Samakal:
2025-04-25@04:45:30 GMT

বৈষম্য বিরোধিতা কেবলই স্লোগান?

Published: 26th, January 2025 GMT

বৈষম্য বিরোধিতা কেবলই স্লোগান?

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী শব্দটি নতুন রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। কর্মক্ষেত্র বা সমাজে বৈষম্যের শিকার নানা গোষ্ঠী যেন তাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো পেশার মানুষ তাদের বঞ্চনার কথা সরকারের শীর্ষ মহলকে শোনাতে ঢাকার রাস্তায় জড়ো হচ্ছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে, বৈষম্যের বিরোধিতা কি কেবল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নাম, নাকি বৈষম্য নিরসনের বিষয়ও এর মধ্যে নিহিত ছিল? জুলাই আন্দোলনের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী শব্দটি থাকলেও তাদের দফা-দাবির মধ্যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তেমন কিছু ছিল না। সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা লড়েছেন। হয়তো সংক্ষিপ্ত সময়ে আন্দোলন অভ্যুত্থানে পরিণত হওয়ার কারণে তারা বৈষম্য বিরোধিতার কর্মসূচি হাজির করতে পারেননি।

বৈষম্য একটি বহুমাত্রিক ধারণা, যার বিপরীত হলো সাম্য বা সমতা। শ্রেণি বৈষম্য, আয় বৈষম্য, বেতন বৈষম্য, জাতিগত ও বর্ণবৈষম্য, লৈঙ্গিক বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য, বয়স বৈষম্যসহ বহু ধরনের বৈষম্য হতে পারে। আমাদের সমাজে শ্রেণি ও আয় বৈষম্য ব্যাপক। সংবিধানে জাতিগত বৈষম্য করে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি.

..।’ রাষ্ট্রধর্মের নামে অন্য ধর্মের প্রতিও বৈষম্য স্বীকৃত। সম্পত্তির উত্তরাধিকার, মর্যদা ও মজুরিতে নারীরা বৈষম্যের শিকার।

আঠারো শতকের শেষ ভাগ থেকে মানব জাতি সমতা অর্জনের সংগ্রামে এগিয়ে যেতে থাকে। ফরাসি বিপ্লবে সাম্যের বাণী ছিল, কিন্তু তা ছিল বিমূর্ত আইনি সমতার। এই বিপ্লব সামন্ত অভিজাত ও ধর্মের শাসনের অবসান ঘটালেও সমাজে বাস্তব সাম্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। পুঁজিবাদ আরও বেপরোয়া বৈষম্য তৈরি করতে থাকলে বিপ্লব-বিদ্রোহ বাড়তে থাকে। এ থেকে আপাত নিষ্কৃতির পথ হিসেবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ-উত্তরকালে উদারনৈতিক পুঁজিবাদ ও কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরি হয়। এতে দরিদ্রদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা বৃদ্ধি, প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশনের মাধ্যমে রাজস্ব থেকে রাষ্ট্র দরিদ্রদের জন্য কিছু সুবিধা বা বেনিফিটের ব্যবস্থা করে দেয়। এতে দরিদ্ররা অন্তত বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু তাতেও এসব সমাজে সম্পদের কেন্দ্রীভবন ও বৈষম্যের অবসান হয়নি। রুশ বিপ্লব সমতার পথে একটা বড় বিজয় হলেও শেষাবধি টিকে থাকেনি।

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আমেরিকার সিভিল রাইট মুভমেন্ট, ১৯৯৪ সালে আফ্রিকার বর্ণবাদের অবসান, সাম্প্রতিক ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার্স, হ্যাশট্যাগ মি টু, অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন বর্ণ, জেন্ডার ও আয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য আন্দোলন। এ ছাড়া বৈশ্বিক দিক থেকে বিশ্বপুঁজিতন্ত্র উত্তর ও দক্ষিণের দেশগুলোর সম্পদের ব্যাপক বৈষম্য তৈরি করেছে। পুঁজির বৈশ্বিক শ্রম বিভাজন দক্ষিণের দেশগুলোকে উত্তরের লুণ্ঠন ও সস্তা শ্রম শোষণের ক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
আমাদের সংবিধানেও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক কথা লেখা আছে, কিন্তু বাস্তবে কিছু হয়নি। আমরা সংবিধান সংস্কার নিয়ে মশগুল আছি এখন। শাসক শ্রেণির কাছে এসব কাগজ মাত্র; দরকার হলে ছুড়ে ফেলে দেবে আবারও। সমতার ধারণা নিয়ে ডান ও বামদের মধ্যে পার্থক্য আছে।

