েটিকে। দারিদ্র্যকে জয় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
এমন কৃতিত্বের অধিকারী নন্দিনী রানী সরকার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের গিলন্ড গ্রামের অনিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে নন্দিনী বড়। ছোট বোন বিনা রানী সরকারও মেধাবী শিক্ষার্থী। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
নন্দিনীর সাফল্যে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষক ও এলাকার লোকজন সবাই খুশি। তবে আর্থিক টানাপড়েনে মেয়ের পড়াশোনার পরবর্তী খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি। ইতোমধ্যে অবশ্য অনেকেই নন্দিনীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
নন্দিনী পিএসসিতে জিপিএ ৫, জেএসসিতে জিপিএ ৪.৪৬, এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান।
নন্দিনীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘর। প্রতিবেশীরা নন্দিনীর সাফল্যে তাদের বাড়িতে এসে শুভ কামনা জানাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে রান্না করছেন নন্দিনীর মা সীমা সরকার। মায়ের পাশে বসে রয়েছেন নন্দিনী ও তাঁর বোন বিনা।
নন্দিনীর বাবা অনিল চন্দ্র সরকার জানান, ইজিবাইক চালিয়ে দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চলে। তাঁর দুই মেয়েই বেশ মেধাবী। মেয়েদের যে চাহিদা, সেটা বাবা হিসেবে কখনও পূরণ করতে পারেননি। মেয়ের স্কুলের শিক্ষকদের কারণে তাঁর মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে তিনি অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘মেডিকেলে পড়ানোর মতো টাকাপয়সা নাই আমার। মেডিকেলে মেয়ের পড়াশোনায় কেউ যদি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসত তাহলে চিন্তা থাকত না।’
নন্দিনীর মা সীমা রানী সরকার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মেয়েগো প্রাইভেট পড়াতে পারি নাই। পড়ার জন্য নাই কোনো টেবিল-চেয়ার। মাস্টাররা সাহায্য-সহযোগিতা না করলে আমার মেয়ে এতদূর আসত পারত না, ভালো রেজাল্ট করতে পারত না। কিন্তু পড়ালেখার খরচের কথা মাথায় আসলে সেই আনন্দ আর থাকে না।’
নন্দিনী রানী সরকার একজন সফল চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছি। স্কুল ও কলেজে স্যাররা আমাকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। বই থেকে শুরু করে সব সহায়তা পেয়েছি। আমার বাবার সামর্থ্য নাই, এত টাকা দিয়ে আমাকে পড়াবেন। সরকার বা কেউ সাহায্য করলে আমার মেডিকেলে পড়ালেখা করা সম্ভব হবে। আমার স্বপ্ন, আমি যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি। আমি যেমন দরিদ্র, অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন যারা বিনা চিকিৎসায় মারা যান তাদের সাহায্য করতে চাই, সেবা করতে চাই।’
নবগ্রাম ইউনিয়নের কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন নন্দিনী। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, নন্দিনী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাঁর স্কুল ও কলেজের সবাই খুশি। এখন মেডিকেলে ভর্তির জন্য নন্দিনীর পাশে তার স্কুল থাকবে।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আমরা নন্দিনীর মতো অদম্য মেধাবীদের দিয়ে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব। মেধাবীদের এগিয়ে নিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত শাপলার
  • ‘আমার মতো দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে চাই’