বুর্জোয়া সমতার ধারণা হলো একটা বিমূর্ত আইনি ধারণা। আইনের চোখে সবাই সমান, যদিও বাস্তবে সবাই সমান নয়। বলা হয়, সবারই সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার আছে; বাস্তবে বিরাট সংখ্যক মানুষ নিঃস্ব। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত যে বৈষম্য উৎপাদন করে; সমতার জন্য স্বয়ং এই ব্যবস্থার অবসান করতে হবে। বাস্তব সমতার আলাপ বাদ দিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে গালভরা কথা শেষ বিচারে অর্থহীন হতে বাধ্য। সমতা নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণাও আছে। অনেকে মনে করেন, সমতা মানে সবাই একই রকম (সেমনেস)। আসলে তা নয়। অধিকারের মানদণ্ড সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করাই হলো সমতা। মানুষ গুণ ও সক্ষমতার দিক থেকে আলাদা। একে হেগেল বলেছেন ভিন্নতা (ডিফারেন্স)। সবাইকে বিমূর্তভাবে সমান মনে করা ফরাসি বিপ্লব ও এনলাইটেনমেন্টের সীমাবদ্ধতাজাত। আমরা কেউ কবি, কেউ বিজ্ঞানী, কেউবা গায়ক। মানুষের এই ভিন্নতাকে আমরা উদযাপন করতে চাই; বৈষম্যকে নয়।

উদারনৈতিকরা আইনি সাম্যের কথা বলেন, আবার বৈষম্যকে মেনেও নেন। লিবারেলদের বড় তাত্ত্বিক জন রলস পুঁজিবাদের মধ্যে শ্রেণি ও সামাজিক বৈষম্য মেনে নিয়ে পিছিয়ে পড়াদের জন্য স্বতন্ত্রনীতি (ডিফারেন্স প্রিন্সিপল) দিয়ে তাদের সামাজিক সুবিধাপ্রাপ্তির পক্ষে নৈতিক যুক্তি দেন। তিনি বেপরোয়া পুঁজিবাদের মধ্যে একটা ভারসাম্য তৈরি করতে চান, কিন্তু ব্যবস্থার অবসান চান না। তিনি রোগের ওপর মলম লাগানোর ভালোই ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন।

বর্তমান সময়ে শ্রমিক শ্রেণির ধারণার পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তির পরিসর বেড়েছে। সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নয়, এমন নতুন ধরনের শ্রমিক তৈরি হয়েছে। গিগ ইকোনমি অর্থনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। কেবল বস্তুগত উৎপাদনই নয়; যোগাযোগ, জ্ঞান উৎপাদন, কনটেন্ট তৈরি, রাইড শেয়ার, ডেটা এন্ট্রি, উবার, ডেলিভারি ইত্যাদি নতুন ধরনের কাজ তৈরি হয়েছে। ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল শ্রমিকরা অবস্তুগত উৎপাদন ও মূল্য তৈরি করছে।

প্রচলিত প্রলেতারিয়েতের পাশাপাশি প্রিকারিয়েট (প্রিক্যারিয়েট) অর্থাৎ অস্থায়ী ও অনিশ্চিত কাজ, ফ্রিল্যান্সার, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কাজ করছেন এমন শ্রমিক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমিকদের ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক (ইনফর্মাল) শ্রমিক; এন্টনিও নেগরি ও মাইকেল হার্ডের মতে, যারা নিজেদের মধ্যে পার্থক্য ও বৈচিত্র্য বজায় রেখে ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। বাংলাদেশের আগস্ট অভ্যুত্থানেও তেমনটা হয়েছে। কেবল সম্পদের বণ্টন নয়; সমতার জন্য গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায় শ্রমজীবীদের ভাগ থাকা দরকার। অমর্ত্য সেন কেবল সম্পদের বণ্টন নয়; ব্যক্তির সক্ষমতার (ক্যাপাবিলিটি) বিকাশ ও স্বাধীনতাকে সমতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। মোদ্দা কথা, সমতা নিয়ে নানা মত ও পথ থাকলেও বাস্তব সমতা অর্জন ও শ্রমজীবীদের ক্ষমতায় ভাগ বসানোর কোনো বিকল্প নেই।

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান সংবিধান, ক্ষমতা, সাম্য ইত্যাদি নিয়ে নতুন করে আমাদের চিন্তা ও পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে সম্পত্তিবান শ্রেণি লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে সম্পদের যে পাহাড় গড়ে তুলেছে, তা দরিদ্রদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করে আমরা সমতার পথে যাত্রা শুরু করতে পারি। ইতিহাসে বিপ্লব-বিদ্রোহ ছাড়া মানবসমাজ সূচ্যগ্র পরিমাণ সমতাও অর্জন করতে পারেনি। আমরা যদি বর্তমান লুটেরা ব্যবস্থার পরিবর্তন না করতে পারি, তাহলে প্রাণ যাবে, রেজিম চেঞ্জ হবে; কিন্তু আমাদের বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বিফল সাধনায় পর্যবসিত হবে। শোষণ ও বৈষম্যের অবসানে বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন করে অধিকতর সমতা ও মুক্তিদায়ী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মত ও পথ নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।

ড. আখতার সোবহান মাসরুর: নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের 
অন্যতম ছাত্রনেতা

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র র অবস ন র জন য ক ষমত সমত র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের সবচেয়ে ধনী শিশুশিল্পীকে চেনেন?

স্টুডিওতে বসে আছেন অভিনেত্রী রিভা আরোরা। ব্যাকগ্রান্ডে বাজছে ‘জান চার ইয়ার’ সিনেমার ‘হোয়াট দ্য লাক’ গানটি। এ গানের শিল্পী মিকা সিং। কিছুক্ষণ পর রিভার কাছে আসেন মিকা। তারপর এ গানের তালে রিভার সঙ্গে রোমান্সে মেতে উঠেন মিকা সিং।

বেশ পুরোনো একটি ভিডিওতে রিভা-মিকার রোমান্সের দৃশ্য দেখা যায়। আড়াই বছর আগে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। ফলে তুমুল বিতর্কে জড়ান মিকা। কারণ রিভা ৪৭ বছর বয়সি মিকার চেয়ে ৩৩ বছরের ছোট। অর্থাৎ রিভার বয়স এখন ১৪ বছর।

 

ভারতীয় শিশুশিল্পীদের নাম উঠলে সামনে আসে আহসান চান্না, আমান সিদ্দিকী, দার্শিল সাফারি, সানা সাইদ, জিবরান খান, সিদ্ধার্থ নিগমের মতো তারকাদের নাম। মজার ব্যাপার হলো— এসব শিশুশিল্পীদের অর্থনৈতিকভাবে ছাড়িয়ে গিয়েছেন রিভা আরোরা। এখন ভারতের সবচেয়ে ধনী শিশুশিল্পী এই ক্ষুদে তারকা।

 

গত ১০ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে ‘পাওয়ার অব পাঁচ’ সিরিজের ট্রেইলার। বালাজি টেলিফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত এই সিরিজে অভিনয় করেছেন রিভা আরোরা। জানা যায়, সিরিজটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী।

 

রিভা আরোরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও দারুণ জনপ্রিয়। ইনস্টাগ্রামে তাকে ১১.৫ মিলিয়ন মানুষ অনুসরণ করেন। ভারতের যে কজন শিশুশিল্পীর সবচেয়ে বেশি অনুসারী রয়েছে, তাদের অন্যতম রিভা। এ অভিনেত্রীর ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে, সেখানে তার অনুসারীর সংখ্যা ২.০৩ মিলিয়ন।

 

ইন্ডিয়া ডটকম, ডিএনএ, জিকিউ ডটকমের তথ্য অনুসারে, রিভা আরোরার মোট সম্পদের পরিমাণ ৮.২ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বেশি)। ভারতের সবচেয়ে ধনী শিশুশিল্পী ছিলেন সারা অর্জুন। ২০২৩ সালের জুনে ১৮ বছর বয়সে পা দেওয়ায় এই তকমা হারান তিনি। তার জায়গা দখল করে নেয় রিভা।

 

রিভার বয়স অনুসারে তার শারীরিক বৃদ্ধি নজরে পড়ার মতো। ফলে এ নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন, সিন্থেটিক গ্রোথ হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে রিভা নিজের শারীরিক গঠনের বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। যদিও তা প্রমাণিত নয়। এজন্য তার বয়স নিয়েও বিতর্কের অবসান ঘটেনি।

 

তবে কয়েক বছর আগে রিভার বয়সের বিষয়ে ইঙ্গিত করে তার মা বলেছিলেন, “আমার মেয়ে এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে রিভা। অত্যন্ত সততা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সবকিছু অর্জন করেছে সে।”

 

রিভা অভিনীত ‘উরি’ সিনেমাটি ২০১৯ সালে মুক্তি পায়। এ সিনেমায় রিভার কান্নার দৃশ্যটি দর্শকের মন কেড়েছিল। জাহ্নবী কাপুর অভিনীত ‘গুঞ্জন সাক্সেনা’ সিনেমায় ছোট গুঞ্জনের চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়ায় রিভা।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